পথচারী (এক টুকরো রোদ) - ৭

Mofizur Rahman
0

পথচারী (এক টুকরো রোদ) - ৭

পথচারী (এক টুকরো রোদ) - ৭

পথচারী

আতিক রাস্তায় নেমে কিছুক্ষণ রিক্সার জন্য অপেক্ষা করে। খালি রিক্সা একটিও পায় না। প্রায় রিক্সা দুই-তিন জন যাত্রী নিয়ে বেল বাজিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলছে, তাও আবার হাতে গোনা যাবে এমন। সে বেশিক্ষণ দাঁড়ায় না, কিন্তু রিক্সার আশা ছাড়ে না। সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব একটু বেশী, দুই কিলোমিটারের কম না। শহরের রাস্তায় এইটুকু পথ খুব কম লোকে পায়ে হেঁটে যায়। তবুও আতিক সকালে যেদিন একটু সময় করে বের হতে পারে সেদিন হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করে। যানবাহনের ভীড় এড়িয়ে রাস্তার পাশ ধরে খুব দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে যায়। পেছন থেকে রিক্সার বেলের কড়া আওয়াজ ওর চলার গতিকে রুখে দেয় কখনো কখনো।

রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে সাইড দিতে হয় ওভারটেক করা রিক্সাকে। সেই সুযোগে টেম্পো একটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায় অপেক্ষামান যাত্রী তুলতে। খুব বিরক্তবোধ করে তখন সে। কখনো কখনো ভয়ও লাগে। সামান্যের জন্য টেম্পোটি গায়ে লাগেনি। আরেকটু ওদিকে থাকলে এতক্ষণে রক্তাক্ত করে ফেলতো। এত ঝামেলায় হাঁটা যায় না। হাতে সময়ও তেমন থাকে না আর। আন্দরকিল্লায় এসে রিক্সা কিংবা টেম্পোতে উঠে পড়ে। এখন কিন্তু অবস্থাটা ভিন্ন। রিক্সা ছাড়া রাস্তায় আর কোন যানবাহন নেই । তাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

সেই সুযোগে ভাড়াটা নিয়মের দ্বিগুণ চেয়ে বসে ওরা। দশটার পর বেশ কিছু রিক্সা রাস্তায় নামে অবশ্য। কিছুদুর হেঁটে এসেও আতিক খালি রিক্সা পায় না সামনের দিক থেকে আসা রিক্সাক কয়েকটির কেউ রাজী হয় না। কেউ কেউ আতিকের ডাক না শুনার মত দ্রুত গতিতে রিক্সা চালিয়ে চলে যায়। সে আর থামে না, হাঁটতে থাকে। হাঁটতে কেন যেন ভালো লাগছে। অফিস গামী অনেক পরিচিত মুখের সাক্ষাৎ মিলে। কারো কারো সাথে কুশল বিনিময়ও করতে হয়। কেমন আছি কাজকর্ম কেমন চলছে এসব জানা প্রসঙ্গ।

কোথাও কোন মারাত্মক খবর থাকলে তা একের থেকে অন্যের মাঝে সহসা ছড়িয়ে পড়ছে। আতিকের চলার গতি আজ অন্যদিনের মত দ্রুত নয়। সবাই যেন শ্লথ গতিতে হেঁটে চলছে। কারো যেন কোন ভাড়া নেই, নেই তেমন কোন জরুরী কাজ থাকলেও এখন সেসব কাজ করা যাবে না কোন ক্রমে। সেও সবার সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটে। সিরাজ-উদ-দৌলা রোড পার হয়ে আন্দরকিল্লায় আসতে চলার গতি আরো মন্থর হয়ে আসে। সাধারণ মানুষের চেয়ে টহলদার পুলিশ আর বিডিআর এর সংখ্যা বেশী।

পুলিশ দলবদ্ধ হয়ে জায়গায় জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে আর বিডিআর এর জোয়ানেরা গাড়িতে বসে বন্দুক তাক করে আছে। প্রতিপক্ষের তেমন কাউকে চোখে পড়ে না। উত্তেজনাও তেমন আছে বলে মনে হয়না। তবে কিছু তরুন যুবক ট্রাফিক সিগন্যালের আইল্যান্ড বরাবর দাঁড়িয়ে আছে। নিরীহ পথিকেরা কারো দিকে না থাকিয়ে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলছে। উত্তেজনাহীন এমন পরিবেশেও ওরা ভয়ে অস্থির হয়ে জায়গাটা অতিক্রম করে। আতিক লালদিঘীর পশ্চিম পাড়ে এসে বড় এক মিছিলের মুখামুখি হয়।

মিছিল দেখে সে মেইন রোড থেকে ফুট পাতে উঠে যায়। পাশে ছোট একটি পান সিগারটের দোকানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। ক্ষুদে দোকানী মিছিলের আগমন দেখে দোকানের ঝাপ টেনে দেয়। মিছিলটি যতবড় আওয়াজ তত বড় নয় । সর্বদলীয় মিছিল থেকে কয়েকটি শ্লোগান বার বার উচ্চারিত হচ্ছে। মিছিলটি চলে যাওয়ার পর আতিক সামনের দিকে এগোয়। ফুটপাত ধরে হেঁটে সামনের চৌরাস্তার মোড় ফেলে লালদীঘির মাঠ বরাবর এসে থেমে যায়। গুলি আর বোমার শব্দ কানে আসে। কখনো মনে হয় একেবারে কাছে কোতয়ালীর মোড়ে, আবার মনে হয়।

একটু দুরে দোস্তবিল্ডিং বা নিউ মার্কেটের সামনে। কয়েকজন পথচারীর সাথে কথা বলেও সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। সে কয়েক কদম এগিয়ে যায়। পাহাড়ের উপরে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সদর দফতরে বেয়ে উঠার রাস্তার পাশে পুলিশ আর বিডিআর এর বহর দেখে সে আর থামে না। অতিরিক্ত রিজার্ভ পুলিশ তলব করে আনা হয়েছে। কোথাও হাঙ্গামা হলে মোতায়েন করার জন্য। খানিক পর আবার পর পর বেশ কয়েকটি বোমা ফাটার বিকট আওয়াজে কানের ভেতরটা বোঁ বোঁ করে উঠে। আতিকের ভেতরটাও ভয়ে কেঁপে উঠে একবার।

সে ওদের লক্ষ করে কান নড়াচড়া চোখে পড়ে না। অথচ এত কাছে কোথাও একের পর এক বোমাবাজি হচ্ছে কিন্তু রিজার্ভ বাহিনীর সদস্যরা নির্লিপ্ত, উপরের আদেশ নাই মনে হয় ওদের উপর, নতুবা ওভাবে বসে থাকার কারন কি? আতিকের ভাবনা ওদিকে যায় না আর। সে সামনে এগুতে সাহস পায় না। সহসা রাস্তা ক্রস করে জেলা পরিষদের মার্কেটের সামনে দিয়ে হকার্স মার্কেটের ভিতর ঢুকে। পুরানা আর নতুন কাপড়ের ঘিঞ্জি এই মার্কেটটিও সম্পূর্ণ বন্ধ। কয়েকটি টোকাই ছেলে কাপড়ের টুকরো আর ছেঁড়া কাগজপত্র খুঁজে বেড়াচ্ছে। লোকজন নেই বললে চলে।

আতিক হকার্স মার্কেটের দক্ষিণের গলি দিয়ে কোর্ট বিল্ডিং এর পশ্চিমের সিঁড়ির নীচ এসে দাঁড়ায় । কোর্ট বিল্ডিং থেকে কয়েকজন নীচে নামছে। ওরা বলাবলি করছে - ডিসি সাহেবের দরজায়ও তালা দেয়া। সবকিছু অচল হয়ে গেল। আতিক ঢালু পথে ধীর গতিতে মেইন রোডের মুখে এসে এদিক ওদিক দেখে নেয়। দারুল ফজল মার্কেটের সামনে রাস্তায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার সমাবেশ আর নিউ মার্কেটের মোড়ে আইল্যান্ডের চার পাশে পুলিশ আর বিডিআর। পুলিশ আইল্যান্ডের উপর পজেশন নিয়ে স্থির দৃষ্টি নিবন্ধ করে আছে সন্মুখ পানে।

আর বিডিআর এর জোয়ানেরা গাড়ীর বহরের ভেতর থেকে চোখ কান খাড়া করে আছে যেন। আতিক ফুটপাতের কিনারা ধরে ধীর পায়ে হাঁটতে থাকে। কিছু লোকজন রাস্তা পারাপারের চিন্তা করেও পার হয়না । দু'এক কদম বাড়িয়ে আবার ফুটপাতে উঠে পড়ে যে কোন মুহুর্তে গোলাগুলি শুরু হয়ে যেতে পারে ভেবে সে গতি একটু বাড়ায় নিউ মার্কেটের এলাকায় এসে দ্রুত পায়ে হাঁটতে থাকে। আইল্যান্ডের দিকে একবারও তাকায় না । বাম দিকে ঘুরে সোজা পূর্ব দিকে হাঁটতে থাকে।

একবার মনে হয়েছে এই মুহুর্তে গুলি এসে পড়বে পেছন দিক থেকে। তখন পা আরও দ্রুত মাটিতে পড়তে থাকে । প্রায় অনেকটা দৌড়ে সে জিপি-ওর সামনে এসে কিছুটা স্বস্তিবোধ করে । তারপর রাস্তা ক্রস করে আলকরনের ভেতর দিয়ে গলি পথে হাঁটতে থাকে । পরিচিত অনেকের সাথে দেখা হয়, চলতে চলতে কুশল বিনিময় করে। বিরাজমান পরিস্থিতিরও কিঞ্চিৎ আলাপ তুলতে চায় অনেকে। এরকম স্থবির অবস্থার শেষ কবে হতে পারে জানতে চায় কেউ কেউ। আতিক প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে।

এসব প্রশ্নের কোন জওয়াব যে নেই একথা ওরাও জানে। তবুও কেন এসব জানতে চায় আতিক ভেবে ঠিক করতে পারে না। হয়ত কথার কথা, তবুও ওর কাছে খুব বিরক্তিকর মনে হয় এসব প্রশ্ন। সে দ্রুত পা ফেলে আসিফের দিকে চলে আসে। অফিস দরজায় এসে কয়েক মুহুর্ত অপেক্ষা করে। বড় একটা তালা ঝুলে আছে। কলাপসিবল গেটের সাথে। কাঁচের দরজার ভেতর দিক থেকে পর্দা টানানো। আতিক কলাপসিবল গেইটে হাত লাগিয়ে একটু নাড়া দিতেই ভেতর থেকে গার্ড এসে পর্দা সরিয়ে বলে, স্যার আমরা ভেতরে আছি। বাইরে তালা যে? আতিক প্রশ্ন করে।

স্যার এলাকার ছেলেরা দুই বার এসেছে। ততক্ষণে গার্ড কাঁচের দরজা খুলে ভেতর থেকে হাত রেব করে তালাতে চাবি। লাগায়। তারপর কলাপসিবল গেট টেনে ফাঁক করে। আতিক ভেতরে ঢুকে গার্ডকে আবার গেট বন্ধ করার জন্য বলে। গার্ড গেট বন্ধ করে আতিকের পেছনে চেম্বারে ঢোকে।

কি বলছিলে তুমি? গার্ডের দিকে তাকিয়ে ওরা গেট খুলতে নিষেধ করেছে ।
বলে।
তখন অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা আর কর্মচারীরা এস চেম্বারে ঢোকে গার্ডের কথাটা পুনরায় বসকে জানায়।
আতিক খানিক গম্ভীর হয়ে কি যেন ভাবে। তারপর বলে, আপনারা সবাই সিটে গিয়ে বসেন আর এ্যাটেনডেন্স সই করে নেন ।

কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েকজন তরুণ এসে গেট নাড়ে। গার্ড পর্দার ফাঁকে দেখে সহসা বসের কাছে এসে বলে, স্যার ওরা আবার এসেছে, গেইট খুলব?
খুলে ভেতরে ঢুকতে দাও ।
ওরা ভেতরে এসে বলে, আপনারা সাথে একটু কথা বলতে চাই । আতিক মাথা নেড়ে বলে, হ্যাঁ বলুন ।
এখনতো অসহযোগ চলছে, আপনি অনুগ্রহ করে আপনার লোকজনদের বাইর চলে যেতে বলেন ।

তখন অফিসের কয়েকজন বেশ ঘাবড়ে যায়। আতিক কিন্তু ভয় পায় না একটুও বেশ স্বাভাবিক থাকে সে। ধর্মঘটের সময় আমাদের এখানে কোন কাজকর্ম হয় না। তা আমরা জানি । তরুনদের কেউ কেউ সায় দেয়।
অসহযোগ মানে - কাজ-কর্মে সহায়তা না করা অফিসে তো উপস্থিত থাকতে হয় সবাইকে। আতিক ওদের বুঝতে চেষ্টা করে। না, আপনারা অফিসে থাকলে কাজ-কর্ম হতে পারে। দয়া কর এদেরকে বাইরে চলে যেতে বলুন। আচ্ছা আচ্ছা, অস্থির হওয়ার কিছুই নেই, একটু পরে ওরা সবাই বাইরে চলে
যাবে।

এরপরও প্রতিদিন আতিক ও তার কয়েক সহকর্মী অফিসে এসে হাজিরা দিয়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন এত পথ পায়ে হেঁটে অফিসে আসা আর কাজ কর্ম না করে ফিরে যাওয়া কেমন যেন অস্বস্থিকর মনে হচ্ছে। এতদিনের অভ্যাসের উপর এরকম অনিয়ম মনের স্বাভাবিক গতিকে থামিয়ে দিয়েছে। রাস্তায় হাঁটতে এখন মোটেই ভালো লাগে না, কেমন যেন অসহায় মনে হয় নিজকে। সাঁজোয়া বাহিনীর গাড়ির বহর যখন রাস্তা কাঁপিয়ে পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে টহল দিয়ে বেড়ায় তখন আতিকের ভেতরটা এখনও একবার কেঁপে উঠে।

শহরের রাস্তায় কোন না কোন মোড়ে প্রতিদিন গুলিতে মারা যাচ্ছে কেউ না কেউ। প্রায় ছাত্র। এরা এত বেপরোয়া কিভাবে হতে পারে। আতিক নিজেও একসময় ছাত্র ছিল। তখনও মৃত্যুর মিছিলে ছাত্রদের নাম থাকতো সবার আগে। এখনও। অসীম সাহস নিয়ে মৃত্যুকে জয় করতে পারে একমাত্র ছাত্ররা । নতুবা নিশ্চিত মৃত্যু জেনে কিভাবে উদ্যত বন্ধুকের নলে বুক পেতে দেয়। আতিকের ভাবনা সীমানা ছড়িয়ে যায়। সীমা রেখার ভেতর মৃত্যুঞ্জয়ীদের আর খুঁজে পায় না।

আজ আতিক অফিসে যাওয়ার জন্য বর হয় একটু দেরী করে । আগে গলির মুখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি আঁচ করার চেষ্টা করে। গতকাল নগরীর মেয়রকে গ্রেফতার করার সাথে সাথে সারা শহর যেন রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। নগরবাসীর মনের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে । কারো কারো মনের আগুন বাইরে এসে সম্পদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে এবং কয়েক জনের প্রাণহানি ঘটে । আজও তার প্রতিক্রিয়া সর্বত্র।

জঙ্গী ছাত্র-জনতার মিছিল আর বোমার আওয়াজে পুরা শহরটি প্রকম্পিত হয়ে উঠে বারবার। কোথাও একটি রিক্সা পর্যন্ত নেই। সাঁজোয়া বাহিনীর বহরগুলি আজ আরও ভারী অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে টহল অধিতর জোরদার করেছে। আতিক মেইন রোড বাদ দিয়ে আশে-পাশের ছিপা গলি পথে অফিসের দিকে রওনা দেয়। বান্ডেল রোড ধরে পাথরঘাটা হয়ে কোতয়ালী থানার মোড়ে এসে সে থমকে দাঁড়ায়। ডজনে ডজনে পুলিশ আর বিডিআর এ্যামবুশ করে বসে আছে। থানার গেটের পাশে পরিখা খনন করা হয়েছে । ছাদের উপরও সাঁজোয়া বাহিনী মেশিন গান ফিট করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে রাজপথে।

জায়গাটি একেবারে ফাঁকা । কয়েকজন লোক যারা রাস্তা পার হচ্ছে তাদের দু'হাত উপরের দিকে তোলা। দৃশ্যটি আতিককে ভাবিয়ে তোলে। যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় এভাবে দু'হাত উপরে তুলে যেতে হতো। কিন্তু এখনতে এদেশ স্বাধীন । এরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। তবু কেন পরাধীনতার কলঙ্ক বহন করতে হচ্ছে।

গতকাল বিক্ষুব্ধ জনতা এই থানার উপর চড়াও হয়, তারপর থেকে থানা কর্তৃপক্ষ এই পথে চলার সময় দু'হাত উপরে তুলে চলার নির্দেশ দেন। কথাগুলো একজন পথচারী আতিককে বলে দ্রুত সরে পড়ে। সে এপথে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, পেছনে ফিরে হাঁটতে শুরু করে। তখন পেছন থেকেকর্তব্যরত পুলিশ কনষ্টেবলের ডাক শুনে থেমে যায় সে। তার শির দাঁড়ায় হঠাৎ কাঁপন অনুভূত হয় । পাশে সারি সারি ট্রাকে বিডিআর এর জোয়ানেরা ভারী অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে পজিশন ঠিক করে নির্দেশের অপেক্ষায় আছে।

যে কোন মুহুর্তে তাজা গোলা বারুদ বিদ্যুৎ গতিতে বেরিয়ে পড়তে পারে কি করবে স্থির করতে পারে না। যুদ্ধের সময় ওদের গ্রামের বাড়ীর কাচারীতে বিশ্রামরত ই.পি.আর দেখে সে ভয়ে দৌড়ে ভেতরের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিল। সে দৃশ্যটি এই মুহুর্তে আতিকের চোখের ওপর ভাসে । কিন্তু এখন কি দৌড় দেওয়া ঠিক হবে? সেদিন ই.পি.আর গুলি ছুড়েনি কিন্তু আজ বিডিআর গুলি ছুড়বে। আতিক এবার কি মনে করে ঘুরে দাঁড়ায়। সাথে সাথে দু'হাত মাথার উপর উঁচু করে এগিয়ে আসার নির্দেশ কানে আসে।

সেই মুহুর্তে আতিকের কাছে হাত দু'টি এত ভারী ঠেকে সে শত চেষ্টা করেও মাথার উপরে তুলতে পারে না। অনেক কষ্টে কাঁধের সমান্তরাল করে মাথা নীচু করে দাড়িয়ে থাকে। পুলিশ আবারও তাকে সামনে আসার নির্দেশ দেয়। প্রচণ্ড ক্ষোভ আর তীব্র ঘৃনায় তার সমস্ত শরীর রি রি করে কাঁপতে থাকে। সে বুঝতে পারে তরুনেরা মৃত্যুকে জয় করার এত সাহস কিভাবে পায়। এই মুহুর্তে তার ইচ্ছা করলে ঐ কনষ্টেবলের উপর প্রচন্ড আক্রোশে ঝাপিয়ে পড়তে। কিন্তু পারে না। একজন কনষ্টেবল তার দিকে এগিয়ে আসে। বডি সার্চ করে প্যান্টের পকেট হাতড়ে দেখে।

তখন আতিকের সমস্ত শরীর গ্লানি আর ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে পড়ে। কিছু খুঁজে না পেয়ে কনষ্টেবল রাগস্বরে বলে চেহারায়তো বেশ ভদ্র লোক বলে মনে হয়,আচরণ কেন দুষ্কৃতিকারীর মত? আতিক কোন জওয়াব দেয় না। ওর দিকে তাকায়ও না । অপমান আর ক্ষেভে মাথা হেট করে দাঁড়িয়ে থাকে । কনষ্টেবল আতিকের পেটে গুতা মেরে বলে, দাঁড়িয়ে আছো কেন? কোন দিকে যাবে সহসা চলে যাও এখান থেকে। বড় সাবের কাছে নিয়ে গেলে ছয় মাসের আগে জেল থেকে ছাড়া পাবে না ।
আতিক সবকিছু ঝাপসা দেখে। তবুও সে পা বাড়ায় কিন্তু কোন দিকে যাচ্ছে বুঝতে পারে না।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!