বিষন্ন বিকেল (এক টুকরো রোদ) - ৯
বিষন্ন বিকেল
অন্তরার সাথে সময়টা ভালো যাচ্ছে না আসিফের। খুঁটিনাটি বিষয়েও লেগে যাচ্ছে দু'জনের । একবার শুরু হলে সহজে শেষ হতে চায় না । একে অপরের ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে মেতে উঠে, যুক্তি তর্কে কেউ হার মানতে চায় না। ঘরের টুকটাক কাজগুলো ভাগ করা আছে দু'জনের মাঝে। রাতে শোয়ার আগে বিছানায় মশারী খাটানো অন্তরার কাজ আর সকালে বিছানা ছেড়ে উঠার সাথে সাথে মশারী খুলে গুছিয়ে রাখে আসিফ। কিন্তু কখনো কখনো অন্তরা এমন ভাব করে যেন তার বিছানায় শোতে হবে না। রাত সাড়ে এগারটা বাজে, টিভির অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায়। সে তবুও শোফায় হাত পা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকে। অন্যমনষ্ক হয়ে পুরানো ম্যাগাজিনের পাতা উল্টায়।আসিফ বার কয়েক তাগাদা দেয়, সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে যাবে। আমার অফিসে যেতে হবে কথাগুলো অন্তরার কানে যায় না যেন, সে আনন্দলোকের একটি রোমান্টিক দৃশ্য হতে চোখ তুলে না । আসিফ এবার লাইট নিভিয়ে বেড রুমে চলে আসে কিছক্ষণ অপেক্ষা করে, অন্তরা আসে না। নিজেই বিছানা ঠিক ঠাক করে মশারী খাটিয়ে নেয় নীল রং এর ডীম লাইটটা জ্বালিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকে। রাগ আর অভিমানে ঘুম আসে না । তবুও চোখ দু'টি বন্ধ করে রাখে একটু পরে অন্তরাও এসে নিঃশব্দে বিছানায় উঠে শুয়ে পড়ে। কথা হয় না একবারও দু'জন পাশাপাশি শুয়ে থাকে এই মুহুর্তে আসিফের মনে হয়, অন্তরার এমন আচরনের জন্য উচিত শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন । অন্ততঃ কয়েক দিন কথা না বলা।
অন্তরা মুখের দিকে না তাকিয়ে বুঝতে পারে আসিফ এখনও ঘুমায়নি। সে আসিফের দিকে পাশ ফিরে যায়। খানিক পর ডান হাতখানি স্বামীর লোমশ বুকের উপর আলতোভাবে রাখে । নিমিষে আসিফের সমস্ত রাগ অভিমান কোথায় বাতাসের মত মিলিয়ে যায়। সে মধ্যরাতে বরফের মত গলতে শুরু করে।
সকালে কলিং বেলের শব্দে আসিফের ঘুম ভেঙ্গে যায় তখনও সাতটা বাজেনি, কাজের বুয়া এসে হাজির । আসিফ বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে দিয়ে আবার এসে শুয়ে পড়ে। কিন্তু আবার জাগতে আটটা বেজে যায়। তাড়াহুড়া করে বাথরুম, দাঁত ব্রাস, শেভ আর গোসল সেরে নাস্তা করতে নয়টা বেজে যায় এখন রিক্সাও তেমন পাওয়া যায় না। দশটার পর রিক্সা রাস্তায় নামে।
এখন পায়ে হেঁটে অফিসে যেতে হয়। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে কয়েকবার অন্তরার নাম ধরে ডাকে। কিন্তু সে অঁ আঁ শব্দ করে পাশ ফিরে শোয়। শেষ রাতে একটু শীত লাগে। তখন পাতলা কাঁথাটা বুক পর্যন্ত টেনে রাখে। এখন গলা বরাবর টেনে নিয়ে সে আরো ঘুমাতে চেষ্টা করে। এই দৃশ্যটি আসিফের একেবারে অপছন্দ । অফিসে যাওয়ার সময় বিছানায় শুয়ে থাকা। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে 'খোদা হাফেজ' বলার রীতিমত অভ্যাস এখনও অন্তরার নয়নি। এসময় সে হয়ত শুয়ে থাকবে, না হয় বাথরুমে ঢুকবে কিংবা পেছনের বেলকনিতে বসে বসে দাঁত ব্রাশ করবে। আসিফ কাজের বুয়াকে দরজা আটকাতে বলে বাইরে চলে যায়।
অসহযোগের আজ ৮ম দিন। সবকিছু যেন থমকে দাঁড়িয়ে আছে। অফিস আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে এখন উপস্থিতি নাই বললে চলে। তবুও আসিফ ঘুরে আসে একবার অফিস থেকে। এই ক'দিন গিয়ে মিনিট দশেক বসে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে ফোনে কথা বলে সহসা বেরিয়ে যায়। আজ বাসায় ফিরে এসে মাথায় পানি ঢালে সে, তারপর গোসল করে ফেলে আবার। রিক্সা করে এসেছে, চৈত্র মাসের বাতাস রাস্তার সব ধুলোবালি শরীরের ঘামের সাথে লেপটে দিয়েছে । গোসল করার পর শরীরটা বেশ ঝরঝর হয়ে যায়, কিন্তু মনটা আগের মত ভারী থেকে যায়, হালকা হয়না। সপ্তাহে একদিন শুক্রবার দুপুরে একসাথে দুজন খেতে পারে।
অন্তরা ছুটির দিন বলে নানা রকমের তরকারীর ব্যঞ্জন রানা করে। অনেক আইটেমের নামও জানে না আসিফ। কখনো কখনো আবার স্বাদও লাগে না তেমন, তবুও খুব আহলাদ করে খেয়ে নেয় দু'জন । খাওয়ার কিছুক্ষণ পর বিছানায় আধ শোয়া হয়ে পাশাপাশি গল্প করে। এসব কথা এরিমধ্যে আরো কয়েকবার বলেছে, তবুও শুনতে ভালো লাগে।
কেন যেন বার বার শুনতে ইচ্ছা করে। দাম্পত্য জীবন যে এত মধুর হতে পারে আগে ভাবতে পারেনি- আসিফ। কথা বলতে বলতে কখন শুয়ে পড়ে টেরও পায় না। তখন নিঃশব্দে বিভোর হয় একে অপরের অস্পর্শ সান্নিধ্যে। সন্ধ্যার আগে আগে বের হয়ে শহরের কোন পার্কে কিংবা রেস্তোরায় কিংবা কোন বন্ধুর বাসায় ঢু মেরে আসে দু'জন । সময় যে কত দ্রুত চলে যাচ্ছে তা ক্যালেন্ডারের দিকে না তাকালে বিশ্বাস হয় না।
এখন প্রতিদিন আসিফ আর অন্তরা দুপুরে একসাথে খেতে বসে। কিন্তু আনন্দ পায়না একটুও। খাওয়ার সময় আসিফ কি যেন ভাবে। খাওয়া শেষে সে কিছুক্ষণ ডাইনিং টেবিলে বসে পত্রিকা কিছু কিছু সংবাদ আকর্ষণ করায় অন্তরার। তারপর বিছানায় পাশাপাশি বসে থাকে। ভালো লাগে না। আলাপের প্রসঙ্গও খুঁজে পায় না। চারদিকে সবকিছু যেন আটকে আছে, থেমে আছে অস্বস্তিকর পরিবেশে, দম বন্ধ হয়ে আসবে এমন লাগে।
দু'জন ক্রমশঃ বিষণ্ণতার মাঝে ডুবে যায় । অনেকক্ষণ কথাবার্তা ছাড়া বসে থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মত গল্পে গল্পে সময়টা হারিয়ে যায়না এখন। ঘড়ির কাঁটার মত ধীর গতিতে সময়ও থেমে থেমে এগোয়। অন্তরা বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় । কৃষ্ণচূড়া গাছটিও নেই, এসময়ে টকটকে লাল ফুলে ছেয়ে থাকতো পুরা গাছটি। বছর খানেক আগে কেটে ফেলেছে, ঐ জায়গায় পেঁপে গাছ লাগিয়েছে । খুব মন খারাপ হয় এখনও কৃষ্ণচূড়া গাছটির জন্য। পাখির ডাক কানে আসে।
এখানে দাঁড়ালে প্রায় সময় পাখির ডাক শুনা যায়। কিন্তু আজ পাখিরা এমন শব্দ। করছে যেন উৎসবে মেতে উঠেছে। সে আসিফকে ডেকে বলে, দেখনা পাখিরা আজ কেমন আনন্দে ডাকাডাকি করছে । আসিফ না উঠে বলে প্রতিদিন এসময়ে পাখিরা একসাথে ডাকে, গাড়ির আওয়াজের জন্য এভাবে কানে আসে না। যুক্তিটা সে মেনে নেয় কিন্তু পাখির দৃশ্য দেখার আনন্দ যে আলাদা তা আসিফকে বুঝাতে পারে না। এসব প্রসঙ্গে আসিফের আগ্রহ একটু কম। তবুও স্ত্রীর মন রক্ষার জন্য অনেক সময় উপভোগ করে এমন ভাব দেখায়। বাইরে রাস্তায় রিক্সার পর রিক্সা চলতে দেখে অন্তরা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বলে।
এক মাস পর পর চেক আপ করতে হয়। আজ মাস পেরিয়ে তৃতীয় দিন অতিবাহিত হচ্ছে। আসিফ একটু অবাক হয় প্রথমে, পরক্ষণেই স্ত্রীর সাহসের প্রশংসা করে।
এই পরিস্থিতিতে বাইরে যাওয়া কি ঠিক হবে? অন্তরা রিক্সার দিকে তাকিয়ে বলে ঐ যে মেয়েরা যাচ্ছে।
ওরা কর্মজীবি মহিলা, চাকুরী বাঁচার জন্য বের হয়েছে।
বিকেলে কি অফিস আছে নাকি ? অফিস থেকে ফিরছে হয়ত।
জ্বী না, কর্মজীবি মহিলাদের দেখলে বুঝা যায়। এসব মেয়েরা বেড়াতে বের হয়েছে। কতদিন ঘরের ভেতর বসে থাকতে পারে মানুষ। আসিফ অন্তরায় মুখের দিকে তাকায়।
চল একটা রিক্সা নিয়ে দু'জন বের হই। ডাক্তারও দেখা হবে, শহরও ঘুরা হবে।
দেখবে তখন মনটা এমন গুমোট বেঁধে থাকবেনা, হালকা হয়ে যাবে।
আসিফ আর অন্তরার সাথে পেরে উঠে না। রাজী হয়ে যায়। দু'জনই রেডি হয়ে বাইরে এসে একটা রিক্সায় উঠে পড়ে। গন্তব্যহীন যাত্রীর মত রিক্সাওয়ালাকে চালাতে বলে আসিফ এদিক ওদিক তাকায়। রিক্সায় বসা বেশ কিছু মহিলা যাত্রী ওদের রিক্সার সাথে ক্রস করে। ওরা স্বস্তিবোধ করে। বিকেলের রোদ ক্রমশঃ কোমল হয়ে আসে। রাস্তায় রিক্সা ছাড়া আর কোন যানবাহন নেই।
কারো মাঝে কোন ব্যস্ততাও দেখা যায় না। কয়েক দিন আগেও এই সময়ে রাস্তার মোড়ে যানজট, গাড়ীর আওয়াজ, ইঞ্জিনের কালো ধোঁয়া কর্মচঞ্চল এই নগর জীবনকে বিষিয়ে তুলতো। যানবাহন বিহীন রাস্তায় রিক্সায় রিক্সার হুড ফেলে পড়ন্ত বিকেলের হলুদ রোড দেখে ওরা নিঃশব্দে বসে থাকে । চৈতী হাওয়ার দমকা মাঝে মাঝে অন্তরার মাথার চুল কপালের উপর খেলা করে । কখনো কখনো রিক্সার টুং টাং শব্দ পাখির কিচির মিচির ডাকের মত মনে হয়।
চালক কখনো ধীর গতিতে আবার কখনো দ্রুত প্যাডেল মেরে উঁচু নীচু বেয়ে সম্মুখে গিয়ে যায়। অন্তরার ভালো লাগে ব্যস্ততম নগর জীবনের ভিন্ন এই পরিবেশ । কিন্তু আশে পাশের লোকজন কারো মনে এমন সুন্দর বিকেলের রং লেগেছে বলে মনে হয় না বরঞ্চ যাত্রী, রিক্সাচালক কিংবা পথচারী সবাই যেন বিষণ্নতার ভেতর হেরে গিয়েছে। চোখে মুখে আনন্দের কোন চিহ্ন নেই, আশঙ্কার অস্পষ্টতা ওদেরকে ছেয়ে রেখেছে।
খোলা বাতাসে অস্তরার মনটা যেভাবে হালকা হয়ে যায় আসিফ এত সহজে ভারমুক্ত হয় না । অন্তরা এটা-সেটা কথা বলে যায় একের পর এক আসিফ হ্যাঁ হু জওয়াবে সায় মেলায় শুধু। এক পর্যায়ে অন্তরা বিরক্ত হয়ে জানতে চায়, তোমার কি ভালো লাগছে না এমন সুন্দর বিকেলেও।
লাগছে বৈকি। আসিফ সংক্ষিপ্ত জওয়াব দেয়। দেখনা একটু পরে সূর্যটা আর থাকবে না, সাথে সাথে কৃত্রিম আলো জ্বলে উঠবে।
তখন সাঁঝের রূপটা আর উপভোগ করা যাবে না।
তুমি শুধু সাঁঝের রূপটাই দেখলে। সন্ধ্যার পর কালো আঁধারের ভয়াবহতা একবারও দেখলে না।
অন্তরা আসিফের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, এখন আপাততঃ রাখ তোমার এসব দর্শন।
আসিফ চুপ করে থাকে। দু'জনের মাঝে আর কথা হয় না । ওরা নাসিরাবাদে ডাক্তার চেম্বারে পৌঁছতে সূর্যের আলো থাকে না আর । সন্ধ্যা নেমে আসে। অন্যদিনের মত বেশী রোগী নেই, তবুও পাঁচ জনের পর সিরিয়াল পড়ে।
অন্তরা ওয়েটিং রুমে অপেক্ষমান রোগীদের সাথে বসে। আসিফ বাইরে এসে উঠান সংলগ্ন লম্বা লনে পায়চারী করে । হাস্নাহেনার গন্ধ আসে নাকে তবুও মনটা ভরে উঠে না । অস্বস্তি ভাবটা কাটেনি এখনও। দূরে কোথা থেকে শ্লোগানের শব্দ কানে আসে । থেমে থেমে গুলির শব্দও । সে চেম্বারে গিয়ে একবার উকি মেরে দেখে আসে । অন্তরা আঙ্গুলের ইশারায় বলে আরো দুই জন । আসিফ এবার বাইরে এসে খানিক দাঁড়ায়। মিছিলের আওয়াজ ক্রমশঃ স্পষ্ট হয়ে কানে বাজে।
কাছাকাছি মেইন রোড ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন দিকে যাচ্ছে ঠিক ধরতে পারে না। তখন ভেতর থেকে নার্স এসে বলে আপনাকে ডাকছে। আসিফ ভেতরে ঢোকে। তখনও ডাক্তারের চেম্বার হতে পূর্ববর্তী রোগী বের হয়নি। এক মিনিট সময়ও নষ্ট করা যাবে না। তাই পরবর্তী সিরিয়ালের পেশেন্ট চেম্বারের দরজায় অপেক্ষা করতে থাকে। সময় এখানে গোল্ডের চেয়েও অধিকতর মূল্যবান । আগের রোগী বেরিয়ে আসে। ওরা ভেতরে ঢুকে ডাক্তারের টেবিলের সামনের চেয়ারে পাশাপাশি বসে।
গতবারের প্রেসক্রিপশন দেখানোর সাথে সাথে ডাক্তার অন্তরাকে পর্দার আড়ালে যেতে বলে। সাদা পর্দাটি টেনে দিয়ে নার্স অন্তরাকে সিটে শুয়ে পড়তে বলে । শোয়ার পর ডাক্তার প্রেশার চেক করেন। এসটেথেসকোপ কানে লাগিয়ে বুকের ভেতর হৃদপিন্ডের স্পন্দন দেখেন। তারপর তিনি উঠে এসে চেয়ারে বসেন। আগের প্রেসক্রিশনে ব্লাড আর ইউরিন পরীক্ষা জন্য লিখে দিয়ে এক মাস পর দেখা করতে বলেন। ততক্ষণে নার্স অন্তরার ওজনের পরিমান ডাক্তারকে জানায় চেম্বার থেকে বেরিয়ে লন ধরে হাটে দুজন।
হাস্নাহেনার গন্ধটা খুব ভালো লাগে অন্তরার । সে বলে, একটু দাঁড়াও না এখানে। আসিফ বিরক্ত হয়ে বলে, গুলির শব্দ কানে আসছে না তোমার? কই নাতো।
দেখছো না গলিপথ কেমন নিঃশব্দ। একটু আগে মিছিল গিয়েছে মেইন রোড ধরে গেইটের বাইরে এসে গলি পথে কোন রিক্সা পায় না। হেঁটে মেইন রোডের কাছে এসে দেখে লোকজন ছুটাছুটি করছে। ওরাও ভয় পেয়ে যায়। রিক্সা নিয়ে চালক দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাচ্ছে যেন। ওদের সিগন্যালে কেউ থামছে না। ওরা জাকির হোসেন রোডের মুখে এসে খালি রিক্সা একটায় জোর পূর্বক উঠে পড়ে। চালক মহিলার দিকে তাকিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্যাডেলে চাপ দিয়ে বলে, জি ই সির মোড়ে একটু আগে গোলাগুলি হয়েছে, গাড়ি লইয়া কেমনে যাইব কন?
এখনতো সব জায়গায় গোলাগুলি হচ্ছে, চলো, আমরা আছি কোন অসুবিধা হবে না। রিক্সা এম.ই.এস কলেজের গেইট বরাবর আসতে, কলেজ ক্যাম্পাস থেকে এক বিরাট মিছিল বের হয়। রিক্সা রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। মিছিল সামনের দিকে এগিয়ে যায়। রিক্সা শ্লথ গতিতে মিছিলের পেছনে চলতে শুরু করে। কিন্তু মিছিলটি জি.ই.সি'র মোড়ে আসতে না আসতে গুলির শব্দ কানে আসে মুহুর্তে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু কেউ পালিয়ে যায় না। সবাই জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে থাকে। অস্ত্র হাতে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক একটা মাইক্রোতে উঠে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যায়। অনেকের চোখে দৃশ্যটি ধরা পড়ে না।
রিক্সা চালক হ্যান্ডল শক্ত হাতে ধরে সিটের উপর বসে থাকে ব্রেক হাতের বাইরে থেকে যায়। রিক্সার চাকা ঈষৎ ঢালু পথ পেয়ে কয়েক বার ঘুরতে না ঘুরতে গুলিবদ্ধ যুবকের কাছে চলে আসে। তখনও রক্ত ঝরছে তরুনের বুক থেকে। অন্তরার ভয়ভীতি সব মুহুর্তে কোথায় যেন উড়ে যায়। সে লাফ দিয়ে রিক্সা থেকে নেমে পড়ে। আসিফের বিমূঢ়তা কেটে যায়। সে অন্তরার এমন হতবুদ্ধিতার কারণ না খুজে দ্রুত নেমে পড়ে। অন্তরার হাত চেপে ধরে বলে, কি ব্যাপার, তুমি এমন করছো কেন? অন্তরা গুলিবিদ্ধ যুবকের দিকে তাকিয়ে বলে, জান এর নাম জাহিদ। এ আমার সাথে কলেজে পড়তো।
একদিন আমাকে ভালবাসার প্রস্তাবও দিয়েছেল। আমি বলেছিলাম তুমি আগে রাজনীতি ছেড়ে দাও। তারপর না হয় দেখা যাবে।
একটু থেমে আবার বলে, সেদিন এ কি বলেছিল জান আসিফ অন্তরার চোখের দিকে অবাক নয়নে তাকায়। অন্তরা আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলে, বলেছিল; এই জীবনটা দিয়ে দিতে পারি, তবুও রাজনীতি ছাড়তে পারবনা।