46th BCS Preliminary Analysis - ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারী বিশ্লেষণ
(toc)
৪৬ তম বিসিএস প্রিলিমিনারী
পিএসসি যেহেতু প্রতিবছর ৩০ নভেম্বর সার্কুলার দিবে এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেহেতু ৪৫ প্রিলিমিনারী আগামী বছরের মার্চের মধ্যেই হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। যারা ৪৪ বিসিএস লিখিত প্রথমবার দিচ্ছেন তারা অলরেডি বুঝতে পেরেছেন প্রিলির রেজাল্টের পর ৪ মাসে রিটেনের একটা সলিড প্রিপারেশান নেওয়া কঠিন ব্যাপার যদি না আগে থেকে কিছুটা গুছিয়ে রাখা হয়।
৪৫ যাদের প্রথম বিসিএস তাদের জন্য এটা ফার্স্ট লেসন। প্রিলির জন্য যে ৭ মাস সময় পাবেন সেটা যথেষ্ট। এই ৭ মাসে প্রিলির সিলেবাসের সাথে রিটেনের কিছু অংশ পড়ে ফেলতে হবে।
কিভাবে পড়লে আপনি অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন বা যেভাবে পড়তে হবেঃ
বাংলা ১ম ও ২য় পত্রঃ
বাংলা সাহিত্যের প্রিলির ২০ মার্ক ও রিটেনের ৩০ মার্ক মিলিয়ে পড়তে হবে। সাথে গ্রন্থ সমালোচনার ১৫ মার্ক পড়ে ফেলা ভালো।
সহায়ক বই হিসেবে রাখতে পারেনঃ মোহসিনা নাজিলার (বাংলা ভাষা ও সাহিত্য + বাংলা সাহিত্য পাঠ+ গ্রন্থ সমালোচনা বই), সৌমিত্র শেখরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা। যারা অন্য বই কিনেছেন পড়তে পারেন। কোন সমস্যা নাই। বই থেকে বেশি ফ্যাক্ট হলো আপনার নিজের দায়িত্বে পড়া।
বাংলা ব্যাকরণ এর জন্য নবম-দশম শ্রেণীর ব্যাকরণ বই এর পাশাপাশি সৌমিত্র শেখরের বইয়ের ব্যাকরণ অংশ ফলো করবেন। রিটেনে ব্যাকরণ অংশে ৩০ পাওয়ার জন্য একটু কষ্ট করলেই হবে।রিটেনের পুরাতন বই অথবা প্রশ্ন ব্যাংক থাকলে দেখবেন যে ব্যাকরণ অংশে প্রশ্ন বেশি নেই।এক সেট পুরাতন বই কালেক্ট করে প্রশ্নগুলো পড়ে ফেলবেন।
বাগধারা ও প্রবাদ এর ৬ নাম্বারে অনেকের কমন পড়ে না।উইকিপিডিয়াতে বাগধারার লিস্ট + সমর পালের প্রবাদের উৎস সন্ধান বই থেকে আনকমন গুলো নোট করে পড়ে রাখবেন।
ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রঃ
প্রিলিতে ইংরেজির বেসিক শক্ত না করলে রিটেনে ইংরেজিতে ধরা খাবেন।অনেকেই প্রশ্ন করেন ফ্রি হেন্ড রাইটিং এ ভাল করার জন্য কি করতে হবে কারণ রিটেনে ইংরেজিতে ভালো করার শর্ত হলো ফ্রি হেন্ড রাইটিং এ দক্ষতা। এর জন্য আগে আপনার গ্রামার এর বেসিক ঠিক করতে হবে।আপনার মাথায় যতই তথ্য থাকুক Sentence Structure ভুল লিখলে আপনার ফ্রি হেন্ড রাইটিং এক্সামিনার এর কাছে বুলশিট মনে হবে।
তাই প্রিলির প্রিপারেশান এর শুরুতেই গ্রামার এর বেসিক ঠিক করে নিতে হবে।প্রিলিতে আমরা ভোকাবুলারি বাদ দেই কারন ২ মার্কের জন্য আমরা কষ্ট করতে রাজি না।কিন্তু ভোকাবুলারি বাদ দিয়ে প্রিলিতে আপনি পাশ করে গেলেও রিটেনে ভোকাবুলারিতে দুর্বলতার জন্য আপনিই বিপদে পড়বেন।
প্রিলিতে গ্রামারের ২০ মার্কের মধ্যে একটু চেষ্টা করলেই আপনি ১৩-১৪ মার্ক তুলতে পারবেন।আর লিটারেচার ৪০ বিসিএস প্রিলির মত কঠিন প্রশ্ন না আসলে প্রচলিত যে কোন বই পড়েই আপনি ১৫ এর মধ্যে ৯-১০ মার্ক তুলতে পারবেন।যেহেতু রিটেনে লিটারেচার পার্ট নিয়ে প্রশ্ন আসে না সেহেতু লিটারেচার এ এতো বেশি সময় না দিয়ে আপনার গ্রামারের বেসিক ইম্প্রুভমেন্ট ও ভোকাবুলারিতে জোর দিন। ভোকাবুলারির জন্য আব্দুল লতিফ স্যার এর বইটা ফলো করতে পারেন।
এই গ্রামার নলেজ ও ভোকাবুলারির দক্ষতা রিটেনে আপনার B2E/E2B Translation, Summary, Essay, Comprehension part এর Parts of speech change,Synonym, Antonyms এসবে আপনার নাম্বার অটোমেটিক বাড়িয়ে দিবে।
বাংলাদেশ বিষয়াবলিঃ
প্রিলিতে বাংলাদেশ পড়ার সময় নিচের টপিকগুলো ডিটেইলস পড়বেন তাহলে রিটেনের সময় প্রিপারেশন নিতে সুবিধা হবে।
- জাতীয় বিষয়াবলী-১৯৫২-১৯৭১,বঙ্গবন্ধুর শাসনামল ১৯৭১-৭৫(এটার জন্য এইচ টি ইমাম স্যার এর বই এর পিডিএফটা সময় করে পড়ে নিবেন।রিটেন ও ভাইভায় কাজে লাগবে)
- কৃষি উন্নয়নে সরকারের পলিসি ও গৃহিত পদক্ষেপ।
- সরকারের শিল্প ও বানিজ্য নীতিসমূহ ও উন্নয়নে গৃহিত পদক্ষেপ।
- বাংলাদেশের সংবিধান ও সরকার ব্যবস্থা।
বিগত দিনের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে দেখবেন বাংলাদেশ এফেয়ার্স এর ৩০ মার্কের প্রশ্নে আহামরি কঠিন কোন প্রশ্ন করে না।তাই টপিক ধরে পড়তে থাকেন।প্রিলি পরীক্ষার হলে বাংলাদেশ বিষয়াবলি যখন আপনি ২৪-২৫ টা পেরে যাবেন আপনার কনফিডেন্স এমনিতেই বুস্ট আপ হয়ে যাবে।
সহায়ক বই হিসেবে রাখতে পারেনঃ যেহেতু সময় আছে নাঈম ভাই এর বেসিক ভিউ পড়তে থাকেন।যারা জর্জ/এমপিথ্রি পড়েন তারা ওগুলাও পড়তে পারেন।কোন সমস্যা নেই।
সংবিধানের জন্য হাসান জাহিদ ভাই এর বইটা সাজেস্ট করবো।মনে রাখবেন এক সংবিধানেই আপনার বিসিএস রিটেনের অনেক টপিক চলে আসে।তাই সংবিধানের উপর আপনার প্রিপারেশান হতে হবে এক্সট্রা অর্ডিনারি।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিঃ
সাম্প্রতিক ও চলমান ঘটনাপ্রবাহের ৪ মার্ক নিয়ে আমরা এতোই ব্যস্ত থাকি যে বাকি ১৬ মার্ক নিয়ে আমরা কম ভাবি। এটা না করে ১৬ মার্কের প্রিপারেশান ভালো করে নিতে হবে। বৈশ্বিক ইতিহাস,আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা,ভূ-রাজনীতি,আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও আন্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সম্পর্ক,আন্তর্জাতিক পরিবেশগত ইস্যু ও কূটনীতি,আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানাদি যে কোন বই থেকে টপিক ধরে ধরে পড়ে ফেলবেন।
চলমান আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে খোজ রাখবেন যেটা রিটেনে আপনাকে হেল্প করবে। তাইওয়ান সংকট, ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্য, নতুন করে পরমানু চুক্তির আলোচনা, ইউক্রেন, ন্যাটো, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে দ্বন্দ্ব,কোয়াড,আইপিইএফ,রাশিয়ার তেল নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক,ইউক্রেন সংকটের সমাধান,জ্বালানী সংকট,রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের তেল কেনার সম্ভাবনা এসব ইস্যুতে নজর রাখুন।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতাঃ
প্রথমেই ম্যাথ নিয়ে বলতে চাই যে ম্যাথ নিয়ে যাদের ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স আছে তারা আগে সেটা দূর করুন।আপনি ম্যাথে দুর্বল এই কনসেপ্ট আপনি মাথায় ঢুকিয়ে ফেললে আপনি যতোই ভাল প্রিপারেশান নিয়ে যান ম্যাথে ভুল করবেন। রিটেনের ম্যাথে ৫০ মার্কের পরীক্ষা আছে।তাই প্রিলির সময় থেকেই ম্যাথের উপর আপনার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিতে হবে।
নবম-দশম শ্রেণির জেনারেল ম্যাথ ও Higher Math বই দুইটাকে ভাজা ভাজা করে ফেলতে হবে।ম্যাথের বেসিক নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করেন।বেসিক বলতে কোন কঠিন বিষয় বুঝায় না।বিসিএস সিলেবাসের সাথে ম্যাচ করে যে সব চাপ্টার থেকে প্রশ্ন আসে ওইসব চাপ্টারের শুরুতেই বাংলা কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করুন।সেটা বীজগণিত, পাটিগণিত, জ্যামিতি যেটাই হোক।
নন-সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ড এর যারা আছেন তারা এভাবে পড়লে আশা করি উপকার পাবেন। বিন্যাস,সমাবেশ,সম্ভাব্যতা স্কিপ করতে যাবেন না।রিটেনের কথা ভেবে প্রিপারেশান নিবেন।
সহায়ক বই হিসেবে রাখতে পারেনঃ বাজারের যে কোন বই ফলো করেন সমস্যা নাই। তবে আশরাফুল ম্যাথ ককটেল বইটা প্রিলি রিটেনের জন্য ভালো হতে পারে। এছাড়া ও খায়রুলস ব্যাসিক ম্যাথ ও ভালো হতে পারে।
মানসিক দক্ষতা প্রিলি রিটেন এর সিলেবাস মিলিয়ে পড়বেন।প্রিলির ১৫ মার্ক আর রিটেনের ৫০ মার্কের প্রিপারেশান একসাথে হয়ে যাবে।বাজারের প্রচলিত বই গুলো সলভ করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের গুলোতে হাত দিবেন।
বিজ্ঞানঃ
যারা নন সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ড তারা বিজ্ঞান পড়ার সময় নবম দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞানের বই এর পাশাপাশি নবম দশম শ্রেণির ফিজিক্স,কেমিস্ট্রি, বায়োলজি বইয়ের সংশ্লিষ্ট টপিকগুলো পড়বেন।যেহেতু বাজারের বইগুলোতে সব তুলে দেয়, সেহেতু আপনার জন্য পড়াটা মুখস্থ করার মতো মনে হবে।ফলে আপনি সহজেই ভুলে যাবেন।বোর্ড বই থেকে পড়ে তারপর ওইসব প্রচলিত বই ফলো করলে আশা করি পড়াটা দীর্ঘমেয়াদি হবে।
যারা সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ড এর আছেন তারা এই ১৫ মার্কের পুরোটাই নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন।কারণ আপনার এগিয়ে থাকার সুযোগ এখানেই।
এবার আসুন রিটেনের পড়া কিভাবে এগিয়ে রাখবেন।
ভৌত বিজ্ঞানের আলো,শব্দ ও চৌম্বক পড়ার সময় ডিটেইলস পড়বেন।ইন্টারের শাহজাহান তপন স্যারের ফিজিক্স বই থেকে সংশ্লিষ্ট টপিকগুলো দাগিয়ে নিবেন।রিটেনের প্রশ্ন এনালাইসিস করে কোন টপিকগুলো থেকে প্রশ্ন আসছে মিলিয়ে নিবেন।
মনে রাখবেন ৪ লক্ষ এপ্লিকেন্ট থেকে আপনাকে জেনারেল ক্যাডার পেতে হলে সব সাইকোলজিকাল ব্রেকডাউন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে।তাই আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড যাই হোক কোন রিসোর্স কে আপনার আয়ত্তের বাইরে ভাববেন না। প্রিলির আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে রিটেনের রোগ এবং স্বাস্থ্যসেবা এর চাপ্টারের অনেক কিছুর মিল পাবেন।মিলিয়ে পড়ে ফেলবেন।
কম্পিউটার ও আইসিটিঃ
বিগত কয়েকটি প্রিলিতে আইসিটিতে তুলনামূলক কঠিন প্রশ্ন এসেছে।তাই প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু প্রচলিত ইজি কম্পিউটারের মতো বই গুলো পড়ে গেলে হবে না।সিলেবাস দেখে ইন্টারের মুজিবুর রহমানের আইসিটি বইটির সংশ্লিষ্ট টপিকগুলো পড়ে নিবেন।এতে আপনার রিটেনের ২৫ মার্কের প্রিপারেশান অনেকটা হয়ে যাবে।তবে অবশ্যই পড়ার আগে প্রিলি রিটেনের সিলেবাস ও প্রশ্ন এনালাইসিস করে নিবেন।
ভূগোল,পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাঃ
নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বইটা এক্ষেত্রে যথেষ্ঠ।সাথে যে কোন একটা প্রচলিত গাইড বই রাখতে পারেন।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সুশাসনঃ
মোজ্জামেল হক স্যারের ইন্টারের পৌরনীতি ও সুশাসন বই এর সংশ্লিষ্ট চাপ্টার গুলো পড়লেই ভাল পরিমানে কমন পাবেন।বইটিতে রিটেনে বাংলাদেশ বিষয়াবলির অনেক টপিক সহজ ভাষায় খুজে পাবেন,তাই বইটি সংগ্রহ করে ফেলবেন।
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা কথা দিয়ে শেষ করতে চাইঃ
- প্রিলিতে আপনি পিছিয়ে পড়বেন নেগেটিভ মার্কিং এর কারনে। তাই এক্সাম হলে নিজের নার্ভ ও পালস কন্ট্রোলে রাখুন।
- বিসিএস এর প্রিপারেশান হতে হবে স্মার্ট ওয়েতে।সব এভেইলেবল রিসোর্সের সহায়তা নিবেন কোন টপিক না বুঝলে।
- সারাদিন একটা সাবজেক্ট নিয়ে বসে থাকবেন না।চেষ্টা করবেন প্রতি সপ্তাহে সবগুলো সাবজেক্ট পড়ে এটলিস্ট একবার রিভিশান দেওয়ার।যারা কোচিং করেন না তারা এই উপায়ে সিলেবাস রিভিশান দিবেন।তারপর বই কিনে মডেল টেস্ট দিবেন।
- রিটেনের পড়া এগিয়ে রাখার বিষয়টি আপনার কাছে বেশি মনে হলে শুধু প্রিলির প্রস্তুতি নিতে থাকুন।তবে শুধু প্রিলি পাশ করে চাকরি হবে না এটাও মাথায় রাখবেন।
- যারা সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ড এর তারা ম্যাথ,বিজ্ঞান,আইসিটি গুরুত্ব না দিয়ে পড়লে পিছিয়ে পড়বেন।আপনার স্ট্রং জোন থাকতেই পারে,কিন্তু চর্চা না থাকলে স্ট্রং জোন ও এক্সাম হলে বিভীষিকা মনে হবে।