বিবাহ থেকে বিরত থাকার অপকারিতা- কুরআন ও হাদিসের আলোকে
Disadvantages of abstaining from marriage
(toc)
কুরআন-হাদীসে বিবাহ বন্ধনের এ জোর হুকুম নিতান্ত যুক্তিযুক্ত। মানব প্রকৃতির মধ্যে যৌনতা নিহিত। বালিগ হওয়ার মধ্য দিয়ে এ যৌনতার চিহ্ন প্রকাশ পেতে শুরু করে। ক্রমে তা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়। উত্তেজনার রূপ ধারণ করে। চলতে-ফিরতে, শয়নে স্বপনে, ঘুমে-জাগরণে, উঠতে-বসতে সারাক্ষণ এই খেয়াল চড়াও হয়ে থাকে। মন এবং বুদ্ধির মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধ চলতে থাকে। মন চায় বেপরোয়াভাবে কামনা বাসনা চরিতার্থ করতে তা যে ভাবেই হোকনা কেন। জ্ঞান বাসনার লাগাম টেনে ধরে।
মন ও বুদ্ধির এ দ্বন্দ্ব ও সংঘাত কখনো বুদ্ধির বিজয় লাভ হয় আবার কখনো মনই বুদ্ধিকে পরাভূত করে দেয়। অবিবাহিত বয়সে বিশেষত যৌবনকালে এ দ্বন্দ্ব-যুদ্ধই বেশী চলতে থাকে। প্রতিটি ব্যক্তিকে এ পথ অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু মানুষ যখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং কামনা-বাসনা পূরণের বৈধ পন্থা সৃষ্টি হয়, তখন সে এ সৃষ্ট দ্বন্দ্ব থেকে নিষ্কৃতি পায়। অলিক কল্পনার বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারে। সুখ শাস্তি ও একনিষ্ঠতা লাভ হয়। আর এটা এক অকাট্য সত্য যে, যে-কাজ একনিষ্ঠ ও সুস্থ মনে সম্পন্ন হবে, তা হবে ফলদায়ক।
বিবাহের লক্ষ্য উদ্দেশ্য
স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পারস্পরিক যৌন সম্পর্কের তিনটি প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ বিবাহ যে মানব বংশ বিস্তারের মাধ্যম, এ তো সাধারণ কথা। রোজ কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির অস্তিত্ব এরই দ্বারা টিকে থাকবে। এটা প্রাথমিক কথা। দ্বিতীয় হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপকার। কেননা, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, বীর্য যদি দেহ থেকে নির্গত না হয়, তাহলে বিভিন্ন প্রকারের রোগ, ব্যাধির আশঙ্কা থাকে। আর যৌন চাহিদা পূরণের মাধ্যমে আনন্দ লাভ করা হচ্ছে তৃতীয় উপকারিতা। অভিজ্ঞ ডাক্তার ও হেকীমদের মতে, স্ত্রী-সহবাস মানব জাতির স্বাস্থ্য রক্ষার এক প্রধান উপকরণ।(-যাদুল মা'আদ)
বীর্য স্খলন
গ্রীক দার্শনিক জালীনুষ বলেন, শুক্র-বীর্যে অগ্নি ও বায়ুর অংশ অধিক। তার স্বভাব উষ্ণ ও আর্দ্র। তার বাড়তি অংশ যখন অবদমন করা হয় বা অবদমিত হয়, আর এ ভাবে কিছুকাল অবদমিত থাকে, তখন তার থেকে অনেক অনেক মারাত্মক রোগ-ব্যাধি জন্ম নেয়। কখনো নতুন নতুন রোগ দেখা দেয়। কখনো পাগলামি করে। আবার কখনো মৃগী রোগের উদ্ভব হয়। তাছাড়া, বীর্য-স্খলন সুস্বাস্থ্যের উপর শুভ প্রভাব বিস্তার করে। বহু রোগ-ব্যাধি থেকে মানুষ মুক্ত থাকে। অন্যথায়, দমিয়ে রাখা দ্বারা এক বিষাক্ত জীবাণু সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর । আর এ কারণেই প্রাবল্যের সময় মানবদেহ তাকে স্খলন করতে বাধ্য হয়। (-যাদুল মাআদ)
চিকিৎসা শাস্ত্র বিষয়ক বিখ্যাত গ্রন্থ 'নাফীসী'র বর্ণনার মূল এই যে, স্ত্রী সহবাস ঠিক সে মুহুর্তে করা উচিত, যখন যৌন চাহিদা তীব্র আকার ধারণ করে। কৃত্তিমতা বা কষ্ট কল্পনার বশে স্ত্রী-সহবাস করা উচিত নয়। যৌন ক্ষুধার নিদর্শন হচ্ছে, শুক্র-বীর্যে অস্থৈর্য ও উত্তেজনা উপলব্ধ হওয়া। মনে ব্যাকুলতা অনুভব হওয়া। এটাই হচ্ছে স্ত্রী সহবাসের উত্তম সময়। নতুবা এছাড়া এ কাজে স্বাস্থ্যহানিই ঘটে মাত্র। পরিশেষে আল্লামা নাফীসী লিখেছেনঃ
وحينئذ لابد من الجماع ودفع المني لانه إذا ترك وكثر في الاوعية خـنـق الحـار الغريزي وأطـفاه ويلزم ذالك أن يبرد ويبرد البدن
“আর তখনই স্ত্রী-সঙ্গম ও বীর্য-স্খলন প্রয়োজন। কেননা তাকে যদি দমন করা হয় এবং পাত্রে বীর্যের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাহলে তা স্বাভাবিক উষ্ণতার ঘাড় মুচড়ে দেবে ও তা নির্বাপিত করবে। তখন অনিবার্য রূপেই তা নিজেও শীতল হয়ে যাবে এবং দেহকেও শীতল করে দেবে।” (নাফীসী')
বীর্য দমিয়ে রাখার অপকারিতা
নাফিসী লিখেন, অপকারিতা এখানেই শেষ নয়। এছাড়া আরো বহু অপকারিতা বিদ্যমান।
وقد يستحيل المنى إلى طبعية سية ويرسل إلى القلب والدماغ بخارا ردیاسمنا يوجب العشي والصرع ونحوهما
“শুক্রবীর্য বিষাক্ত পদার্থে রূপ ধারণ করবে। আর এই বিষাক্ত পদার্থ মন ও মস্তিষ্কে মারাত্মক বিষাক্ত জ্বর প্রেরণ করবে- যা অজ্ঞান, মৃগী ইত্যাদি ধরনের রোগের কারণ হবে।" (- নাফীসী)
অতপর লিখেছেন : যে শুক্রবীর্য স্বতঃস্খলিত হতে চায়, তাকে স্খলিত করে দেয়া আবশ্যক, যাতে তা খাদ্য গ্রহণের উপযোগিতা সৃষ্টি করতে পারে। (- নাফীসী)
আল্লামা হাফিজ ইবনুল কাইয়্যিম (র.) লিখেছেন ও স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা উচিত নয়। অন্যথায় বদ্ধ জলাশয়ের ন্যায় শুক্রবীর্যও দূষিত হয়ে যাবে।
মুহাম্মদ ইবনে যাকারিয়া (র.) বলেন : স্ত্রী সহবাস ত্যাগ কিছুকাল অব্যাহত রাখলে স্নায়ু দুর্বলতা দেখা দেয়। স্নায়ুর সূত্রনালী বন্ধ হয়ে যায় এবং জননেন্দ্রিয় সংকোচিত বা কুঁচকে থাকে। এক প্রসঙ্গে ইমাম নববী (র.) লিখেছেন
وربما غلبت على الرجل شهوته فينتو بالتاخير في بدنه أوفى قلبه أو في بصره
“অনেক সময় মানুষের কামোত্তেজনা প্রবল হয়ে ওঠে। তখন যদি সে চাহিদা মিটাতে বিলম্ব করা হয়, তাহলে শরীর, অন্তর ও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।" (-মুসলিম)
উপরিউক্ত বক্তব্য থেকে এটাই বুঝা যায়, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া আবশ্যক। কেননা কামোত্তেজনার সময় বীর্য স্খলন না ঘটলে স্বাস্থ্যও নষ্ট হয় আর দীন-দুনিয়ারও ক্ষতি সাধিত হয়।
ব্যভিচারের পথ
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী (র.) বলেনঃ “শুক্রবীর্যদেহে যখন অতিমাত্রায় উৎপন্ন হয়, তখন তার উত্তাপ মস্তিষ্কে আরোহণ করে। ফলে সুন্দরী ললনাদের প্রতি তাকানো অভ্যাসে পরিণত হয়ে পড়ে। অন্তরে প্রেম ও ভালোবাসা স্থান পেতে থাকে। সে উত্তাপের একটি অংশ যৌনাঙ্গের দিকেও ধাবিত হয়। ফলে যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি হয়। যৌন শক্তি টগবগ করে। এ অবস্থা সাধারণত যৌবনকালে দেখা দেয়। আর অবিবাহিত অবস্থায় মানুষকে যৌন শক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হতে প্ররোচিত করে। স্বভাব চরিত্র নষ্ট হওয়া শুরু হয় এবং একদিন কামপ্রবৃত্তি তাকে বড় বিপদের মুখে ফেলে দেয়।” (-হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা)
স্ত্রী সহবাসের উপকারিতা
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এদিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন :
يا معشر الشباب من استطاع منكم الباءة فليتزوج فإنه أغض للبصر وأحصن للفرج
“হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী-সহবাসে সক্ষম, তাদের বিবাহ করা একান্ত উচিত। কেননা, বিবাহ চোখকে আনত করে এবং যৌনাঙ্গকে হেফাজত করে।” (-বুখারী ও মুসলিম)
বৈজ্ঞানিক জালীস তাঁর 'স্বাস্থ্য রক্ষা' নামক গ্রন্থে লিখেছেনঃ 'স্ত্রী-সহবাস স্বাস্থ্য রক্ষার এক বড় উপায় উপকরণ এবং বহু সংখ্যক রোগের প্রতিষেধক। (-মাকতুবাত-ই-শায়খুল ইসলাম)
আল্লামা নাফীসী লিখেছেনঃ স্ত্রী-সহবাসে শরীরের স্বাভাবিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ! শরীরকে খাদ্য গ্রহণের উপযোগী করে, দেহমনকে প্রফুল্ল করে, ক্রোধ দমন করে, খারাপ চিন্তা দূর করে এবং শ্লৈষ্মিক রোগ নিরাময় করে। সহবাস ত্যাগ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যে-ব্যক্তি স্ত্রী-সহবাস করে না, অনেক মারাত্মক রোগ ব্যাধিতে সে আক্রান্ত হয়।” (- নাফীসী)
আত্মশুদ্ধি ও স্ত্রী-সহবাস
শায়খুল ইসলাম মাওলানা মাদানী (র.) তাঁর এক ভক্তকে লিখেনঃ
اما قولكم إن الباطن دع الاشتغال بالزوجة لايمكن فلا أكاد أسـلـمـه فـان الـجـمـاع يـصـفـى القلب ويزيل الدورات الروحية وقد قال شارع كتاب كل شهوة يسود القلب الاالجماع عياض رح القاضي فانه يزيده صفاء
“বিবাহ করার পর আধ্যাত্মিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তোমার এমন যুক্তি আমি মানি না। কেননা, স্ত্রী-সহবাস তো অন্তরআত্মা পবিত্র ও আধ্যাত্মিক আবিলতা দূর করে। কাযী আয়াজ রচিত গ্রন্থের রচয়িতা বলেন : “প্রত্যেক কামনাই অন্তরকে কলুষিত করে কিন্তু স্ত্রী-সহবাস এমন এক কামনা, যাতে অন্তরকে কলুষমুক্ত করে আলোকিত করে।" (-মাকতুবাত-ই-শায়খুল ইসলাম)
স্ত্রী সহবাসে স্বাভাবিকতা
তার কিন্তু অর্থ এই নয় যে, স্ত্রী সহবাসে স্বাভাবিকতার সীমা অতিক্রম করে এই কাজ মাত্রাতিরিক্ত করতে হবে। কেননা, এ অস্বাভাবিকতাও আবার খুবই ক্ষতিকর। উপরে দার্শনিক জালীস ও নাফীসীর যে বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে, তাতেও এ কাজে মধ্যপন্থা অবলম্বনের প্রতি ইঙ্গিত করা . হয়েছে । বলা হয়েছে, প্রকৃত যৌন উত্তেজনার পরই স্ত্রী সহবাস উপকারী। অন্যথায় কৃত্রিম ও জোরজবরদস্তি ভাবে এ কাজে রত হওয়া সীমাহীন অপকারী।
আল্লামা নাফীসী লিখেছেনঃ
والإفراط في الـجـمـاع يسقط القوة ويضر العصب فوقع في الرعشة والفالج والتشنج ويضف البصر
“অতিরিক্ত সহবাস বা রতিক্রিয়া শক্তি ক্ষয় করে। স্নায়ুর ক্ষতি সাধন করে। ফলে হাত পা কাঁপুনি, অর্ধাংগ ও খিঁচুনি ও মৃগী রোগ পয়দা হয় এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়।” একথা স্পষ্ট বুঝা গেলো, আধিক সহবাসে মানুষকে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত করে । তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরী। যে টুকু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং দীনের কাজে বিঘ্ন না ঘটায়, কেবল ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকা কাম্য।
অবৈধ পন্থা ও তার ভয়াবহ পরিণতি
সু-স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যখন যতটা বীর্য স্খলন প্রয়োজন তখন তা প্রকৃতিসম্মত স্বাভাবিক পন্থায়ই স্খলন করা উচিত। যে সব ব্যক্তি তার বিপরীত উল্টো ও অস্বাভাবিক পথে বীর্য স্খলন ঘটিয়ে তা নষ্ট করে দিচ্ছে, তাদের প্রকৃতির প্রতিশোধ গ্রহণ করতে হবে। মানুষ তার ভবিষ্যত বংশধরের আমানতদার। এই আমানতের খিয়ানত অন্ধকার ভবিষ্যত ডেকে আনে। এটা এতো অধিক ভয়াবহ যে, তা খিয়ানতকারী তার স্বভাব-বিরোধী পথে বীর্য নষ্ট করার সময় কল্পনাও করতে সক্ষম হয় না।
আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে যাকারিয়া (র.) বর্ণনা করেন। একদল ব্যক্তি রতি ক্রিয়ার স্বাভাবিক পথ ও পন্থা পরিহার করে স্বাভাববিরোধী পন্থায় বীর্য পড়েছ নষ্ট করে ছিলো। আমি প্রত্যক্ষ তাদের শরীর অবশ ও নিস্তেজ হয়ে পেেড়ছ। অহেতুক তাদের ওপর বিষণ্নতা ছেয়ে গেছে। তাদের আনন্দ-উৎসাহ ও অনুরাগে ভাটা পেেড়ছ। তাদের হযমশক্তি নষ্ট হয়েছে।
অস্বভাবিক পন্থার অপকারিতা
যারা স্বভাব বিরোধী উপায়ে বীর্যস্খলন ঘটায়, তাদের স্বাস্থ্য চিরতরে নিস্তেজ ও নষ্ট হয়ে যায়। তারা কখনো স্ত্রী-সহবাসের উপযুক্ত থাকে না। তাতে দেশের বিরাট ক্ষতি সাধিত হয়। মানব বংশ উৎপাদন ব্যাহত হবে। নারী জাতি নিরাশ্রয় হয়ে পড়বে। হস্তমৈথুন (নিজ হাতে যৌন কামনা দমন) কিংবা লূত জাতির বদভ্যাস অর্থাৎ পায়ুমৈথুন গ্রহণ করে তারা নিজেদের শরীর ও মনের ওপর অত্যাচারের পাহাড় চাপিয়ে দেয় ৷ এই অভিশপ্ত শ্রেণীর ওপর আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাদের লানত বর্ষিত হয়। ফলে, মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়ার জীবনেই তারা যে ভয়ানক পরিণামের (এইডস)সহ নানা রোগ-ব্যাধি দেখতে পায়, তাতে মৃত্যুর পর তাদের কি অবস্থা হবে তা সহজেই বুঝা যায়।
“হস্তমৈথুন নামক এই জঘন্য বদভ্যাস ও গর্হিত কাজটির সূচনা আফ্রিকায় হলেও 'আরব, এশিয়া তথা সমগ্র দুনিয়ার সভ্য ও অসভ্য দেশসমূহে এই বদভ্যাস প্রাচীন কাল থেকে কম-বেশী প্রচলিত ছিল। বেশীর ভাগ অবিবাহিত ছাত্র যুবক ও ভন্ড তপস্বীরাই এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এটি এমন এক জঘন্য কদর্য কাজ, যাতে বহু সংসার ধ্বংস হয়েছে এখনও হচ্ছে। দেশবাসীর সাধারণ অক্ষমতা ও দুর্বলতা তারই স্পষ্ট প্রমাণ। কেবলমাত্র এ একটি জঘন্য অপকর্মই আজকাল আমাদের যুব সমাজ তথা গোটা জাতিকে অত্যন্ত দুর্বল করে দিচ্ছে। এই কদর্য কুকর্মই দেশের গণস্বাস্থ্য ও যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
এ অপকর্ম জাতির আশা-আকাংখা ও উন্নতি-অগ্রগতির পথ ব্যাহত করেছে। এই ব্যাপক মহামারীর ব্যাধির মারাত্মক পরিণাম সম্পর্কে এখনো যদি আমাদের যুব-সমাজ সচেতন হতো! এখনো যদি তাদের জ্ঞান-চক্ষু উন্মীলিত হতো এবং হাজারো দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করতো! একথা বিনা দ্বিধায় বলা যেতে পারে যে, বেশীর ভাগ লোকই এই ধ্বংসাত্মক কুকাজে লিপ্ত। এ ব্যাধির চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থাপত্র চেয়ে ডাক্তার সাহেবের নিকট যে সব চিঠিপত্র প্রতিদিন প্রেরিত হচ্ছে, তা-ই প্রকৃত প্রমাণ। এরা স্বইচ্ছায় নিজ হাতে নিজেদের অমূল্য জীবন নষ্ট করে জীবন্ত সমাধিস্থ হয়ে চির অনুশোচনায় ভুগছে। মন, মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, অন্ডকোশ ও জননেন্দ্রিয় তথা। গোটা শরীরের ওপর সমানে এর প্রভাব পড়ছে।
এ প্রকারের আরো একটি ঘূর্ণিত বদ অভ্যাস আছে। আর তা হলো সমমৈথুন। এর কুফলও প্রায় হস্তমৈথুনের মত। সমমৈথুনকারী ও হস্তমৈথুনকারীর মতোই দুর্দশাগ্রস্ত হয়। এ উভয় অবস্থায়ই জননেন্দ্রিয়ের পেশী নিস্তেজ ও ঢিলা হয়ে যায়। উভয়ের মধ্যে দূষিত রস সঞ্চিত হয়ে তার স্বাভাবিক ক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়। আর এ কারণেই তার প্রাথমিক ফল হলো জননেন্দিয় ঠিকভাবে দণ্ডায়মান না হওয়া। একথা স্বীকৃত যে মানুষের হাতে এক ধরনের বিষাক্ত উপাদান বিদ্যমান থাকে।
ইসলামের দৃষ্টিতে অস্বভাবিক পন্থায় রতিক্রিয়া
ইসলাম এ কারণেই মানুষের সাথে এই কুকর্মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শান্তির বিধান রয়েছে। হাদীস শরীফে উল্লেখ আছেঃ
من وجدتموه يعمل عمل قوم لوط فاقتلوا الفاعل والمفعول به
“যদি তোমরা কাউকে লূত জাতির কাজে অর্থাৎ পায়ুমৈথুনে রত দেখলে কর্তা এবং কৃত উভয়কে হত্যা করবে।" -তিরমিযী স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়াও বীর্য নষ্ট করার একটি উপায় । কেননা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে-
اينظر الله عزوجل إلى رجل أتى رجلا أو امرأة في دبرها
“যে ব্যক্তি কোনো পুরুষ বা স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি সুদৃষ্টিতে তাকাবেন না।” (-তিরমিযী)
এই অপকর্ম আরো একভাবে হতে পারে হাদীস শরীফেই এ প্রসঙ্গের উল্লেখ করে কঠোর শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেনঃ
من أتى بهيمة فاقتلوه
“যে ব্যক্তি চতুষ্পদ জন্তুর সাথে যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হয় তোমরা তাকে হত্যা করো।” জামিউল ফাওয়াবিদ ইসলামে হস্তমৈথুন প্রভৃতি উপায়ে বীর্যস্থলন করে নষ্ট করাও কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ।
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন- “হস্তদ্বারা বীর্যস্খালনকর্মী অভিশপ্ত।” التاكح باليد ملعون (-আল হাদিস)
অভিজ্ঞতা ও পর্যপেক্ষণ বলছে, হস্তমৈথুনকারীর চেহারা নষ্ট হয়ে যায় । চেহারা অভিশপ্ত ও অনুজ্জল মনে হয়। সুস্বাস্থ্যের নিয়ামত থেকে সে বঞ্চিত হয়। অনেক সময় এ হস্তমৈথুনের মত বদ-অভ্যাস পৌরুষ ও পুরুষত্বও নষ্ট করে দেয়।
উক্ত আলোচনা যেটুকু সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হলো, তাতে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে, কামতৃপ্তির সমুদয় স্বভাববিরোধী পথসমূহ ইসলাম কঠোরভাবে রুদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। কেননা, এতে ব্যক্তি, পরিবার তথা সমাজ ও দেশে ব্যাপক হারে অপকারিতার দরজা খুলে যায়। জাতির পরজাতি, গোত্ররপরগোত্র এই অপকর্মের দরুন চিন্নভিন্ন ও ধ্বংস হয়ে গেছে।
সামগ্রিক ক্ষেত্রে বিবাহের উপকারিতা
ইসলামী শরীয়ত শুধু বৈধ স্বাভাবিক পথ ও পন্থা খোলা রেখেছে। কেননা, সর্বদিক থেকেই তা উপকারী। আর এ বৈধ পথটি হচ্ছে বিবাহের পথ। দীন, আইন, বিধান এসব কিছুতেই এই স্বাভাবিক বৈধ পথটি উন্মুক্ত রাখ হয়েছে। এই সম্পর্কের ওপরই পারিবারিক, সমাজ ও গোত্রীয় জীবন নির্ভরশীল। বিবাহ-প্রথা না থাকলে সামাজিক প্রথা ও জীবনধারা এলোমেলো ও চিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়তো। সভ্যতার ক্রমবিকাশ রুদ্ধ হয়ে যেত।
একথা সর্বজন স্বীকৃত জীবনের বিশেষ এক স্তরে এসে শান্তিলাভের জন্য পুরুষের নারীর প্রয়োজন অনুভূত হয়। স্বীয় ইজ্জত রক্ষার জন্য নারী খোঁজ করে কোনো পুরুষের আশ্রয়। অতঃপর তারা নারী-পুরুষ উভয়ে মিলে পবিত্র জীবন যাপন করবে। বিপদে-আপদে একে অপরকে সাহায্য করবে। যে পর্যন্ত নারী-পুরুষ উভয়ের মিলন না ঘটে, কারো জীবনই পূর্ণাঙ্গ হয় না। আর বিবাহ করা সমষ্টির স্বার্থেই প্রয়োজন। কেননা, বিবাহের দরুন উল্লিখিত উপকারিতার সঙ্গে সমাজ জীবনেও সুবিধা হয়। পারস্পরিক সম্পর্ক ও মিল-মুহব্বত দুটি পরিবারকে একত্রে জুড়ে দেয়।
বিবাহ-প্ৰথা না থাকলে কুরআনে যে পিতার কথা উল্লেখ আছে পিতা কোত্থেকে আসবেন? মাতা কে হবেন? ভ্রাতা-ভগ্নীর সম্পর্ক কিভাবে সৃষ্টি হবে? স্বামী বা কে স্ত্রী কাকে বলা হবে এবং সম্পর্ক কিভাবে হবে? শ্বশুর ও শ্যালক কে হবে? দুগ্ধ-অদুগ্ধ সম্পর্কের শাখা কোন বৃক্ষ থেকে গজাবে? ভাই-বোন, পরিবার, সমাজ দুনিয়ায় কোথেকে জন্ম নেবে? আর পারস্পরিক সম্পর্কের শিকড় কিরূপে দৃঢ় হবে?
ভারতীয় বুদ্ধিজীবিদের বর্ণনা
ভারতের প্রখ্যাত নেতা ও সাবেক ভারতীয় গবর্ণর জেনারেল মিঃ রাজ গোপাল আচার্য বলেনঃ "নারীদের বিবাহ করা অত্যাবশ্যক। ইঞ্জিনীয়ারিং, ডাক্তারী, রাজনীতি নিঃসন্দেহে সম্ভ্রান্ত পেশা। কিন্তু ঘরদোরের তত্ত্বাবধান ও সন্তান লালন-পালনও কিছুমাত্র কম মর্যাদার নয়। কল-কারখানায় কাজ করা এবং দফতরে হাযিরা দেয়া যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেনো, পারিবারিক জীবনকে সুন্দর পরিপাটি করা তার থেকেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ । আমি ছেষট্টি বছর বয়সে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, তা হলো, নারীদের চারিত্রিক পূর্ণাঙ্গতা মাতৃত্ব গ্রহণের মাধ্যমেই সম্ভব।” (-যমযম)
ইউরোপীয় শিক্ষাবিদের অভিমত
এক ইউরোপীয় শিক্ষাবিদ লিখেছেন : নারীর প্রাথমিক কর্তব্য হচ্ছে বিবাহ, মাতৃত্ব ও ঘর-সংসার। সমাজের কর্তব্য হচ্ছে প্রতিটি রমনীর জন্যে এর সুযোগ সৃষ্টি করা, যাতে পুরুষের কর্ম সংস্থানের মতোই রমণী তার বাঞ্ছিত বস্তুসমূহ লাভ করতে পারে। (-সিদকে জাদীদ)
পাশ্চাত্য চিন্তাবিদের পরামর্শ
পাশ্চাত্য চিন্তানায়ক এন্থনী এনলোড ভিসি তাঁর "নারীদের নিরাপত্তা" নামক পুস্তকে লিখেছেনঃ "এক বিশেষ বয়স পর্যন্ত প্রতিটি নারীর বৈবাহিক জীবনকে জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বানানো উচিত- এ বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা অত্যাবশ্যক মনে হচ্ছে এবং একমাত্র বিবাহ দানের উদ্দেশ্যেই মেয়েদের প্রতি পালন করা উচিত- এ কথাটি মাতা-পিতাকে হৃদয়ঙ্গম করাতে হবে। কেননা একমাত্র মাতৃত্বের মাধ্যমেই মানবতার উৎকৃষ্ট . দিকটির পরিপূর্ণতা সাধিত হয়। মাতৃত্বলাভ ব্যতীত নারী যত কিছুই লাভ করুক না কেনো, তা অতি নগণ্য ও তুচ্ছ। যারা যুবতী নারীকে এই বলে ধোকা দিচ্ছে যে, মাতৃত্বের চাইতেও বড় কিংবা তার সমপর্যায়ের অনেক কাজ রয়েছে, তারা শুধু নারী জাতির নয়, বরং গোটা মানবতার শত্রু।” (-নিদা-ই-হেরেম)
উক্ত গ্রন্থকারই তাঁর গ্রন্থের অন্যত্র লিখেছেন “যেহেতু নারী সম্পূর্ণ রূপে জীবন ও তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিমজ্জিত, সেহেতু এ সত্যটি স্পষ্ট ও নির্দ্বিধায় ঘোষিত হওয়া উচিত যে, যে-সব ব্যক্তিরা বলছে, নারীদের আসল কর্তব্য ভিন্ন কিছু, যে-সব ব্যক্তি যুগ-সমস্যার গোলক ধাঁধায় নারীত্বকে জীবন ও তার শ্রীবৃদ্ধি থেকে বিচ্ছিন্ন বলে বিভ্রান্ত করছে অর্থাৎ যে-সব ব্যক্তি নারীকে স্বামী ও সন্তান সন্তুতি থেকে দূরে থেকে আনন্দ, শান্তি ও সুখ লাভের আশ্বাস দিচ্ছে, তারা মিথ্যাবাদী, প্রান্ত।" (নিদা-ই হেরেম)
disadvantages of abstaining from, disadvantages of abstaining from, disadvantages of abstaining from, disadvantages of abstaining from, disadvantages of abstaining from, disadvantages of abstaining from, disadvantages of abstaining from, disadvantages of abstaining from, disadvantages of abstaining from, disadvantages of abstaining from, disadvantages of abstaining from, disadvantages of abstaining from, disadvantages of abstaining from, disadvantages of abstaining from