মুখোসের অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান আলকাদেরী - Mukhosher Ontorale
মুখোসের অন্তরালে
লেখক
হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান আলকাদেরী (মা. জি. আ)
মুহাদ্দিস
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা।
(toc)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম মুখোসের অন্তরালে
উপক্রমণিকা
ইসলাম ও মুমিন মুসলমানদের জন্যে মারাত্মক শত্রু হচ্ছে দু'টো সম্প্রদায়। একটি হচ্ছে কাফের অপরটি মুনাফিক। পবিত্র কোরআনে সূরা আল-ইমরান ২৮ নম্বর এবং সূরা মা-য়েদাহ্ শরীফ ৫৭ নং আয়াতে মুমিনকে মুমিন ছাড়া কোন কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এ দু'সম্প্রদায়ের মধ্যে 'কাফের' যারা তারা ইসলামের চতুঃসীমানায় আসেও না, এমনকি পোশাকে-আষাকে চাল-চলনে, আচার-আচারণে এমনকি ভাষাগত শব্দ ব্যবহারেও মুসলমানদের সাথে পার্থক্যটা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়৷
পক্ষান্তরে ‘মুনাফিক' সম্প্রদায় সবচেয়ে মারাত্মক। কোরআনে হাকীমে বহু আয়াতে মুমিন মুসলমানদের মুনাফিকদের ব্যাপারে সাবধান করা হয়েছে। সূরা মুনাফিকুন ৪নং আয়াতে বলা হয়েছে-‘মুনাফিকদের দেহাবয়ব বড়ই আকর্ষণীয়, কথা খুবই মিষ্ঠ। তবে এদের ভেতর-বাইর এক নয়। এরাই তোমাদের শত্রু, তাই এদের সম্পর্কে সতর্ক থাক'। সূরা বাক্বারা ৮নং আয়াতে বলা হয়েছে-‘মুনাফিকরা মুমিন নয়'। ১৪নং আয়াতে বলেছে ‘মুনাফিকরা মুমিনদের সামনে এক কথা পেছনে আরেক কথা বলে'। সূরা আল-ইমরান ১৬৭ নম্বর আয়াতে রয়েছে 'মুনাফিক্বদের মনের কথা আর মুখের কথা এক নয়।
প্রতীয়মান হল ইসলাম ও মুমিনমুসলমানদের শত্রু ‘কাফির’দেরকে চেনা-জানা ও এদের হাত থেকে জান-মাল না হোক অন্ততঃ ‘ঈমান' বাঁচানো অনেকটা সহজ। পক্ষান্তরে পরম ও চরম শত্রু ‘মুনাফিকদের কবলে পড়লে জান-মাল ও ঈমান সবকিছুই হারিয়ে সর্বস্বান্ত হতে হয়। এ পর্যায়ে প্রিয়তম রাসূল নবীয়্যে মুকাররম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সে প্রসিদ্ধ হাদীসটি সামনে চলে আসে, যাতে বলা হয়েছে- কেবল মৌলিক আক্বীদা-বিশ্বাসের মতপার্থক্যের কারণে উম্মতে মুসলিমাহ্ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে।
ভ্রান্ত আক্বীদার কারণে ৭২টি দল জাহান্নামী হবে। নবীজীর বাণী ‘মা-আনা আলাইহি ওয়া আসহাবী' এর আলোকে সঠিক আক্বীদা-বিশ্বাস লালন ও পালনের কারণে কেবল একটি মাত্র দল জান্নাতী হবে। যারা ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত' নামে অভিহিত হবে। বর্তমান চলমান মুসলিম দুনিয়ায় একমাত্র শিয়া মতবাদিরাই (কিছু নব্য দ্বীফুরুশ অর্থাৎ ধর্ম ব্যবসায়ী শিয়া ছাড়া) সবাই নিজেদের শিয়া পরিচয় দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। বাদ বাকী ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণকারী যেমন নজদী ওয়াহাবী, খারেজী, দেওবন্দী, মওদূদী, লা-মাযহাবী ইত্যাকার বাতিল দলগুলো অবলীলায় সাধারণ মুসলমানদের সামনে নিজেদেরকে সুন্নী নামে পরিচয় দেয়।
নিজেদের অতিমাত্রায় দূর্গন্ধময় ঈমান-বিধ্বংসী আক্বীদাগুলো যা তাদের মুরব্বীদের লিখায়-রচনায় প্রকাশিত হয়েছে ঘূর্ণাক্ষরেও সর্ব সাধারণের সামনে উপস্থাপন করে না। কখনও কারও সামনে ধরা পড়ে গেলেও সত্যকে মিথ্যা দিয়ে তালগোল পাকিয়ে কেটে পড়ার চেষ্টা করে। এসব মুনাফিক ও এদের নিফাক্বাতের এক নিরাপদ আতুরঘর হচ্ছে ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ মাদরাসা।
- ইসলামের শাশ্বত আক্বীদা খতমে নুবুওয়াত এর বিষয়কে কেন্দ্র করে এক অভিনব ও ঈমান সংহারী আক্বীদার জন্ম দিলেন এখানকার মহাপরিচালকের চেয়ারে বসে কাসেম নানুতুবী সাহেব।
- আল্লাহ্ সুবহানাহুর শানে সুব্বহিয়্যতকে আঘাত করে ‘ইমকানে কি' নামে আরেক দূর্গন্ধময় আক্বীদা প্রসব করলেন এদের ইমামে রাব্বানী গাউসুল আজম (?) রশীদ আহমদ গাংগুহী সাহেব।
- এদের আরেক মহারথী বুযর্গ খলীল আহমদ আম্বিটবির নাপাক উদর থেকে জন্ম নিল আরও একটি কুফরী আক্বীদা ‘নবীজীর এলমের চাইতেও শয়তানের এলম বেশী।
- সর্বশেষ তাদের হাকীমুল উম্মত জনাব থানবী সাহেব উদ্ভাবন করলেন অতিশয় দূর্গন্ধময় ও কুফরী আক্বীদা 'নবীজীর এলমের মত এলম পাগল-ছাগল আর জন্তু-জানোয়ারের কাছেও আছে।' নাউযুবিল্লাহ্!
এখানে সর্বাত্মক গুরুত্ববহ ও প্রনিধানযোগ্য বিষয় হচ্ছে দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পেছনের ইতিহাস। তা হচ্ছে ভারতের ইউপির রায়বেরেলির সৈয়দ আহমদ বিন ইরফান নামে জনৈক ব্যক্তি প্রারম্ভিক জীবনে লেখা-পড়ায় অনগ্রসর থাকলেও শরীর চর্চা ও যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন স্থানে সৈনিকের দায়িত্বও পালন করেন। শেষ পর্যন্ত তৎকালীন দিল্লীর সুপ্রসিদ্ধ শাহ্ পরিবার এলমে হাদীসের চর্চা ও খেদমতের কারণে সর্ব ভারতে যারা সম্মানের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। সে সময়ের দিকপাল সর্বজনমান্য শাহ্ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির হাতে বায়আত গ্রহণ করলেন।
বংশগত সৈয়দ ঘরানার হলেও আমর বিন সা'দ ও ইয়াযীদ বিন মুআবিয়ার মত তীয়তে যে ঔদ্ধ্যত্য ও অহমিকা ছিল তা প্রকাশ পেল যখন হযরত পীর ও মুর্শেদ ত্বরীকতের একটি বিশেষ দীক্ষা 'মুরাকাবায় মুর্শেদের ধ্যান অর্থাৎ তাছাব্বুরে শায়খ এর সবক দিলেন। সৈয়দ সাহেব বলে দিলেন এটা আমার দ্বারা হবে না। কারণ এ'তো সুস্পষ্ট শির্ক। এ একটি মাত্র উক্তি দ্বারা প্রিয়তম নবীয়্যে মুকাররম থেকে আরম্ভ করে আদ্যোপান্ত সিলসিলার সব মাশায়েখে কেরামের উপর শির্কের ফতোয়া লাগিয়ে দিলেন।
ইখতিলাফে দ্বীনের (ধর্মের ভিন্নতার) কারণে যখন জন্মদাতা পিতার সাথে পুত্রের মীরাস অর্থাৎ উত্তরাধীকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়, তখন মুশরীক পীর (?) শাহ্ আব্দুল আজিজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সাথে ভারতবর্ষে তাওহীদী জনতার জনক সৈয়দ আহমদ বেরেলবীর সাথে ত্বরীকত ও পীর-মুরীদির সম্পর্ক কখনও অক্ষুন্ন থাকতে পারেনা।
তাই সৈয়দ আহমদ বেরেলবীকে মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাহ্ আব্দুল আজিজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির খলীফা সাব্যস্ত করা দিন-দুপুরে পুকুরচুরি নয় কী? হাঁ হতে পারে সিরাতেমুস্তাকীমের বর্ণনা মতে স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলাই তাকে স্বহস্তে বায়আত করিয়ে পীর বানিয়ে দিয়েছেন। এহেন শেকড়বিহীন সিলসিলা নিয়ে যারা গর্ব করে তাদের জন্যে করুনা জাগে বৈকি। এ সুযোগ ষোল আনা কাজে লাগিয়েছেন দিল্লী শাহ্ পরিবারের এক কুলাঙ্গার বহু বদ আক্বীদার জন্মদাতা নজদী ওয়াহাবিয়্যাতের প্রেতাত্মা শাহ্ ইসমাইল দেহলবী।
একথা সবাই জানেন যে বৃহত্তর ভারত বর্ষ ঈমান ও ইসলামের নূরে উদ্ভাসিত হয়েছে দাতা গঞ্জবখশ লাহোরী, খাজা গরীব নওয়াজ ও হযরত শাহ্ জালাল ইয়েমনী আলাইহিমুর রাহমাহ্ ওয়ার রিদওয়ানের মত আউলিয়ায়ে কেরাম ও সুন্নী হাক্কানী পীরানে ত্বরীকতের মাধ্যমে। অতএব বদ আক্বীদার বিষাক্ত ক্যাপসুলগুলো এদেশের ওলী-ভক্ত সুন্নী মুসলমানদের সেবন করাতে হলে ফাঁদ পাততে হবে ত্বরীকত আর পীর-মুরীদির। তাইতো সেদিন নিজে পীর-মুরীদির প্রবক্তা না হলেও নিরেট
জাহেল হওয়া সত্ত্বেও সূরা মুনাফিকুনে বর্ণিত 'ওয়া ইয়া রাআইতাহুম তু’জিবুকা আজসামুহুম' এর বাস্তব প্রতিচ্ছবি হিসেবে 'সৈয়দ আহমদ বেরেলবী' কে পীর বানিয়ে খারেজিয়্যাত নজদিয়্যাত তথা ওয়াহাবিয়্যাত প্রচারের মিশন আরম্ভ করলেন। নিজে সুবক্তা এবং সৈয়দ সাহেব সুদৰ্শন হওয়ার সুবাদে সর্বত্র অনেক জাহেল তো জাহেল কিছু বদ নছীব আলেম সমাজও এ জালে আটকা পড়ে গেল। একদিন ইসমাইল দেহলবীর জন্যে কাঙ্ক্ষিত সে মাহেন্দ্রক্ষন উপস্থিত হল।
পীর ছাহেব হজ্জে যাবেন। এ সুযোগে জাহেল পীর সৈয়দ ছাহেব সুচতুর নজদী ওয়াহাবী মোল্লাদের সান্নিধ্যে এলেন। সূরা মুনাফিকুন এ বর্ণিত মহান আল্লাহর বাণী 'ওয়া ইয়াকূলু তাসমা লিক্বওলিহিম' এর ফলশ্রুতিতে তাদের আলাপন-আচার ও আচরণে সৈয়দ সাহেব যারপরনাই মুগ্ধ হয়ে কেবল মনে প্রাণে তাদের আক্বীদা-বিশ্বাস মেনে নিয়েছেন তা নয় বরং তাদের বিশ্বস্ত একজন দাঈ ও মুবাল্লিগ হিসেবে বাকী জীবন অতিবাহিত করলেন। হিন্দুস্থানে ফিরে এসে এখানকার সুন্নী মুসলমানদের আক্বীদা আমলকে শির্ক-বিদআত আখ্যা দিয়ে সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন।
পরবর্তীতে উচ্চাভীলাসি সৈয়দ ছাহেব তথাকথিত ওয়াহাবী ইসলামী হুকুমাত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে বৃটিশ সীমানার বাইরে সীমান্ত প্রদেশের দূর্গম এলাকায় বসবাসরত দূর্ধর্ষ শিখদের সাথে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়ে ইংরেজদের মদদপুষ্ঠ হয়ে বিরাট বাহিনী নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে যান।
সেখানকার পাহাড়ী সুন্নী মুসলমানেরা যেহেতু মাঝে মাঝে শিখদের হামলার শিকার হতেন। তাই সৈয়দ সাহেবের বাহিনীকে আপন মনে করে জায়গা দেন এবং যৌথভাবে শিখদের বিরুদ্ধে কয়েকটি যুদ্ধও সংঘটিত হয়। পরবর্তীতে পাঠান সুন্নী মুসলমানেরা এদের ওয়াহাবী আক্বীদা বুঝতে পেরে তাদের সংসর্গ ত্যাগ করে। এদিকে সৈয়দ সাহেবও পাঠান সুন্নীদের বিরুদ্ধে শির্ক-বিদআতের ফতোয়া দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। সৈয়দ সাহেবের বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। স্বয়ং সৈয়দ সাহেব এবং তার খাছ মুরীদ শাহ্ ইসমাইল দেহলবীও চিরতরে নিরুদ্দেশ হয়ে যান।
দেওবন্দীদের স্বীকারুক্তি মতে সেদিনকার বালাকোটের পরাজিত ব্যক্তি আর ভক্তরাই সে আদর্শকে চালু রাখা ও প্রতিষ্ঠার নিমিত্তেই দেওবন্দে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে। সন্দেহাতীতভাবে প্রতীয়মান হল 'নজদী ওয়াহাবিয়ত+বালাকোট+দেওবন্দ একই সুঁতোয় গাঁথা।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও সুন্নী মুসলমানের সংক্ষিপ্ত পরিচয়:-
ইতিপূর্বেই এটা বলেছি যে, মুসলমানদের ফের্কার বিভাজন বাহ্যিক পোষাক-পরিচ্ছদ কিম্বা আমলের উপর ভিত্তি করে নয়। এটা কেবল মৌলিক আক্বীদা-বিশ্বাসের পার্থক্যের কারণে। অতএব, কেউ লম্বা জামা, গোল কোর্তা গায়ে দেয় কি দেয়না, মাথায় গোল কিম্বা লম্বা টুপী তথা রং-বেরঙের পাগড়ী, মুখে লম্বা দাঁড়ি রাখল কি রাখল না, এমনকি সময়মত নামায-রোযা, হজ্জ-যাকাত আদায় করে কি করে না। সে মীলাদ ক্বিয়াম, ওরস ফাতেহা, ইছালে সাওয়াব ইত্যাদি মানে কি মানে না।
সর্বোপরি মদ জুয়া-ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, না কি এসব থেকে বেঁচে থাকে।' এর একটিও খারেজী, রাফেজী, শিয়া, মুতাযিলা, নজদী ওয়াহাবী, দেওবন্দী, মওদূদী, কাদিয়ানী ইত্যাকার বাতিল ফের্কা হওয়ার মাপকাঠি নয়। এসব কিছু তার ফিসক-ফুজুর তথা বদ আমলী আর পাপাচার। যতক্ষণ ইনকার তথা অস্বীকার পাওয়া যাবে না। আর ইনকার পাওয়া গেলে তো ‘ফের্কা'র প্রশ্নই আসে না। সরাসরি কাফের হয়ে যাবে।
হাদীসে জিব্রীলে ‘দ্বীনের’ পুর্ণতায় তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ১. ঈমান, ২. ইসলাম এবং ৩. ইহসান। ঈমান হচ্ছে দ্বীনের মৌলিক আক্বাইদ ও বিশ্বাস। ইসলাম বলতে বুঝায় নামায-রোযা, হজ্জ যাকাতসহ বাহ্যিক পরিশুদ্ধতায় নবীজির দেয়া যাবতীয় আমল ও আখলাক্ব। আর ইহসান বলতে বুঝায় আধ্যাত্মিক অর্থাৎ আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জনের যাবতীয় নিয়ম-নিগড়। হাদীসে পাকের আলোকে প্রতীয়মান হয় ঈমানের মূল ভিত্তি হচ্ছে দু'টি। ১. তাওহীদ ও ২. রিসালত। 'তাওহীদ' কে মানার অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহর যাত (সত্ত্বা) ও সেফাত (গুণাবলী) ঠিক যেভাবে প্রিয়তম রাসূলে মুকাররম নবীয়্যে মু'আজ্জম নুরে মুজাসসাম পরিচয় দিয়েছেন সেভাবেই মানা।
পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে নবীজী জানিয়ে দিয়েছেন 'আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় যাত ও সেফাতে এক একক ও লা-শরীক হওয়ার সাথে সাথে তিনি হচ্ছেন 'সুবহান'। অর্থাৎ সকল প্রকার আয়ব, দোষ, ত্রুটি-বিচ্যুতি তাঁর স্বত্ত্বায় চিন্তা ও কল্পনাও করা যায় না। এ ধরনের ধ্যান-ধারনা বাতিল আক্বীদা হিসেবে গন্য। যেমনটি দেওবন্দী ওয়াহাবীরা পোষণ করে থাকে।
রিসালত অর্থাৎ রাসূলে পাক-এর প্রতি ঈমান রাখার তাৎপর্য হচ্ছে আল্লাহ্ তা'আলা যেভাবে রাসূলে করীম -এর পরিচয় কালামে পাকে দিয়েছেন কিংবা স্বয়ং রাসূলে মুকাররাম : যেভাবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই রাসূলুল্লাহ্ কে মেনে নেয়া। অতএব রাসূলুল্লাহ্ কে আল্লাহর রাসূল মেনে নেয়ার সাথে সাথে খাতামুন্নবীয়্যীন অর্থাৎ যমানার দিক থেকে সর্বশেষ নবী মানা, মাসুম মানে নিষ্পাপ ও নিঃকলুষ মানা, যাত ও সেফাত অর্থাৎ স্বত্তাগত ও গুণগত সৃষ্টিকুলে রাসূলুল্লাহ্ কে বে-মিসাল মানে উপমাহীন-অতুলনীয় মানা।
আল্লাহ্ প্রদত্ত উলূমে গায়বিয়্যার অধিকারি বলে বিশ্বাস করা। 'হায়াতুন্নবী' অর্থাৎ বেছালে পাকের পরেও রওজা শরীফে সশরীরে যিন্দা মানা। ‘শফীয়ে মায়ূন' অর্থাৎ কবরে হাশরে এককথায় পরকালে কঠিন দিনে পাপী-তাপী উম্মতের জন্যে মহান আল্লাহর অনুমতিপ্রাপ্ত সুপারিশকারী বলে ঈমান রাখা। প্রিয় নবীজি প্রদত্ত শাহাদাত তথা সাক্ষ্য অনুসারে হযরাতে সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ করা এবং তাদের আদালাত মানে সত্যের মাপকাটি বলে মেনে নেয়া আর আল্লাহ্ রাসূলে যথার্থ আক্বীদায় অটল-অবিচল ‘আহলেবায়তেরাসূল-আওলাদের রাসূলদের নিখাদ ভালবাসা অন্তরে পোষণ করা।
সুতরাং এ সংক্ষিপ্ত বর্ণনার আলোকে রাসূলে পাক-এর পার্থিব হায়াতে ঘাপটি মেরে থাকা মুনাফিকদের থেকে আরম্ভ করে পরবর্তীতে আবির্ভুত খারেজী, রাফেযী, শিয়া, মু'তাযিলা, নজদী-ওয়াহাবী, দেওবন্দী, কাদিয়ানী, লা মাযহাবী তথা আহলে হাদিস, মওদূদীসহ যারা এ আক্বীদাসমূহে বিশ্বাসী নয় সবাই ‘মুনকিরীনে রিসালাত' হওয়ার কারণে ‘বদ আক্বীদা' 'বাতিল ও গোমরাহ্' হিসেবে সাব্যস্ত।
পরন্তু যারা মীলাদ-ক্বিয়াম, ওরশ-ফাতেহা, ইছালে সাওয়াব ইত্যাকার আহলে সুন্নাতের কিছু আমল এবং কিছু পরিভাষা ব্যবহার করার আড়ালে নিজেদেরকে সুন্নী পরিচয় দেয় অথচ আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ও নবীজী -এর শানে অতিমাত্রায় মারাত্মক দুর্গন্ধময় আক্বীদার জন্মদাতা দেওবন্দী-ওয়াহাবিয়্যাতের প্রবর্তক, নজদী ওয়াহাবিয়্যাতের আমদানিকারক- সৈয়দ আহমদ বেরেলভী ও হিন্দুস্থানে ওয়াহাবিয়্যাত ও নজদিয়্যাতের পুনঃজন্মদানকারী শাহ্ ইসমাইলের প্রেতাত্মা ও যোগ্য উত্তরসুরী সর্বমাওঃ কাশেম নানুতুবী, রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, খলীল আম্বিটুবী এবং আশরাফ আলী থানবী প্রমুখ গোস্তাখানে রাসূল ও ভন্ড নবী মীর্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীসহ যে পাঁচজনের- কুফরী আক্বীদা অকাট্যভাবে প্রমান করে ফতোয়া আরোপ করেছেন যমানার শ্রেষ্ঠতম আলেমে দ্বীন মুজাদ্দিদে মিল্লাত ইমামে আহলে সুন্নাত ইমাম শাহ আহমদ রেযা খান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
নামধারী কতিপয় সুন্নী আলেম সুন্নী অঙ্গনে মাঠে-ময়দানে গলা ফাটায়া মিলাদ-কিয়ামের পক্ষে বলে। ক্ষেত্র বিশেষে আ'লা হযরতের নামও লয়; কিন্তু আ'লা হযরত সপ্রমাণ যাদের নামে কুফরী ফতোয়া আরোপ করে বলে দিয়েছেন 'মান শাক্কা ফী কুফরিহিম ফাক্বাদ কাফারা' যে বা যারা এদের ব্যাপারে কাফির কি-না সন্দেহ করবে সেও কাফের হয়ে যাবে। এদিকে এসব ঘোমটাধারী, মৌ'রা এসব গোস্তাখানে রাসূল দেওবন্দী মহারথীদের নামের সাথে ‘রাহমাতুল্লাহি আলাইহি' লিখে। মুনাফেক্বীরও তো একটা সীমা আছে!
আকাশ ফাটা চিৎকার করে ওয়াহাবীর চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করে। কিন্তু আরবের অভিশপ্ত স্থান নজদে জন্ম লাভ করা 'ওয়াহাবী মতবাদটাকে সাদরে গ্রহণ করে সযত্নে সেখান (নজদ) থেকে এখানে (হিন্দুস্থানে) কে নিয়ে আসল, পীর-মুরীদির খোলশ পরে কারা এর প্রচার করল? ‘ছিরাতে মুস্তাকীম' ও 'তাকবিয়াতুল ঈমান' এর মত দূর্ঘন্ধময় পুস্তক রচনা করে দাতা, খাজা এবং - শাহ জালালসহ অসংখ্য আউলিয়ায়ে কেরামের লাগানো সাজানো সুন্নীয়্যাতের প্রেমময় এ সুসজ্জিত বাগানে ‘শির্ক’-‘বিদআতের' নামে অনৈক্যের আগুন লাগিয়ে কে বা কারা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করল? এখনও এ অগ্নিকুন্ডে আঁকানি-বকানি আর লিখনির জ্বালানী ঢেলে ঢেলে এর পরিধি বাড়ানোতে লিপ্ত রয়েছে কারা? এসব ব্যাপারে এদের মুখ থেকে শব্দ বেরোয়না।
এদেরকে কেউ সত্যটা জানিয়ে দিলেও সোজা সাপটা তা গ্রহণ না করে আবোল-তাবোল বকে। অন্ধভক্তির মায়াজালে এরা এতই বিভোর যে, দরকার হলে এরা ‘ইতিহাস' এর সোজা সরল পথকেও বাঁকিয়ে দেবে। সাধারণত চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নাকি বায়তুল খালা (টয়লেট) থাকে না। উন্মুক্ত চরে এরা মুখ নিচু করে কাজ সারে। আর মনে করে তাকে কেউ দেখছে না। ইতিহাস তার আপন গতিতে চলে। হাসনাহেনা আর গোলাপ যেমন রাতের অন্ধকার আর পাতার আড়ালে থেকেও সুগন্ধ ছড়ায় তেমনি মাকাল ফলও সুদর্শন আবরণ দিয়ে তার ভেতরের তিক্ততাকে লুকিয়ে রাখতে পারে না ।
তাই এ দ্বিমুখী আচরণ অবলম্বনে যেসব ঘোমটাধারী মুখোশ পরা আলেমরা সুন্নীদেরকে ধোকা দিয়ে আখের গোছাতে ব্যস্ত তাদের মুখোশ উন্মোচন করে প্রকৃত সুন্নী মুসলমানদের বাঁচানোর চেষ্টা করা, ‘সুন্নীদের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করা নয় । এতো হচ্ছে ‘ঘরে চোর ঢুকেছে, অন্ততঃ চোরচোর বলে চিৎকার করে হলেও ঘরের মালিকদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা। আল্লাহ্ পাক এরশাদ ফরমান- কেয়ামতের দিন মানুষ কবর থেকে উঠবে অবনমিত নেত্রে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের মত। (কমর-৭), বলা হবে 'হে অপরাধীরা তোমরা আজ আলাদা হয়ে যাও। (ইয়াসীন-৫৯), আল্লাহ্ তা'আলা তো দুনিয়াতেও পাক আর নাপাকের সংমিশ্রন মানে প্রকৃত সুন্নী আর নকল মুনাফিকসুন্নীর একত্রিকরণ চাননা। (আল-ইমরান-১৭৯)
আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি শত বিরোধীতার মাঝেও মুনাফিকদের মুখোশ উম্মোচন করে ছাড়লেন। আশেকে রাসূল ইমাম আজিজুল হক শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাজা রক্ত দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন মুনাফিকদের সাথে ঐক্য নয়। ভাবতেও অবাক লাগে ওদের জন্যে যারা নামের সাথে রেজভী যোগ করে আ'লা হযরতের অনুসারী দাবী করে।
ইমাম শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ভক্ত অনুরক্ত হিসেবে বাৎসরিক দু' একবার ওরশ-ফাতিহা করে কিছু কথার ফুলঝুরী রেখে তাবারক খেয়ে উদর পুর্তি করেই দায়িত্ব শেষ করে। আবার এসব চেনা-জানা আত্মস্বীকৃত মুনাফিকদের জন্যে ঘরের এবং অন্তরের বৈঠকখানা থেকে আরম্ভ করে অন্দরমহল পর্যন্ত খুলে রাখে।
বাস্তবে সুন্নী মুসলমান তারাই যারা আক্বীদা-আমলে সুন্নীয়তের উপর অটল থাকে এবং বাতিল কপট মুনাফিকদের ধোকা থেকে নিজে বাঁচে আর অন্যদের বাঁচাতে সাধ্যমত চেষ্টা করে।
এবার আসুন দেখুন পড়ন এবং বুঝুন নিরপেক্ষ ইতিহাস কী বলছে।
"জনাব সৈয়দ আহমদ বেরেলবীই হচ্ছেন হিন্দুস্থানে ওয়াহাবিয়্যাতের আমদানিকারক।”
১ম
‘দিক দর্শন' প্রকাশনী লী: ২৬ বাংলা বাজার, আলী রেজা মার্কেট (৩য় তলা) ঢাকা-১১০০ কর্তৃক প্রকাশিত ও পরিবেশিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত বি.এস.এস. (অনার্স) দ্বিতীয় বর্ষের (২০১৩-১৪) সর্বজনাব মাহমূদুল মুর্শিদ (সুমন), মো: মাসুদ রানা, শাহনাজ পারভীন ও বসুদেব বিশ্বাস কর্তৃক রচিত- এবং আর.সি. পাল সম্পাদিত (পরীক্ষা সহায়কগ্রন্থ) ‘রাষ্ট্র বিজ্ঞান' ‘ব্রিটিশ ভারতে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক উন্নয়ন (১৭৫৭-১৯৪৭)' পুস্তকের ১২১ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
প্রশ্ন-১. ওয়াহাবী আন্দোলন কী?
উত্তরের প্রথম প্যারা ৪র্থ লাইন থেকে পড়ুন-“অষ্টাদশ শতাব্দীতে দিল্লির শাহওয়ালিউল্লাহর নেতৃত্বে সূচিত এ শান্তিপূর্ণ সংস্কার আন্দোলন পরবর্তীকালে তার সুযোগ্য পুত্র শাহ আব্দুল আজিজের শিষ্য সৈয়দ আহমদ (বেরলভি)এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। শাহ ওয়ালিউল্লাহ্ ও তাঁর পুত্র আবদুল আজিজ সৈয়দ আহমদ বেরলভি প্রমুখের আদর্শ ও কর্মপন্থার সাথে আরবের ওয়াহাবের মিল ছিল বলে এ আন্দোলনের নাম 'ওয়াহাবি আন্দোলন'। এর পরবর্তী প্যারায় লিখতেছেন- “ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।
ভারতে এ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রায়বেরিলির সৈয়দ আহমদ (১৭৮৬-১৮৩১)। ১৮২০ সাল হতে সৈয়দ আহমদ আরবের ওয়াহাবিদের অনুকরণে ধর্মীয় সংস্কারের বাণী প্রচার শুরু করেন।... বহু মুসলিম তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। অনুগামীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সৈয়দ আহমদ একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এ উদ্দেশ্যে চারজন খলিফা নিযুক্ত করেন। তার এ ধর্মীয় ও সংস্কার আন্দোলনই 'ওয়াহাবি আন্দোলন' নামে পরিচিত লাভ করে।” “আল্লাহ্ সত্য বুঝার তাওফীক দান করুন-আমীন।'
২য়
জীসম উদ্দিন, প্রফেসর'স প্রকাশন ৩৭/১ দোতলা, বাংলাবাজার ঢাকা ১১০০ কর্তৃক প্রকাশিত, সূবর্ণ প্রিন্টার্স ৩/ ক খ পাটুয়াটুলী লেন ঢাকা ১১০০ কর্তৃক মুদ্রীত ও বর্ণালী বইঘর ৫৩ নীলক্ষেত ঢাকা ১২০৫ এর পরিবেশনায় ২০তম সংস্করণ, জুন-২০১৯, ‘প্রফেসর'স, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন সহায়িকা” গ্রন্থের ৫৪৭নং পৃষ্ঠায় ‘উপমহাদেশে বিভিন্ন বিদ্রোহ ও সংস্কার আন্দোলন' শিরোনামে লিখা হয়েছে- ওয়াহাবী আন্দোলন- “ওয়াহাবী কথাটি যার নাম থেকে এসেছে- সৌদি আরবের মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব (১৭৯৩-১৭৯৩)। মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব যে দেশের অধিবাসী-সৌদি আরবের নজদের। 'ভারতবর্ষে ওয়াহাবী মত ও আদর্শ প্রচারের পথিকৃত ছিলেন- সৈয়দ আহমদ বেরেলভী।
৪র্থ
মুহাম্মদ জাকির হোসেন সি:প্রভা: রাষ্ট্র বিজ্ঞান বি: ‘কুওয়াতুল ইসলাম কামিল মাদরাসা কুষ্ঠিয়া কর্তৃক রচিত ও সম্পাদিত ও প্রকৌ: মেহেদী হাসান লেকচার পাবলিকেশন্স লিঃ ৩৭ নর্থ ব্রুক হল রোড বাংলাবাজার ঢাকা ১১০০ কর্তৃক প্রকাশিত, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে আলিম শ্রেণীর পাঠ্য পুস্তকরূপে প্রণীত- *“আলিম পৌরনীতি ও সুশাসন (দ্বিতীয়পত্র)” গ্রন্থে ৮৬ নং পৃ. হাজী শরীয়তুল্লাহ্ (১৭৮১-১৮৪০) শিরোনামে লিখা হচ্ছে- “শরীয়তুল্লাহ্ অল্প বয়সে মক্কায় গমন করেন। সেখানে প্রায় ২০ বছর অবস্থান করে ১৮১৮ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। মক্কায় তিনি ওয়াহাবী আন্দোলনের নেতা' শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ ও সৈয়দ আহমদ বেরেলভীর চিন্তাধারা দ্বারা অনুপ্রানিত হন।”
৫ম
মোঃ খালিদুজ্জামান ও মো: আমান উল্লাহ্ মজুমদার রচিত এবং মো: ওমর আজম কর্তৃক সম্পাদিত, নিউ ফর্মূলা পাবলিকেশন্স ৩৮/২ খ পি.কে. রায় রোড (তাজমহল মার্কেট) বাংলা বাজার ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (অনার্স ৩য় বর্ষের পরীক্ষা সহায়ক গ্রন্থ) পৃ. নং ২৫৭,
প্রশ্ন-২, এর উত্তরে- “ওহাবী অর্থ নব জাগরণ। আরবে আব্দুল ওহাব নামে এক ধর্মপ্রাণ মুসলমান ব্যক্তি ( ১৭০৩-১৭৮৭) ইসলাম ধর্মের সংস্কারের জন্য এক আন্দোলনের সুত্রপাত করেন। তার প্রতিষ্ঠিত সম্প্রদায় ও অনুসারীরা ওহাবি নামে পরিচিত। উনিশ শতকের প্রথম দিকে ভারতে ওহাবী আন্দোলনের সূচনা হয় এবং এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রায়-বেরিলীর সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী।”
৬ষ্ঠ
কে.এম. জি রহমান পো, তালতলা বাজার, নোয়াখালী কর্তৃক লিখিত কাজী আনিসুর রহমান, মনোলোভা ১৯ পরিবাগ সড়ক, রমনা, ঢাকা- ১২০৫ থেকে প্রকাশিত, রহমানিয়া লাইব্রেরী ৩১ নব রায়লেন ঢাকা-১ পরিবেশিত, ‘হযরত শাহজালাল ও শাহ পরান (রহ.) নামক পুস্তকে পৃঃ-১৫৭নং এ লিখিত “১৭৮৬ খ্রীস্টাব্দে সৈয়দ আহমদ বেরলভী ‘তরীকায়ে মোহাম্মদী' নামে একটি ধর্মীয় আন্দোলন শুরু করেন। সিলেটের উর্দু কবি আশরাফ আলী মজুমদারও ইহাতে যোগদান করেন। আরবের আবদুল ওয়াহাব নামক জনৈক প্রখ্যাত আলেম এই আন্দোলনের প্রধান হোতা ছিলেন বলিয়া ইহাকে ওহাবী আন্দোলনও বলা হয়।”
৭ম
বিদ্যাসাগর কলেজ কলকাতার প্রাক্তন অধ্যাপক জীবন মুখোপাধ্যায় লিখিত, ‘শ্রীধর পাবলিশার্স' ২০৯ বিধান সরণী কলকাতা ৭০০০০৬ কর্তৃক প্রকাশিত পশ্চিম বঙ্গ সিভিলসার্ভিস সহ বিভিন্ন পরীক্ষার সহায়ক গ্রন্থ ‘স্বদেশ, সভ্যতা ও বিশ্ব পূ:নং-৩৮০, ‘ওয়াহাবি আন্দোলন: শিরোনামে- “ওয়াহাবি আন্দোলন এর প্রকৃত নাম 'তারিখ-ই মহম্মদিয়া (তরীক্বায়ে মুহাম্মদিয়া)। অষ্টাদশ শতকে মহম্মদ বিন আবদুল ওয়াহব (১৭০৩-১৭৮৯) নামে জনৈক ব্যক্তি আরব দেশে ইসলাম ধর্মের অভ্যন্তরে এক সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন।
তার প্রবর্তিত ধর্ম সম্প্রদায় 'ওয়াহাবি’ এবং তার প্রচারিত ধর্মমত 'ওয়াহাবি বাদ' নামে পরিচিত। ভারতে এই আন্দোলনের সূচনা হয় উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে। দিল্লীর বিখ্যাত মুসলিম শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ (১৭০৩-১৭৬২) ও তার পুত্র আজিজ (১৭৪৬ ১৮২৩) এই সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন।”
“শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ এই আন্দোলনের সূচনা করলেও ভারতে এই আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন উত্তর প্রদেশের রায় বেরেলির অধিবাসী ‘সৈয়দ আহমদ ব্রেলভি (১৭৮৬-১৮৩১)।... তিনি মক্কায় তীর্থে যান এবং সেখানে ওয়াহাবি মতাদর্শের সংগে সুপরিচিত হন। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ফিরে এসে তিনি ওয়াহাবি আদর্শে ভারতে 'শুদ্ধি' আন্দোলন শুরু করেন।
পুঃনং-৩৮১ বাংলাদেশে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন মির নিশার আলি বা তিতুমির (১৭৮২-১৮৩১)। উনচল্লিশ বছর বয়সে মক্কায় হজ্জ করতে গিয়ে তিনি সৈয়দ আহমদের সংগে পরিচিত হন ও ওয়াহাবি আদর্শ গ্রহণ করেন।” “ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ”
৮ম
সমর কুমার মল্লিক ও প্রশান্ত দত্ত রচিত এবং ইন্ডিয়ান প্রোগ্রেসিভ পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, রাজেন্দ্র দেব রোড কলকাতা-৭০০০০৭ থেকে প্রকাশিত দশম শ্রেণীর পাঠ্য বই- “ইতিহাস ও পরিবেশ চর্চা” পৃষ্ঠা নং ৪৭, শিরোনাম ‘তরীকা-ই মহম্মদিয়া” “ওয়াহাবি আন্দোলনের আসল নাম হল 'তরিকা-ই মহম্মদিয়া (মহম্মদ নির্দেশিত পথ)। ওয়াহাবি শব্দটি আরবীয় সংস্কারক মহম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাব' এর নাম থেকে এসেছে। অষ্টাদশ শতকে মহম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাব নামে এক ব্যক্তি আরবে ইসলাম ধর্মের কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে প্রথম এক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাকে অনুসরণ করে ভারতীয় ওয়াহাবি সম্প্রদায়। উনিশ শতকের সূচনালগ্নে দিল্লির মুসলিম সন্ত শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ ভারতে এই আন্দোলনের সূচনা ঘটান। উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলির অধিবাসী সৈয়দ আহমদ ব্রেলভি ছিলেন ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত, যার নেতৃত্ব দেন মির নিসার আলি বা তিতুমির।”
৯ম
ড. কল্যান চৌধুরী ও আজিজুল বিশ্বাস রচিত, কল্যান কুমার ভট্টাচার্য ওরিয়েন্টাল বুক কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড ৫৬ সূর্যসেন প্রিন্ট কলকাতা ৭০০০০৯ থেকে প্রকাশিত দশম শ্রেণীর পাঠ্য বই “মাধ্যমিক ইতিহাস ও পরিবেশ” পুস্তকের পৃষ্ঠা নং ৪১। “ওয়াহাবি আন্দোলন” শিরোনামে- “বাংলা তথা ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী ইসলামিক পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন রূপে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা হয়। ভারতে হাজি ওয়ালিউল্লাহ্ এর নেতৃত্বে ওয়াহাবী আন্দোলনের সূচনা হলেও প্রকৃত প্রবর্তক ছিলেন ‘সৈয়দ আহমদ। বাংলাদেশে ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা ছিলেন তিতুমীর বা মীর নিশার আলী।”
১০ম
ড. মানস ভট্টাচার্য রচিত, শান্তি নাথ অধিকারী ৪ এ রমানাথ মজুমদার স্ট্রীট, কলকাতা-৭০০০০৯ কর্তৃক প্রকাশিত, দশম শ্রেণীর পাঠ্য বই ‘ইতিহাস ও পরিবেশ' পৃষ্ঠা নং ৪৯- ‘ওয়াহাবি আন্দোলন (তরিকা-ই মহম্মদিয়া) “অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে আরব দেশের মহম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব (১৭০৩-১৭৮৭) ইসলাম ধর্ম সংস্কারকল্পে যে আন্দোলন শুরু করেন, তা ওয়াহাবি আন্দোলন নামে চিহ্নিত। ভারতে এ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান উত্তর প্রদেশের রায়ব্রেলির মানুষ সৈয়দ আহমদ বারোলি। বারোলির সমসাময়িক বাংলার মির নিসার আলী (১৭৮২-১৮৩১) মক্কায় হজ্জ করার সময়ে বারোলির সঙগে পরিচিত ও প্রভাবিত হন। দেশে ফিরে তিনি ওয়াহাবি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান। নিসার আলি বাংলায় ‘তিতুমির' নামে বেশি পরিচিত। বাংলায় তার আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্ৰ ছিল বারাসাত অঞ্চল। বারোলির মতই তিনি তার আন্দোলনের নাম দেন “তরিকা-ই মহম্মদিয়া।”
১১
মাহবুবুর রহমান প্রণীত ও এম. মহসিন রুবেল মেরিট ফেয়ার প্রকাশন ১২ বাংলা বাজার (শিকদার ম্যানসন) ঢাকা ১১০০ থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের ইতিহাস (প্রচীনকাল...১৯৭১) পৃষ্ঠা নং ৩৬৭। শিরোনাম *ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলন’- “ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রায়বেরিলির সৈয়দ আহমদ শহীদ। তিনি ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে বালাকোটের যুদ্ধে শিখ সেনাপতি শের সিং এর কাছে সৈয়দ আহমদের বাহিনী পরাজিত হয়। তিনি নিহত হন। তার মৃত্যুর পরও ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলন থেমে থাকেনি।”
১২
মাহবুবুল হক সম্পাদিত, মো: মঞ্জুর হোসেন জোনাকী প্রকাশনী ৩৮ বাংলা বাজার ঢাকা থেকে প্রকাশিত, আল মাহদী প্রকাশনী ঢাকা এবং কথাকলি ১৮ মোমিন রোড চট্টগ্রাম কর্তৃক পরিবেশিত ‘বাংলা ও বাংলাদেশ সমাজ ও ইতিহাস' পুস্তকের ১৩১ নং পূ. 'ওয়াহাবি আন্দোলন' শিরোনামে
উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা হয়। এর সূত্রপাত আরবে। ইসলাম ধর্ম সংস্কারের উদ্দেশ্যে মহম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব ১৮ শতকে দ্বিতীয়ার্ধে আরবে এই আন্দোলন শুরু করেন। ভারতে এই আন্দোলনের অনুসারী ও প্রবর্তক রায় বেরিলির সৈয়দ আহমদ। বাংলায় ওয়াহাবী আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন মির নিসার আলী, তিতুমির নামে যিনি বিশেষ পরিচিত।
১৩
কথা সম্ভার ৩৮/২-ক বাংলা বাজার ঢাকা থেকে প্রকাশিত, আল ফয়সাল প্রিন্টিং প্রেস ৩৪ শ্রীশা দাস লেন ঢাকা থেকে মুদ্রিত, ‘কাজী আবদুল ওদুদ রচিত গ্রন্থ ‘বাংলার জাগারণ” পৃ. নং ১২২-এর শেষ দিক থেকে-“অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে গোটা মুসলমান জগতে কিছু নতুন চেতনা দেখা দেয় যে মতবাদের সাহায্যে, তার নাম ওয়াহাবিবাদ।
আরব বীর আবদুল ওয়াহাবের নাম থেকে এই মতের নামকরণ।” (১২৩ পৃ. শুরুতে) ভারতে এই নতুন মতবাদের প্রথম শক্তিশালী প্রবর্তক উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলির শাহ সৈয়দ আহমদ।... বাংলাদেশেও একজন ওহাবি নেতা দেখা দেন। তিনি সুবিখ্যাত তিতু মিয়া বা তিতুমির।
১৪
মুহাম্মদ রুস্তম আলী রচিত, ইসলামীক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘উপমহাদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও দেশ বিভাগের প্রেক্ষাপট' পৃ. নং ১৮৫। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের ওহাবী আন্দোলনের নেতা সৈয়দ আহমদ শহীদ, শহীদ তিতুমির... আব্দুল্লাহ্ ও শের আলী প্রমুখ। (বিশেষভাবে উল্লেখ্য)। পৃ. নং-১৯৫:,
তাছাড়া সৈয়দ আহমদ শহীদ সূচিত এবং তার পরবর্তী ওয়াহাবী নেতৃবৃন্দ কর্তৃক পরিচালিত বৃটিশবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে বাংলার মুসলমানদেরও যে ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তাও বিশেষভাবে উল্লেখ্য। '
১৫
পাণিনী প্রিন্টার্স ১৪/১ তনুগঞ্জলেন, সুত্রাপুর ঢাকায় মুদ্রিত, মনিরুল হক কর্তৃক ‘অনন্যা’ ৩৮/২ বাংলা বাজার ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘এস.আর. আখতার মুকুল রচিত “কোলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী' পৃ.নং ৮৬/৮৭। শিরোনাম-‘ভারত উপমহাদেশে ওহাবী আন্দোলনের গোড়া পত্তন।
ঐতিহাসিক তথ্য থেকে দেখা যায়, ওহাবী নেতা সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮২২ সালে হজ্ব যাত্রা করেন। এ সময় তিনি মরহুম আল্লামা আবদুল ওয়াহাব এর বেশ কজন অনুসারীদের সংস্পর্শে আসেন এবং তার চিন্তাধারা পরিধির ব্যপ্তি ঘটে।
অতঃপর সৈয়দ আহমদ ১৮২৩ সালের অক্টোবরে দেশে প্রত্যাবর্তন করে ইসলামী দর্শনের যে ব্যাখ্যা দান করেছেন তাকে 'তরীকা-ই মোহাম্মদিয়া' বা মোহাম্মদের নীতি বলে অভিহিত করেন।... তিনি শিখদের বিরুদ্ধে জেহাদে অংশ গ্রহণের আহ্বান জানান। এজন্যে বিভিন্ন এলাকায় কট্টর রক্ষণশীল ওহাবী মতাদর্শ প্রচার ছাড়াও অসংখ্য বাঙালি মুসলমান যুবককে মুজাহিদ হিসেবে সংগ্রহ করেন।
অনেক গবেষক দ্বিমত পোষণ করলেও এ সম্পর্কে প্রখ্যাত ইংরেজ গবেষখ ডব্লিউ হান্টার রচিত 'আওয়ার ইন্ডিয়ান মুসলমানস' গ্রন্থে বর্ণিত মন্তব্যটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়।'
'পূর্ব বংগের প্রায় প্রত্যেক জেলা থেকে ওহাবী প্রচারকেরা সাধারণতঃ বিশ বছরের কম বয়সের শত শত সরলমতি যুবককে অনেক সময় তাদের পিতামাতার অজ্ঞাতে, নিশ্চিত প্রায় মৃত্যুর পথে সঁপেদিয়েছে। শত সহস্র কৃষক পরিবারে তারা দারিদ্র ও শোক প্রবিষ্ঠ করিয়েছে। আর আশা-ভরসাস্থল যুবকদের সম্বন্ধে পরিজনের অন্তরে একটা দুর্ভাবনা এনে দিয়েছে।
যে ওহাবী পিতার বিশেষ গুণবান অথবা বিশেষ ধর্মপ্রাণ পুত্র বিদ্যমান তিনি জানেন না, কোন সময়ে তার পুত্র গ্রাম থেকে উধাও হয়ে যাবে। এইভাবে যেসব যুবককে উধাও করা হয়েছে তাদের অনেকেই ব্যাধি, অনাহার অথবা তরবারির আঘাতে বিনষ্ট হয়েছে।' (অনুবাদ আবদুল ওদূদ)
১৬
ইংরেজ লেখক 'চার্লস অ্যালেন কর্তৃক রচিত ও সরকার মঞ্জুর আলী অনুদিত এবং রিয়াজখান 'রোদেলা প্রকাশনী' ইসলামী টাওয়ার (২য় তলা) ১১/১ বাংলা বাজার ঢাকা ১১০০ থেকে প্রকাশিত 'গডস টেরোরিস্ট' (ওয়াহাবি ধর্মীয় মতবাদ এবং আধুনিক জিহাদের গুপ্তমূল পথ) পুস্তকের অধ্যায় তিন, পৃ নং ৮৫। “ইমাম মাহদির আবির্ভাবের মিথ্যে প্রত্যাশা" শিরোনামে--
১৮২০ সাল থেকে ভারতের কিছু মৌলবি নিজেদেরকে বেরিলির সৈয়দ আহমদের শিষ্য বলে ঘোষণা করেন যাকে তারা আমিরুল মোমিনীন ইমান হুম্মান (ইমাম হুম্মাম) (বিশ্বাসীদের প্রধান নেতা) নামে অভিষিক্ত করেন। এই দেশে ওয়াহাবী ধর্মমত প্রচার শুরু করেন।
তারা সাধারণের কাছে প্রচার করেন যে হিন্দুস্থান এখন দারুল হারাব (অর্থাৎ কাফিরদের দেশ) সুতরাং সকল ভাল মোহাম্মদীর কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটা কর্তব্য হিসেবে দেখা দিয়েছে।”
মৌলভী সৈয়দ এমদাদ আলী খান, এ্যান এপিটোম অব দ্য হিস্ট্রি অব দ্য ওয়াহাবী-১৮৭১।
পৃষ্ঠা নং-১০৭, ‘ভারতের দূরবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে দারউল ইসলামের বানী ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সৈয়দ আহমদের প্রচেষ্ঠার করুণ পরিণতি ভারতের অন্যান্যদের দৃষ্টির অন্তরালে থাকেনি। তার শিক্ষা সুন্নি ও শিয়া উভয় সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করেছে।
সৈয়দ আহমদ ধর্ম সংস্কারের প্রচারকের থেকে অধিক কিছু হয়ে গেলেন। ১৮৩১ সালের গ্রীস্মকালে তার শহীদ হওয়ার সংবাদ দেশের সকল স্থানের মুসলমানরা ভীতির সাথে গ্রহণ করল। বাংলায় এটি একটি উত্তেজক প্রণোদনা যা ওয়াহহাবি বিদ্রোহ সংঘটিত করেছিল।'
“এখানে একটি বিষয় খুবই প্রণিধানযোগ্য যে, ইতিহাস প্রণেতা সবাই কিন্তু ওয়াহাবি, কেউ সুন্নী বা শিয়া নয়। তবে এদের দু'ধরনের দেখা যায়।
১. কেউতো আছেন অত্যন্ত ফখর এবং গর্বের সাথে সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীকে ওয়াহাবিদের নেতা, প্রতিষ্ঠাতা ও প্রচারক হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন।
২. আবার কেউ আছেন বড্ড হুঁশিয়ার। তারা জানেন যে, ওয়াহাবি ও ওয়াহাবিয়্যাত ইসলামের ইতিহাসে এক ঘৃণিত, নিন্দিত ও কলঙ্কময় অধ্যায়।
ঠিক যেমন মুখোশধারী সুন্নী বালাকূটি সিলসিলার দাবিদার এসব ‘মোল্লারা' জানে। তাই এ দ্বিতীয় প্রকারের লিখকেরা একদিকে ভারতীয় ওয়াহাবিদের ইতিহাস রচনায় সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী, তিতুমিরদের নাম এনেছে; কিন্তু সাথে প্রতীয়মান করাতে চেয়েছে-“না, আরবের ওয়াহাবি আর ভারতের ওয়াহাবি এক নয়।”
১৭
ভারতের মুসলমান ও স্বাধীনতা আন্দোলন' লিখক ড. মুহাম্মদ ইনাম-উল-হক, প্রকাশক-মোরশেদ আলম, জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন, ৬৭ প্যারীদাস রোড বাংলা বাজার ঢাকা। পৃ. ৩/৪, “তরিকা-ই মুহাম্মাদিয়া বা তথাকথিত ওয়াহাবি আন্দোলন”--‘তথাকথিত ওহাবি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঊনবিংশ শতাব্দিতে এ উপমহাদেশে মুসলমানদের জাগরণের সূচনা হয় বলা যেতে পারে।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে উনিশ শতকের ইংরেজদের বিরুদ্ধে ওয়াহাবি মুসলমানদের যুদ্ধ প্রচেষ্টা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।' কারো কারো মতে ভারতে জনসাধারণের দ্বারা সংগঠিত ও পরিচালিত সর্বপ্রথম আন্দোলন ওয়াহাবিদেরই।'
ভারতে পরিচালিত এই আন্দোলনকে ওহাবি আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় কিনা তা আলোচনা সাপেক্ষ।'
“আমাদের বক্তব্য হচ্ছে-এখান থেকে শুরু করে সামনে কিছু তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন তার অন্তরের কপটতার লক্ষণ। ওহাবি-ওহাবি বারবার উল্লেখ করার পরেও এ ধরনের উক্তি হাস্যকর বৈকি। "
১২নং পৃ. দেখুন- শাহ্ ইসমাইল এবং মাওলানা আব্দুল হাই দু'জনই বিদ্যাবুদ্ধিতে সৈয়দ আহমদের চেয়ে বহুগুণে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। শাহ্ ইসমাইল ছিলেন আবেগপ্রবণ, এক রোখা, উগ্র মেজাজের লোক। 'ওহাবি' সংস্কার প্রচেষ্টায় যে উগ্রতা দেখা দিল এবং যা ওয়ালিউল্লার নীতির ব্যতিক্রম ছিল এ জন্যে ইসমাইলের প্রভাবই বেশী দায়ী।
পৃ. নং ১৩. * ১৮১৮/১৯ সালে রচিত সিরাতুল মুস্তাকিম নামক গ্রন্থকে “ভারতীয় ওহাবিদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যবর্ণিত ঘোষণাপত্র বলা যেতে পারে।' “জী! আমরাও তো তাই বলছি-'নামাযে রাসূলের প্রতি খেয়াল যাওয়ার চাইতে গরু-গাধার খেয়াল অনেক ভাল এ ধরনের বেয়াদবিতে পূর্ণ পুস্তকের নাম 'সিরাতুল মুস্তাকিম' একেই বলে ‘অন্ধ ছেলের নাম পদ্মলোচন'। হাঁ, এটা 'ওয়াহাবি' বলেই তো সম্ভব হয়েছে।”
১৮
সৈয়দ নুরুল হক রচিত, আর সি, পাল ২৬ বাংলা বাজার, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত ‘ব্রিটিশ ভারতে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক উন্নয়ন' গ্রন্থে পৃ. নং ১৭২-৭৩। ‘ওয়াহাবি আন্দোলনের পটভূমি' শিরোনামে---‘ওয়াহাবি আন্দোলন একটি অতি শুদ্ধাচারী ও চরমপন্থি মতবাদ।
এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব নজদী অষ্টাদশ শতাব্দীর লোক। বর্তমান সাউদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশা ইবনে সউদ তার এ মতবাদ গ্রহণ করেন এবং এ মতবাদ প্রসার ও প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন কিন্তু ওয়াহাবি আন্দোলন ইসলাম বিরোধী অনেক চরমপন্থা গ্রহণ করে ইসলামের অনেক সুমহান ঐতিহ্য ধ্বংস করে দিয়েছে।
তারা অনেক মনগড়া মতবাদ তাদের বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা আদৌ সমর্থনযোগ্য নয়।”
*অতঃপর লিখক কিছু সত্য ঘটনাবলি উপস্থাপন করেছেন। উনার বর্ণনাগুলো লক্ষ্যণীয়।
“উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ওয়াহাবি আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ে ভারতে এবং বাংলাদেশে। (তবে তা আরবের ওয়াহাবিদের মত নয়। এ আন্দোলন ছিল ইসলামের সংস্কার আন্দোলন। এর মধ্যে খাঁটি ইসলামের উপদান ছিল।
আরবের মত মধ্যযুগীয় বর্বরতা ছিলনা তার মধ্যে।) উপমহাদেশে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রবর্তক ছিলেন সৈয়দ আহমদ ব্রেলভি এবং বাংলায় তার শিষ্য মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমির। একজন শিখদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে শহীদ হন এবং অপরজন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হন।
তবে সৈয়দ আহমদই উপমহাদেশে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ। (তার সম্পর্কে হাদিসে ইঙ্গিত ছিল, 'তিনি আহমেদ, তিনি আমার বংশধর, তিনি আসবেন। (লানতুল্লাহি আলাল কাযেবীন) এ জন্যে অনেকে তাকে ত্রয়োদশ শতকের মুজাদ্দেদ ও ইমাম বলে স্বীকার করেন। তার সীলমোহরে নামাঙ্কিত ছিল 'ন্যায়পরায়ণ আহমদ।'
‘আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে যে, লিখকের বক্তব্য 'আন্দোলনের ঢেউ ভারতে আছড়ে পড়েছে বুঝা গেল এটা ভারতে জন্ম নেয়া আন্দোলন নয় দূর আরবে সৃষ্ঠ ওয়াহাবিয়্যাতকেই আমদানী করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত: ‘আরবের ওয়াহাবি ভারতের ওয়াহাবি এক নয়' কথাটা আমরাও মানি।
কারণ আরবের ওয়াহাবি উরয়ান মানে স্পষ্ট। যেহেতু তারা তাদের প্রবর্তককে ইমাম মাহদি, প্রতিশ্রুত ইমাম, মুজাদ্দিদ কিছুই মানেনি। কিন্তু ইনারাতো মাশাআল্লাহ্ এক নম্বর মুখোশধারী। বাইরের চাকচিক্য থেকে চোখ ফিরিয়ে ভেতরেরটা জানতে হলে ‘সিরাতে মুস্তাকীম' ‘তাক্বভিয়াতুল ঈমান' (যার ভেতরে ৭০এর অধিক কুফরী উক্তি রয়েছে) ঠিক যেন ‘যিয়াবুন ফী সিয়াবিন।’
১৯
ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশনা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত, মোহাম্মদ মোদাব্বের রচিত' 'ইতিহাস কথা কয়' গ্রন্থের ১১৭ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। ‘উনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে মুসলমানরা ভারতের সকল অঞ্চলে বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়েছিল। আর এই সংগ্রামের অগ্র নায়ক বেরিলীর সৈয়দ আহমদ ছিলেন ওয়াহাবী আন্দোলনের একজন নেতা।
"সৈয়দ আহমদ সবেমাত্র মক্কা থেকে ফিরেছেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন নূতন মন্ত্র ওয়াহাবী মতবাদ। আরবের ধর্মীয় নেতা আব্দুল ওয়াহাবের নামানুসারে এই ওয়াহাবী আন্দোলনের নামকরণ করা হয়। ‘পিন্ডারী কৃষক সৈন্য দলের সেনাপতি রূপে তিনি বৃটিশবিরোধী সংগ্রাম পরিচালনা করেন। শেষ পর্যন্ত তাকে পরাজয় বরণ করতে হয়। তিনি তখন মক্কায় চলে যান।' 'মক্কা থেকে ফিরে সৈয়দ আহমদ ওয়াহাবী মতবাদ প্রচার করতে শুরু করেন।
২০
‘তাছহীহু খাতাইন তা রীখিয়্যিন হাওলাল ওয়াহহাবিয়্যাহ' আরবী গ্রন্থ, লিখক ড. মোহাম্মদ বিন সা'দ আল শুয়াইঈর। বাংলা অনুবাদ মোহাম্মদ রকীবুদ্দীন আহমাদ হুসাইন, ইসলামী গবেষক ও ফাতওয়া বিষয়ক প্রধান কার্যালয় রিয়াদ সউদী আরব থেকে প্রকাশিত, (জেদ্দা এয়ার পোর্টে বিনা মূল্যে বিতরণকৃত), পৃ. ১০৯।
ইংরেজগণ তাদের শ্রেষ্ঠ ও গর্বের উপনিবেশ সম্পদশালী ভারতবর্ষে শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাবের সালাফী আন্দোলনের প্রভাব ও প্রসার উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করে। বিশেষ করে যখন ভারতবর্ষের বহুলোক মুসলিম ধর্ম প্রচারক আহমদ ইবনে ইরফান (আহমদ বাচিলী)ও তার অনুসারীগণের হাতে এই সালাফী দাওয়াত গ্রহণ করে।” লিখক এখানে তার সমর্থনে আরো তিনটি পুস্তকের উদ্ধৃতি দিয়েছেন।
২১
মৌলানা মুহাম্মদ ইসমাইল পানিপথি কর্তৃক সংকলিত 'মাক্বালাতে স্যার সৈয়দ' অর্থাৎ স্যার সৈয়দ আলীগড়ির বাণীসম্ভার, পৃ. নং-১৩৯/৪০
چنانچہ 1824ء میں وھابیوں نے پہاڑیوں میں جا کر قیام کیا اور انہوں نے اس بات کا قصد کیا کہ سکھوں پر ہم لوگ جہاد کریں اور شھید ہوں لیکن چوں کہ پہاڑی قومیں ان کے عقائد کے مخالف تھیں اس لئے وہ وھابی ان پہاڑیوں کو ہر گز اس بات پر راضی نہ کر سکے کہ وہ انکے مسائل کو بھی اچھا سمجتھے۔مگر البتہ چونکہ وہ سکھوں کے جوروستم سے نہایت تنگ تھے اس سبب سے وہ وھابیوں کے اس منصوبہ میں بھی شریک ہو گئے کہ سکھوں پر حملہ کیا جاوے اور اخر کار وھابیوں اور پہاڑیوں نے متفق ہو کر سکھوں پر حملہ بھی کیا۔ لیکن چونکہ یہ قوم مذھبی مخالفت میں نہایت سخت تھے اس سبب سے اس قوم نے اخیر میں وھابیوں سے دغا کر کے سکھوں سے اتفاق کر لیا اور مولوی محمد اسماعیل صاحب اور سید احمد کو شہید کیا ۔
১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে ওয়াহাবিরা (সৈয়দ আহমদ ব্রেলভির বাহিনী) (সীমান্তের পাহাড়িদের এলাকায় অবস্থান নিল। তারা চাইল (যৌথভাবে) শিখদের বিরুদ্ধে জিহাদ করব আর (মরলে তো) শহীদ হব। কিন্তু যেহেতু পাহাড়ি (সুন্নী হানাফি) সম্প্রদায়গুলো ওয়াহাবিদের আক্বীদার বিপরীত ছিল সেহেতু এই ওয়াহাবিরা পাহাড়িদেরকে তাদের আক্বিদা মানতে রাজী করাতে পারেনি।
অবশ্য যেহেতু তারা শিখদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল, তাই সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করতে সম্মত হল এবং একত্রিতভাবে শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করল; কিন্তু যেহেতু তারা আক্বিদা বিরোধীদের ব্যাপারে কঠোর ছিল। তাই (ওয়াহাবিদের দূরভিসন্ধী বুঝতে পেরে বাধ্য হয়ে) তাদের ধোকা দিয়ে শিখদের সাথে মিলে মৌ: ইসমাইল ও সৈয়দ আহমদকে শহীদ (হত্যা) করল।'
২২
الشيخ محمد بن عبد الوهاب
“শায়খ মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাব'
عقيدته السلفية ودعوته الاصلاحيه وثناء العلماء عليه
তার সালাফী আক্বীদা ও সংশোধনী দাওয়াহ এবং তার ব্যাপারে আলেমদের প্রশংসাবলি লিখক
العلامة الشيخ احمد بن حجربن محمد آل ابوطامى آل بن علي
আল্লামা শায়খ আহমদ বিন হাজর বিন মুহাম্মদ আল-ই আবু ত্বামী আল-ই বিন আলী
(قاضي المحكمة الشرعية بقطر)
বাদশা ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ-এর নির্দেশে
প্রকাশিত ও বিনা মূল্যে বিতরণকৃত, গ্রন্থটির পৃষ্ঠা নং-৭৮/৭৯
وكماغزت الدعوة الوهابية السودان كذالك غزت الدعوة بعض المقاطعات الهندية - بواسطة احد الحجاج الهنود ـ وهو السيد احمد - وقد كان هذا الرجل من امراء الهند، وذهب الى الحجاز لاداء فريضة الحج بعد ان اعتنق الاسلام ، سنة تدعدم فلما التقى بالوهابيين، في مكة اقتنع بصحة مايدعون اليه واصبح من دعاة المذهب الذين تملكهم الايمان ، وسيطرت عليهم العقيدة
- ولما عادسنة دم الى وطنه في الهند بجهة البنغال ، وجد ميدانا صالحا للدعوة، بين سكان المنطقة من الهنود المسلمين الذين اختلطت عقائدهم وتقاليدهم الدينية، بالكثير من عقائد الهندوس وعوائدهم
فابتدأ الدعوة في مدينة (بتين) ودعا اخوانه المسلمين ليؤمنوا بمبادئ الاسلام الصحيحة، ويتركوا البدع والعقائد الهندوسية التي كانت شائعة بينهم، وبعد مرحلة من الجهاد، استطاع هؤلاء المسلمون الوهابيون ان يقيموا الدولة الاسلامية على أساس من المبادئ الوهابية بجهة البنجاب تحة حكم الداعيه السيد احمد
ولم تلبث هذه الدولة طويلا حتى قضى عليها الاستعمار الانكليزي في العقد الرابع من القرن التاسع عشر
ولكن الدعوة الوهابية ظلت قائمة هناك على يدخلفاء السيد احمد من بعده ، ولم يستطع المستعمرون ان ينالوا منها - ولايزالواالكثيرون من سكان هذه المناطق يدينون بالاسلام على المذهب الوهابي
অর্থাৎ যেভাবে সূদানে ওয়াহাবি মতবাদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ঠিক সেভাবেই কিছু কিছু এলাকায় এ মতবাদ প্রচারিত হয়েছে একজন ভারতীয় হাজীর বদৌলতে। আর তিনি সৈয়দ আহমদ। ইনি হিন্দুস্থানের একজন নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তি। তিনি ফরজ হজ্ব আদায় করার জন্যে হেজাযে গিয়েছিলেন ‘ওয়াহাবি ইসলাম' প্রতিষ্ঠা লাভের পর ১৮১৬ খৃস্টাব্দে। অতঃপর যখন মক্কায় ওয়াহাবিদের সাথে তার সাক্ষাত হল তাদের ওয়াহাবি দাওয়াতকে তিনি মনেপ্রাণে বিশুদ্ধ বলে মেনে নিলেন এবং ওহাবি আক্বীদা-বিশ্বাস যাদের মনেপ্রাণে বদ্ধমূল হয়ে গেছে তিনি তাদেরই একজন দা-ঈ (মুবাল্লিগ বা প্রচারক) বনে গেলেন।
আর যখন ১৮২০ সালে নিজ দেশে বাংলার এলাকা দিয়ে ফিরে আসলেন তখন ঐ এলাকার ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে ওয়াহাবিয়্যাত প্রচারের জন্য এক উপযুক্ত ক্ষেত্র পেয়ে গেলেন। যাদের ধর্মীয় আক্বীদা ও আমলগুলো বেশীরভাগ ভারতীয় হিন্দুয়ানী আক্বীদা ও পূজা/পার্বনের সাথে মিশ্রিত হয়ে গিয়েছিল।
অতঃপর তিনি পাটনা শহর থেকে ওয়াহাবিয়াতের দাওয়াত আরম্ভ করলেন। তিনি তার মুসলিম ভাইদেরকে বিশুদ্ধ ইসলামের (ওয়াহাবি মতাদর্শ) নিয়মকানুনগুলো মানতে এবং বিদ'আত পরিহার করতে ও হিন্দুয়ানী আক্বীদা-আমল যা তাদের মাঝে প্রচলিত আছে বর্জন করতে আহ্বান করলেন।
দীর্ঘদিন কঠোর পরিশ্রমের পর এই ওয়াহাবি মুসলমানেরা সৈয়দ আহমদের নেতৃত্বে পাঞ্জাব এলাকায় ওয়াহাবিয়্যাতের নিয়ম কানুনের উপর ভিত্তি করে একটি (ওয়াহাবি) ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। তবে এই ওয়াহাবি হুকুমত দীর্ঘদিন স্থায়ি হয়নি।
সাম্রাজ্যবাদি ইংরেজরা ১৯০৪ সালে তাদের উপর কব্জা করে বসে। তবে সৈয়দ আহমদের পরে তার খলিফাদের দ্বারা ওয়াহাবিয়্যাতের এ দাওয়াত ও মতবাদ এখনও বহাল আছে। সাম্রাজ্যবাদি শক্তি এদের মূলোৎপাটন করতে পারেনি।
এ সমস্ত এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখনও ওয়াহাবি মতাদর্শের ভিত্তিতেই তাদের ইসলাম ধর্ম পালন করে যাচ্ছে।
২৩
ইমামে আহলে সুন্নাত গাযীয়ে দ্বীন-মিল্লাত মুজাহিদে আজম আশেকে রাসূল আল্লামা সৈয়দ আযীযুল হক শেরে বাংলা আলকাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির রচিত-
ফার্সী কাব্য গ্রন্থ ও মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান অনুদিত 'দিওয়ানে আযীয়' শরীফে মহান আল্লাহর হামদ ও রাসূলে কায়েনাত আলাইহি আফজলুচ্ছালাওয়াত ওয়া আতাম্মুত্তাসলিমাত ও বিভিন্ন আহকাম ও মাসায়েল এর সমাধান সহ প্রায় ২৬২জন আউলিয়ায়ে কেরামের মানক্বাবাত লিখেছেন। এখানে ‘মুর্শিদের বিবরণ' শিরোনামে রয়েছে:-
علم ظاہر لازمی دال از براۓ مرشداں۔ حافظ قران فقط مر شد نباشد بیگماں
প্রকাশ্য ইলম মুর্শিদের জন্য অপরিহার্য জানো।
নিঃসন্দেহে নিছক হাফেযে কোরআন মুর্শিদ হতে পারে না।
بیعت علماء بدستش نیست جائز بیگماں + اند راں قول الجمیل آنچناں مرقوم داں _
তার হাতে আলেমদের বায়আত গ্রহণ করা নিঃসন্দেহে না-জায়েয।
‘কুওলুল জামীল’-এ এ. কথাটা এভাবে বর্ণিত হয়েছে।
ونہ رہبر دیگر شود + اس سحن باور کند آنکس که او عاقل بود آنکه خود گمراه چگونه ر
যে ব্যক্তি নিজে পথভ্রষ্ঠ হয় সে কিভাবে অপরের পথ প্রদর্শক হবে?
এ কথা বিশ্বাস করবে ওই ব্যক্তি যার বিবেক আছে।
شاہ ولی اللہ محدث دہلوی گفته چیناں + تربتش را باغ جنت سازاے رب جہاں
শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলভী এভাবে বলেছেন।
হে রাব্বুল আলামীন! তাঁর কবরকে জান্নাতের বাগানে পরিণত করো।
سید احمد بریلوی راکٹوں بشنو بیاں + کرد گستاخی بشان سرور پیغمبراں
এখন সৈয়দ আহমদ বেরলভীর কথা বলছি, শোনো!
লোকটি নবীকুল সরদারের সাথে বে-আদবী করেছে।
در صراط المستقیم ش یک نظر کن ایواں + در بیان صرف ہمت سوۓ شیخ اے نوجواں
তার ‘সেরাতে মুস্তাকীম' কিতাবে, হে যুবক একটি বার দেখো! তোম
হে যুবক! শায়খের প্রতি ধ্যান করা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সে এ বে-আদবী করেছে।
نسبت آں سوۓ اسماعیل بوجہ کا تب ست + لیک ملفوظات آں جملہ زسید احمد ست
ওই কিতাবে ইসমাঈল দেহলভীর নাম (সম্পর্ক) লেখক হিসেবে।
কিন্তু সেটার সম্পূর্ণ বচন সৈয়দ আহমদ বেরলভীরই।
در ذخیر یہ کرامت آں چناں مسطور داں + از براۓ طالب حق اینقدر کافی بداں
লো যাখীরাহ-এ কারামত' এ এমনি লিপিবদ্ধ রয়েছে।
একজন সত্যানুসন্ধানীর জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ।
سلسلئہ کہ دراں سید احمد آمده + آن بریده از فیوضات محمد آمده
যে সিলসিলায় সৈয়দ আহমদ বেরলভী এসেছে,
সেটা হুজুর মুহাম্মদ মুস্তফা -এর ফয়য ও বরকত থেকে কর্তিত।
দেখুন কত স্পষ্ঠভাবে দলিল সহ বলে দিয়েছেন --- যে সিলসিলায়- সৈয়দ আহমদ বেরলভী রয়েছে সেটা রাসূলে পাক -এর ফয়যাত ও বারাকাত থেকে বঞ্চিত ও কর্তিত, কারণ সেতো গোস্তাখে রাসূল ছিল। এর উপর একজনের আপত্তি হল শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত আল্লামা শাহ্ সূফী নূর মুহাম্মদ নিযামপুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং মাওলান শাহ্ আবু বকর সিদ্দীকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এ দু'জনের প্রশংসা করেছেন। অতএব সিলসিলা কর্তিত কিভাবে হল?
এর জবাব হচ্ছে- প্রথমতঃ এ দু'জনের প্রশংসাকে সত্য এবং যথাযথ মানলে বেরলভী সাহেব সম্পর্কে যা বলেছেন তা মেনে নিচ্ছেন না কেন? দ্বিতীয়ত, শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি ছিলেন। ছাহেবে কাশফ ও কারামাত একজন আশেকে রাসূল কামেল ওলী। প্রশংসিত দু'জনের সিলসিলার হাক্বিক্বত সম্পর্কে নিঃসন্দেহে উনি জানতেন । ইসমাঈল দেহলভী ও ‘ছিরাতে মুস্তাকীম' এর প্রশংসায় যে ব্যক্তি পঞ্চমুখ কই তার প্রশংসা তো তিনি করেননি। অতএব ‘শেরে বাংলা' পক্ষপাতিত্ব করেছেন, এ ধরনের অপবাদ উনার বিরুদ্ধে অমূলক-অবান্তর ও হাস্যকর।
তৃতীয়ত, শাহ আল্লামা সুফী নুর মুহাম্মদ নিযামপুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন সরাসরি শাহ আব্দুল আযিয রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মুরীদ ও খলীফা। তিনি সৈয়দ আহমদ বেরেলভীর মুরীদও নন, খলীফাও নন। যেহেতু নিযামপুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বেরলভীর হাতে বায়আতে জিহাদ করেছিলেন বায়আতে ত্বরিকত নয়। এ তথ্য আল্লামা রিদওয়ানুল হক ইসলামাবাদী ওহাবী আন্দোলনের' ধারাবাহিক ইতিহাস' বর্ণনায় 'নজদী পরিচয়' শিরোনামাঙ্কিত পুস্তকে ১০৯, ১০ ও ১১ নং পৃষ্ঠায় সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। সিরাজনগর দরবার শরীফের পীর সাহেব আল্লামা আবদুল করিম মাদ্দাফিল্লুহুল আলী এটা ভিডিও আকারে প্রকাশ করার পরেও আপনারা সামেনা ওয়া আছায়না' অর্থাৎ না-মানার কসম করে বসে আছেন।
এক মওঃ বলে; সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে ওয়াহাবিয়াতের আমদানিকারক বলায় রাসূল নাকি আমার উপর না-রাজ হয়ে গেছেন। বলছি এত সততার ধারক হলে হুজুর শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির রওজায় গিয়ে প্রকাশ্য জনসমক্ষে বলেন না 'রাসূল আপনার উপর নাখোশ।" কারণ উনি তো সরাসরি 'গোস্তাখে রাসূল' বলেছেন। এক মোল্লা বলে 'সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে ওয়াহাবী বললে আমাদের বাপ-দাদাদের অবস্থা কেমন হবে। যেহেতু এখানে একমাত্র সৈয়দ আহমদ বেরলভীর সিলসিলাই আছে। ফার্মে পালিত এ মোল্লা হয়ত জানে না যে, চট্টগ্রামসহ পাক-বাংলা-ভারতে এমন হাযারো দরবার ও পীরানে ত্বরীকৃত রয়েছেন যাদের সিলসিলায় কোন গোত্তাখে রাসূল নাই।
আলহামদু লিল্লাহ্ আমাদের কোন ব্যক্তি এ কর্তিত বে-আদব সিলসিলায় নাই। আর কেউ ধোকার শিকার হয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও আমরা ওর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারি, রাসূলুল্লাহ্ -এর সাথে নয়। পড়ে দেখুন, ২৮নং পারা ৪নং পূঃ সূরা মুজাদালা শরীফের ২২নং আয়াত।
আরেক মোল্লার ভাষ্য হচ্ছে, আমার নাকি চুলকানি হয়েছে। আমরা জানি যাদের সিলসিলার মূল ব্যক্তি গোস্তাখে রাসূল তাদের কথায় কথায় বে-আদবি থাকাটাই স্বাভাবিক। বাস্তব কথা হচ্ছে মুখোশ পরে সুন্নী সেজে সরলমনা আসল সুন্নীদেরকে ধোকা দেয়া ছেড়ে দাও। আমাদের মাথা ব্যাথা থাকবে না।
মুখোশধারী নকল সুন্নী ধোকাবাজদের আরেকটি মারাত্মক প্রতারনা হচ্ছে ‘আ'লা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ইমাম আহমদ রেযা খান আলাইহির রাহমাতু ওয়ার রিদওয়ান' নাকি সৈয়দ আহমদ বেরেলভীকে বুযুর্গ মনে করতেন! নির্লজ্জ মিথ্যাচারিতারও একটি সীমা থাকে। তবে জেনে বুঝে এমন নগ্ন মিথ্যাচার এসব মুখোশধারীরাই করলো।
বাস্তব ঘটনা হচ্ছে! সৈয়দ আহমদ বেরেলভী যে ওয়াহাবিয়্যাতের আমদানিকারক, প্রচারক এবং ভারতবর্ষে এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তা এখন একালে নয় তখন সেকালেও সবাই জানত। তবে মুনাফিকদের ব্যাপারে আল্লাহ্ পাকের উক্তি ‘তু’জিবুকা আজসা-মুহুম'র প্রেক্ষিতে শেকল-ছূরতে বুযুর্গ বুযুর্গ বলে মনে হত বিধায় অনেক সময় অনেক সুন্নী মুসলমানও ধোকায় পড়ে যায়।
ঠিক এ বিষয়টাই আ'লা হযরতের দরবারে ইস্তিফতা (ফাতওয়া তলব) করা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি যদি সৈয়দ আহমদ বেরেলভীকে ওলী-বুযুর্গ মনে করে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কী বলা হবে? (মানে ঐ লোকটাকে ওয়াহাবী বলা যাবে কিনা? জবাবে আলা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন ঐলোক যদি 'সিরাতে মুস্তাকীম-এ বর্ণিত বাতিল এবং কুফরি বক্তব্যগুলোকে বাতিল এবং কুফরি বলেই জানে এবং মানে তাহলে সে ওয়াহাবিয়্যাতের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাই কেবল (শেকল-ছুরত-দেখে) সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে বুযুর্গ বললেই ওকে ওয়াহাবী বলা যাবেনা।
সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলো ‘আলা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে ওয়াহাবী বলেই জানতেন। এ বিষয়টা আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে পরামর্শ দেব, পীরে ত্বরীক্বত আল্লামা আবদুল করিম সিরাজনগী মা.জি.আ. রচিত 'যুগ জিজ্ঞাসার জবাব' পুস্তিকাটি ভালভাবে অধ্যয়ন করুন। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগুল মুবীন।
"আধার দেখে ভয় পেয়ে ভাই
পথ কখনো ছাড়বোনা
চলতে যদি করেছি শুরু
চলবই তবে, থামবোনা।”
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
হে আল্লাহ, আমাদের সকলের প্রাণ-প্রিয় হুজুর ও হাজার-হাজার আলম তৈরির কারিগর,
হাফেজ আল্লামা আসরাফুজ্জামান হুজুরকে দীর্ঘ হায়াত দান করুন। আমিন।
এরকম সুন্দর সুন্দর দলীল সহকারে ইসলামিক পোস্ট ও আর্টিকেল পেতে আমাদের পেইজে ঘুরে আসুন। সবাইকে অসংখ্যা ধন্যবাদ।
অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান, অন্তরালে হাফেজ মাওলানা আসরাফুজ্জামান,