অনুচ্ছেদ রচনা বাংলা-২য় পত্র - জে.এস.সি, এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি | Paragraph and Short Composition in Bangla

Mofizur Rahman
0

অনুচ্ছেদ রচনা বাংলা-২য় পত্র - জে.এস.সি,  এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি | Paragraph and Composition in Bangla

গুরুত্বপূর্ণ সব অনুচ্ছেদ একসাথে পিডিএফ আকারে দেওয়া হলো:-
জে.এস.সি, এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি পরীক্ষার জন্য
এবং অন্যান্য সকল শ্রেণির গুরুত্বপূর্ণ সকল অনুচ্ছেদ।
(toc)
অনুচ্ছেদ রচনা বাংলা-২য় পত্র - জে.এস.সি,  এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি | অনুচ্ছেদ রচনা উদাহরণ অনুচ্ছেদ রচনা pdf অনুচ্ছেদ রচনা লেখার নিয়ম, বাংলা নববর্ষ, সততা

অনুচ্ছেদ রচনা বাংলা ২য় -পত্র 

গ্রাম্য মেলা (Village Fair)

গ্রাম্য মেলা বাংলাদেশের গ্রামীণ ঐতিহ্য। আমাদের দেশে নানা উৎসব উপলক্ষে গ্রাম্য মেলার প্রচলন রয়েছে। বহুকাল ধরে এ দেশের মানুষ মেলার মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পণ্য ও তৈরি জিনিস বেচা-কেনা করে আসছে। এছাড়া মেলায় আনন্দ উপভোগেরও সুযোগ রয়েছে। এতে সার্কাস, যাত্রাপালা, সং, নৃত্যগীত, নাগরদোলা, লটারি, ঘোড়দৌড়, লাঠিখেলা ইত্যাদির আয়োজন থাকে। শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষই এগুলো উপভোগ করে আনন্দ পায়। সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের পাশাপাশি নানা রকম খেলনা ও পুতুল, মিষ্টিসহ নানা খাবারও পাওয়া যায় মেলায়। গ্রামের মেয়েরা বাহারি কাচের চুড়ি ও প্রসাধন সামগ্রী কিনতে মেলায় আনে। সাধারণত চৈত্রসংক্রান্তি, অষ্টমী, পারুন, শিবরাত্রি, মহররম, ঈদ, বুদ্ধ পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি উপলক্ষে গ্রাম্য মেলার আয়োজন হয়। এছাড়াও পীর-সন্ন্যাসীর নামে, নৌকাবাইচ, রথযাত্রা, দুর্গা বা কালীপূজা, নানা লৌকিক উৎসব উপলক্ষে ছোট-বড় মেলা বসে। নদীর পাড়ে, মাঠে, রাস্তার উপর বা পাশে, মন্দির বা মাজারের সামনে, হাট-বাজারের স্থানে এসব মেলা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এনে পণ্য সাজিয়ে মেলাকে আকর্ষণীয় করে তোলে। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মধ্যে আলাপ-পরিচয়, বন্ধুত্ব, এমনকি আত্মীয়তাও গড়ে ওঠে। একসঙ্গে গল্পগুজব, খাওয়া-দাওয়া, অনুষ্ঠান উপভোগ করার মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববন্ধন দৃঢ় হয়। ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে মানুষে মানুষে মিলনের ক্ষেত্রে গ্রাম্য মেলার জুড়ি নেই। এসব কারণেই গ্রামা মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখা অপরিহার্য। পুরনো লোকমেলাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা ও বিভিন্ন উপলক্ষে নতুন নতুন মেলার আয়োজন করা হলে গ্রামীণ জীবন যেমন উজ্জীবিত হবে, তেমনি উপকৃতও হবে। গ্রাম্য মেলা মানুষকে ক্ষুদ্র থেকে বৃহতের, সংকীর্ণতা থেকে উদারতার চেতনায় অভিষিক্ত করে।

নবান্ন উৎসব (Navanna Festival)

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষিসংশ্লিষ্ট অনেক উৎসক রয়েছে। নবান্ন উৎসব এর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণই কৃষিজীবী। কঠিন মাটিকে তারা তাদের শ্রম ও শক্তির দ্বারা নমনীয় করে সেখানে প্রাণের জোয়ার সৃষ্টি করে। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অসম্ভব খাটুনির পর খেতের সোনালি ফসল যখন তারা ঘরে তুলতে পারে তখন তাদের প্রাণেও আনন্দের বান ডেকে যায়। নবান্ন উৎসব এই আনন্দমুখর প্রাণেরই উৎসব। হেমন্তের শুরু থেকেই সারা বাংলার ঘরে ঘরে ফসল তোলার ধুম পড়ে যায়। তখন এই লোকউৎসব গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয়। উৎসবের দিন ভোর না হতেই ছেলেমেয়েরা ঘরের বাইরে এসে ছড়া কেটে দাঁড় কাকদের নিমন্ত্রণ করত। এ দিন ভোরে নতুন ধানের নতুন চাল ঢেঁকিতে কোটা হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ির প্রবীণরা পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করেন এবং ছোট ছেলে-মেয়েরা নতুন জামা-কাপড় পরে। এরপর বাড়ির উঠোনে গর্ত করে অ্যান্ড কই মাছ ও দুধ দিয়ে একটি বাঁশ পোঁতা হয়। একে বলে 'বীর বাঁশ'। বীর বাঁশের প্রতিটি কব্জিতে নতুন ধানের - ছড়া বাঁধা হয়। বীর বাঁশ পৌতার পর একটি কলার খোলে চাল মাথা কলা ও নারকেলের নাড়ু কাককে খেতে দেওয়া হয়। কাককে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত এ পর্বটির নাম 'কাকবলি'। এই অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ আহার করে না। শস্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মীকে পূজা এবং নবান্ন নিয়ে পরে সকলে আহার করে। ক্রমান্বয়ে এই পোঁক উৎসবটি সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমান সময়ে নবান্ন উৎসবের ব্যাপকতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। আমাদের উচিত বাংলা ও বাঙালির এই লোক ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা।

স্বাধীনতা দিবস (Independence Day)

২৬ মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও পাকিস্তানের সামরিক সরকার তাঁর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। এ আন্দোলন এক পর্যায়ে স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে রূপ নেয়। এরপর পাকিস্তান সরকার কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে ৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে এদেশের নিরীহ ছাত্র-জনতা ও পুলিশ-ইপিআরের উপর অতর্কিত হামলা ও গণহত্যা শুরু করে। এ সময় বঙ্গাফ্যুকেও গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পূর্বে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ওয়্যারলেস বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার উজ্জীবিত হয়ে এদেশের ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক বাঙালি সৈনিক, ইপিআপর, পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্য ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। একটানা নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এক নদী রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই প্রতিবছর ২৬ মার্চ যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে এদিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের লোকশিল্প (Folk art of Bangladesh)

আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশে লোকশিল্পের চর্চা চলে আসছে। গ্রামীণ জীবনে সাধারণ মানুষ দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে সাধারণ যন্ত্রপাতি দিয়ে শিল্পসম্মতভাবে যেসব সামগ্ৰী তৈরি করে সেগুলোকে বলা হয় লোকশিল্প। এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে কুলা, ডালা, ঝাঁকা, মোতা, ধামা, খালুই, টোপ, তালপাখা ইত্যাদি। বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব জিনিস গ্রামের ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হয়। এগুলো নানা ডিজাইনে বিভিন্ন রং ব্যবহার করে দৃষ্টিনন্দনভাবে তৈরি হলেই লোকশিল্প হয়ে যায়। বেত দিয়ে তৈরি শীতলপাটি, মোড়া, চেয়ার, টেবিল, খাট ইত্যাদি শহুরে মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। এছাড়া নকশিকাঁথা, মাটি দিয়ে তৈরি নানা তৈজসপত্র, পুতুল, ঘোড়া, হাতি, চুড়ি, মূল, ফুলদানি ইত্যাদি খুবই আকর্ষণীয়ভাবে তৈরি হয়। এছাড়া শামুক ও ঝিনুকের তৈরি মাপা, কানের দুল, বালা, ভাবির রিং ইত্যাদি খুবই আকর্ষণীয়। এসব সামগ্রী বিদেশিদেরও মন কেড়েছে। এসব রপ্তানি করে আসছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এর বাইরে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁতে তৈরি শাড়ি, চাদর, জামা বা প্যান্টের কাপড়, লুঙ্গি, গেঞ্জি ইত্যাদির কদর রয়েছে। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, কুমিল্লার খাদি বা খদ্দর, নারায়ণগঞ্জের জামদানি ও গেঞ্জি, পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের তৈরি চাদর, ওড়না, থামি ইত্যাদির খ্যাতি বাংলাদেশের বাইরেও ব্যাপকভাবে রয়েছে। এগুলোর ডিজাইন ও রং শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, ব্যবহারেও আরামদায়ক। এসব লোকশিল্প সামগ্রীর খ্যাতি বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে মহীয়ান করে তুলছে।

ফেরিওয়ালা (The Hawker)

রাস্তার ফেরিওয়ালা বলতে আমরা একজন করুণাযোগ্য ব্যক্তিকে বুঝি যে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র/ পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে। একজন ফেরিওয়ালার জীবন খুবই বৈচিত্র্যময় / অদ্ভুত। সে সামান্য পুঁজি দ্বারা তার ব্যবসা পরিচালনা করে। সে সাধারণত গলার হার, কানের দুল, ফিতা, টুকিটাকি জিনিসপত্র, গৃহ-সরঞ্জাম, কুমারের তৈরি মাটির জিনিসপত্র ইত্যাদি বিক্রি করে থাকে। মাঝে মাঝে সে মিষ্টি জাতীয় খাবার বিক্রি করে। তাকে কাপড় বিক্রি করতেও দেখা যায়। কোনো কোনো ফেরিওয়ালা রাস্তা ও শহুরে গলির আশপাশে বসবাসকারী গৃহিণীদের আকৃষ্ট করতে তাদের সাথে বাঁশি রাখে। আবার অনেকে ক্রেতা আকর্ষণের জন্য উচ্চ ঘরে মুখ দিয়ে সুর করে। মাঝে মাঝে শহরের রাস্তা ঘাটে তাদেরকে এক জায়গায় দাঁড়িয়েও পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে সরকার তাদের প্রায়ই উচ্ছেদ করে। বাধ্য হয়েই তারা তখন তাদের অপর্যাপ্ত পণ্য নিয়ে শহরের গলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ায়। সব দিনই একজন ফেরিওয়ালার সমান বেচাকেনা হয় না। সে কখনও বেশি আবার কখনও খুব কম লাভ করে। তখন তার পথ চেয়ে বসে থাকা পরিবারের মুখগুলোর চিন্তায় তাকে বিষণ্ণ দেখায়। অন্যদিকে যখন সে ভালো লাভ করে, তখন তার চেহারা খুব হাস্যোজ্জ্বল থাকে।কিন্তু তার পরেও আমাদের দেশের ফেরিওয়ালাদের আর্থিক অবস্থার সামান্যতম উন্নতি হচ্ছে না বললেই চলে। তাদের অধিকাংশ পরিবারই বহু সদস্যে ভারাক্রান্ত, যারা অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা বস্তিতে রোগশোকের সাথে নিত্য সংগ্রাম করে চলে। তাই একজন ফেরিওয়ালার দুর্দশাগ্রস্ত ভাগ্যের অবসান হওয়া উচিত এবং সরকারের উচিত তাদের জন্য স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করে দেওয়া।

পণপ্রথা/যৌতুক প্রথা (Dowry System)

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও এমন কিছু কুপ্রথা রয়েছে যা জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। এসব কুপ্রথার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো যৌতুকপ্রথা। এ প্রথা অনুযায়ী বিয়ের সময় কন্যাপক্ষ থেকে বরপক্ষকে মোটা অঙ্কের টাকা বা নানা ধরনের উপঢৌকন দিতে
হয়। ক্ষেত্রবিশেষে বিয়ের পরও কন্যাপক্ষকে এর জের টানতে হয়। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ এ প্রথার শিকার হলেও দরিদ্র পরিবারেই এর ক্ষতিকর প্রভাবটা বেশি দেখা যায়। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দরিদ্র মানুষের পক্ষে যথাযথভাবে এ যৌতুক দেওয়া সম্ভব হয় না। মূলত নিম্ন মায়ের কারণে তাদের সময় কম থাকাতেই এমনটি হয়। তাই বিয়ের পরও যৌতুকপ্রথার কারণে নারীদের নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। সংবাদপত্রে প্রায়ই আমরা এ ধরনের নির্যাতনের সংবাদ দেখতে পাই। অর্থনৈতিকভাবে নারীদের পরনির্ভরশীলতা ও তাদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই এ প্রথার উদ্ভব হয়েছে। এ পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় যুগ যুগ ধরে আমাদের সমাজে এ প্রথাটি টিকে আছে। নারীদের জন্য এটি যেমন অপমানজনক তেমনি মানবতার জন্যও অবমাননাকর। তাই এটি প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। এ সম্পর্কিত আইনের সুষ্ঠু ও যথাযথ প্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয় জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকেও এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

পথ শিশু (Street Child)

পথশিশু বলতে পথে পথে ঘুরে বেড়ানো, জীবনযাপনকারী শিশুদের বোঝায়। শহরের ছোট-বড় পথে আমরা যাদেরকে খেলতে দেখি, ছোটাছুটি করতে দেখি, মারামারি করতে দেখি এরাই পথশিশু। এরা নানা রকম কাজ করে। কেউ জোগালির কাজ বা ফাই-ফরমাশ করে, মুটেগিরি করে, ইট ভাঙে, ফুল, চকলেট বা টুকটাক কিছু বিক্রি করে, কাগজ কুড়ায় বা ভিক্ষা করে। এদের পথই ঘর, পথই আশ্রয়। এদের কারও বাবা আছে তো মা নেই, কারও বাবা নেই, আবার কারও বাব-মা কেউ নেই। মানুষের কিল, ঘুষি, লাথি খেয়ে, হোটেলের উচ্ছিষ্ট ছেটে এরা বড় হয়। খুব কম বয়স থেকেই চোর, গুণ্ডা, বদমাশ, বাটপাড়, ছিনতাইকারী, বোমাবাজ, খুনিদের দেখে দেখেই এরা বেড়ে ওঠে। ভালো মানুষরূপী দানবদের ভ্যাংকর চেহারার সাথেও এদের পরিচয় হয়। আবার সত্যিকারের ভালো চরিত্রের মানুষদেরও সাক্ষাৎ পায় তারা, যারা তাদের বিপদ-আপদে আপনজনের মতো সাহায্য-সহযোগিতা করে। এবা ব্যবসায়ীদের অপকর্ম, রাজনীতিবিদদের ছলচাতুরী, পুলিশের দুমুখো স্তূপের খবরও রাখে। হাল আমলের নায়ক-নায়িকা, গানের শিল্পীদের এরা খুব পছ করে। তাদের চলন-বলন নকল করে আনন্দ পায়। খারাপ মানুষেরা এদের খারাপ পথে নিয়ে যায়। অবৈধ ব্যবসায়ীরা মাদকদ্রব্য বহন ও বিক্রি করাতে এদেরকে ব্যবহার করে । ফলে এরাও মাদকাসর হয়ে পড়ে। ভালো মানুষেরা এদেরকে ভালোবেসে ভালো কাজ করায়, ভালো পরামর্শ দেয়। আজকাল পথশিশুদের জন্য স্কুল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে, যাতে তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে।

সততা (Honesty)

সেন্ট গ্রেগরী নাই ভুল আছে, ঢাকা; অয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সততা পরম দুঃখ কষ্টে অর্জিত ধন। সততা একটি পরম গুণ। একমাত্র সততার দ্বারাই প্রতিষ্ঠা লাভ সম্ভব। এ পৃথিবীতে ভালো-মন্দ, সৎ-অসৎ সত্য-মিথ্যা পাশাপাশি বিরাজমান। জীবনে প্রকৃত ও স্থায়ী সাফল্য লাভ করতে হলে সৎ পথে জীবন চালিত করাই উত্তম কাজ। এখানে মাধু ও সৎ পথের যাত্রী যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে মিথ্যা ও অসৎ পথের যাত্রী। সজ্ঞানে ও সতর্কতার সঙ্গে অসৎ পথ পরিহার করতে হবে, কারণ লাভে সৎ পথের কোনো বিকল্প নেই। জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে সততার মূল্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে। একজন সৎ লোকই সবার কাছে বিশ্বম ও শ্রদ্ধাভাজন হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় অনেকে অসৎ পথে চলেও বিরাট উন্নতি সাধন করেছে। কিন্তু মনে রাখা উচিত তার এ উন্নতি সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী; তাদের ঘরের মতো যেকোনো মুহূর্তে তা ভেঙে যেতে পারে। অসৎ পথে অর্জিত সাফল্য একদিন না একদিন ফে হবেই। অসৎ পথের যাত্রী ঢাকার জোরে সম্মান ও প্রতিপত্তি লাভ করলেও মানুষ মনে মনে তাকে ঘৃণা করে। অন্যদিকে সৎ পথের যাত্রী শ দুঃখ-কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করুক না কেন, মানুষের কাছে সে শ্রদ্ধার পাত্র। ব্যবসায়-বাণিজ্য, রাজনীতি, সমাজনীতি ইত্যাদি যেকোনো ক্ষেত্রে একমাত্র সৎ পথের ব্যক্তিই পরিণামে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে পারে। মহৎ কাজ করতে গেলে ও সৎ পথে চলতে গেলে হাজার দুঃখ-কষ্ট এসে আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়াবে। কিন্তু এসব দুঃখ-কষ্টকে বাধা হিসেবে না মেনে, সত্যের পথ পরিত্যাগ না করে কর্মক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়া উচিত। মনে রাখা দরকার যে, একদিন না একদিন সততার জয় এবং অসততার পরাজয় হবেই। মানবজীবনে চলার পথে সততা সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা বা নীতি এতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং বলা যায়, 'Honesty is the best policy.

শিশু অধিকার (Child Rights)

বেঁচে থাকার অধিকার হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক মানবিক অধিকার। বড়দের মতো শিশুদেরও রয়েছে মৌলিক অধিকার। তাদের রয়েছে স্বাস্থ্যকর ও শান্তিময় পরিবেশে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার অধিকার। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বরের অধিবেশনে গৃহীত হয় শিশু অধিকার সনদ। সনদটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি বা কনভেনশন। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালের ৩ আগস্ট শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষর করে। জন্মসূত্রে একটি নাম ও একটি জাতীয়তার অধিকার রয়েছে প্রতিটি শিশুর। ১৯৫৯ সালে আতিসংঘের সাধারণ পরিষদ শিশু সংক্রান্ত অধিকার ঘোষণা। করে। এই ঘোষণার উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং সেই সাথে শিশুদেরকে তাদের নিজ নিজ দেশের উন্নয়নের জন্য গড়ে তোলা। এই শিশু অধিকার সনদে বিশ্ব মানবসমাঙ্গ শিশুর জন্য যা কামনা করে তা সবচেয়ে স্পষ্ট ও পরিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশে শিশু সনদগুলো আইন হিসেবে গৃহীত হলেও এর প্রযোগে তেমন কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয় না। এখানে শিশুশ্রমের অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত অবস্থা বিরাজমান এবং শিশুদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার তেমন সুনিশ্চিত নয়। এক কথায় বাংলাদেশ শিশু অধিকার বনবায়নে এখনো অনেক পেছনে পড়ে রয়েছে। তাই শিশুদের জীবনযাত্রা উন্নয়নে আন্তর্জাতিক শিশু সনদগুলো যে সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশনা দেয় তাকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে ফুলের মতো সুন্দর ও নিষ্পাপ শিশুদের মৌল মানবিক অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

অতিথি পাখি (Guest Bird)

হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে প্রতি বছর শীতকালে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে অতিথি পাখি এ দেশে আসে আশ্রয়ের সন্ধানে। এসব পাখি একদিকে যেমন আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধিত করে, অন্যদিকে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা যেমন অতিথিদের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করি, তেমনি এ পাখিগুলো আমাদের অতিথি বলে এদের সাথেও আমাদের সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করা উচিত। বিবৃ একশ্রেণির অসাধু মাংসলোভী লোক এবং ব্যবসায়ী নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির জন্য এসব পাখি শিকার করে খার এবং বিক্রি করে। ভাবতে অবাক লাগে যে, হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে যে পাখিরা আসে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, তারাই তাদের অস্তিত্ব বিসর্জন দেয় হৃদয়হীন লোকদের খাবার টেবিলে। অথচ মানুষের কর্তব্য অতিথি পাখিদের অভ্যর্থনা জানানো। তাদের জন্য অভয়ারণ্য তৈরি করা। তাদের আশ্রয়কালীন সময়টুকুকে নিরাপদ ও আনন্দময় করে তোলা। এজন্য মানুষকে তার লোড ও রসনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিচিত্র ধরনের এসব পাখি যেন কারও লোভের শিকার হতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য মানুষের প্রয়োজন আরও সজাগ এবং সচেতন হওয়া। পাখিরা পাখনায় ভর করে যে সুদূরের গন্ধ নিয়ে আসে তাকে বন্ধ করার অধিকার কোনো সভ্য মানুষের নেই। তাই শীতের অতিথি পাখিদের সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। একইসাথে শিকারিদের দমন করতে জরুরিভিত্তিতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

গ্রন্থাগার (Library)

মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশে প্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে গ্রন্থাগারের জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত থাকে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির জ্ঞান। শিক্ষান্বেষী মানুষের কাছে তাই গ্রন্থাগার, এক জ্ঞানতীর্থ, যেখানে মুক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। পাওয়া যায় জীবনের আলোকিত পথ। ধারণা করা হয়, প্রাচীন রোমেই সবার জন্য উন্মু প্রথম গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছিল। প্রাচীন যুগের বিখ্যাত গ্রন্থাগারের মধ্যে মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া জাদুঘর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মুসলিম। বিশ্বে কর্ডোভা, দামেস্ক এবং বাগদাদেও বেশকিছু গ্রন্থাগার ছিল। বর্তমান বিশ্বের বিখ্যাত গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে ব্রিটেনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ফ্রান্সের বিবলিওধিক ন্যাশনাল লাইব্রেরি, মস্কোর লেনিন লাইব্রেরি, আমেরিকার লাইব্রেরি অব কংগ্রেস এবং কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরির সহযোগিতার শতাধিক সরকারি ও বেসরকারি গ্রন্থাগার দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত হয়। মূলত গ্রন্থাগার অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতের যোগাযোগের অক্ষরসেতু নির্মাণ করে জ্ঞান বিজ্ঞানকে দেশ থেকে দেশান্তরে এবং যুগ থেকে যুগান্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া বহমান রাখে। গ্রন্থাগার হলো বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থের সংগ্রহশালা। এ সংগ্রহ ব্যক্তিগত হতে পারে। হতে পারে পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয়। তবে বহু মানুষের মিলিত প্রয়াসে সংগৃহীত সাধারণ গ্রন্থাগার। থেকে নিজ নিজ প্রয়োজন ও রুচিমাফিক জ্ঞান আহরণ করতে পারে সবাই। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে গ্রন্থাগারের সংখ্যা নগন্য। তবে তুলনামূলকভাবে বর্তমানে গ্রন্থাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে শহর, জেলা-উপজেলা ছাড়াও কোনো কোনো ইউনিয়নেও গ্রন্থাগার রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণ সংস্থা, ভুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ও প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার রয়েছে। এসব গ্রন্থাগার ব্যবহারের সুবিধা সংশ্লিষ্ট ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল গ্রন্থাগার তথা ই-বুক পদ্ধতির গ্রন্থাগার। মানুষ উপলব্ধি করছে দৈহিক চাহিদাই সব নয়। মনেরও খাদ্য প্রয়োজন। আর প্রন্থাগারই মানুষের মনের পছন্দমাফিক রসদের সন্ধান দিতে পারে। কেউ গল্প-উপন্যাস, কবিতার বই পড়ে আনন্দ পায়, কেউ ভ্রমণবৃত্তান্ত কিংবা নাট পড়ে মজা পায়, কারও প্রিয় ধর্ম-দর্শনের বই, কেউ খোঁজে পদার্থ, রসায়ন বা প্রাণিবিজ্ঞান। অনেকে ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে বাস্ত। কেউ আবার ঘাঁটে পুরনো দলিল-দস্তাবেজ, প্রাচীন পুঁথি। এভাবেই গ্রন্থাগারের মাধ্যমে মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়ে থাকে। তবে সুষ্ঠুভাবে প্রশ্ন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ অতি দুরূহ কাজ। নানাবিধ পোকার উপদ্রব, প্রাকৃতিক বিপত্তি এবং অসৎ পাঠক ও গ্রন্থাগারকর্মীদের দায়িত্বহীনতায় বহু উৎকৃষ্ট গ্রন্থ বিনষ্ট হয়ে যায়। গ্রন্থাগারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবারই মনে রাখা উচিত, প্রন্থাগারে সংগৃহীত গ্রন্থ দেশ ও জাতির অমূল্য সম্পদ। আমাদের দেশে পাবলিক লাইব্রেরি, বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র গ্রন্থাগার, শিশু একাডেমি গ্রন্থাগার, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পাঠাগার, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রসহ সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য গ্রন্থাগার জ্ঞানপিপাসু মানুষের গ্রন্থপাঠের প্রয়োজন মেটাচ্ছে।

বসন্তকাল (Spring)

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি এই বাংলাদেশ। ঋতুবৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই এ দেশকে বলা হয় রূপসী বাংলা ছায়ার হাজার বর্গমাইলের এ দেশটি যেন ষড়ঋতুর এক অপূর্ব মিউজিয়াম। জার বাংলা বর্ষপঞ্জির সর্বশেষ ঋতুর নাম বসন্ত। ফাল্গুন ও চৈত্র এই দুই মাস বসন্তকাল বসস্তকে বলা হয় ক্ষতুশ্রেষ্ঠ বা ঋতুরাজ। মূলত প্রতিটি ঋতু এখানে আসে স্বাতন্ত্র্যের অনুপম রূপসজ্জায়। রূপের ঐশ্বর্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে বাংলার আকাশ-বাতান, পথ-প্রান্তর, ফসলের মাঠ। অনুপম বৈচিত্র্যাম্যা ঋতুরকোর এমন বাহারি প্রকাশ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না। তাই রূপমুদ্ধ করি তাঁর আবেগন্দি উচ্চারণে বলেন- 'এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের সবুজ-শ্যামলিমাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার বৈচিত্র্যের মধ্যে চমৎকারভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়। বারো মাসে ছয় ঋতুর এ দেশে প্রতিটি ঋতু তার অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে আগমন করে এবং নিজের অনিন্দ্য সৌন্দর্য উপহার দিয়ে চলে যায়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এদেশে ঋতুর আবির্ভাব ঘটে এবং পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়। তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ এবং ঐশ্বর্যে গুলো একটি থেকে আরেকটি পৃথক। প্রতিটি খাতুৰ ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে প্রকৃতিপ্রেমিক মানুষকে। স্বভাবে ও মেজাজে এক-একটি ঋতু এক-এক রকম। ফাল্গুন-চৈত্রা দুই মাসে বসন্ত ঋতুও আসে বৈচিত্র্যময় অনাবিল সৌন্দর্য নিয়ে। শীত শীত মাঘের শেষে শুরু হয় ঋতুরাজ বসরের আগমনী গান। আগে সবুজ কচি কিশলয়া শোষিত পুষ্প রতির গরম নগ্ন। দখিনা হাওয়ায় ভরে যায় মন-প্রাণ। বাতাসে ফুলে ওঠে নৌকার রঙিন পাল। রঙিন হয়ে ওঠে নর-নারীর ঘরোয়া জীবন। নতুন পাতায় রোদ লেগে পারার মতো ঝলমল করে। বসন্তের গানের পাখি কোকিল ছড়িয়ে দেয় উদাস করা কুহুতান। ফুলে ফুলে প্রকৃতির নতুন সাজ। সুধাসমাধা বাতাসে মাতোয়ারা বাংলার প্রকৃতি। মন গেয়ে ওঠে 'ওমা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে .. এমনই মন-প্রাণ পাগল করা বসন্তকালের মৃদু-মন্দ দখিনা বাতাসের জাদুস্পর্শে বর্ণ-বিরল বাংলাদেশের সর্বাঙ্গে লাগে অপূর্ব পুলকপ্রবাহ, বন-বাঁধির রিক্ত শাখায় জাগে কচি-কচি পাতার অফুরন্ত উয়াস। বাতাসের মৃদু মর্মর ধ্বনি এবং দূর বনান্তরাল থেকে ভেসে আসে কোকিলের গান এবং প্রকৃতি হয়ে ওঠে মায়াময় প্রাণময় আনন্দকুপন। অশোক-পলাশের রঙিন বিহ্বলতায়, শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার বিপুল বিন্যাসে বিকশিত মধুমালতী ও মাধবী-মঞ্জরির পশ্চমদির উজ্জল প্রগলভতায় সমগ্র গগনতলে বর্ণ, গন্ধ ও গানের তুমুল কোলাহলে শুরু হয়ে যায় এক আশ্চর্য মাতামাতি। তখন আনমনে গেয়ে ওঠে 'মহুয়ার মালা গলে কে তুমি এলে নয়ন ভুলানো ৰূপে কে তুমি এলে। বসন্তকে এ কারণেই বলা হয় ঋতুরাজ। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার ফলে সুখকর সময়কাটানো যায় এসময় । এই ঋতুতে অনেক উৎসব হয়, বিশেষ করে হিন্দুদের বাসন্তী পুজা, দোলযাত্রা, চৈত্রসংক্রান্তি প্রভৃতি উৎসব বিপুল সমারোহে অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বসন্তকালের প্রথম দিকেই 'ভালোবাসা দিবস' পালিত হয় মহা ধুমধামে এবং নগরকেন্দ্রিক বসন্ত উৎসব আয়োজন করা হয় মহাসমারোহে। এ সবই ঋতুরাজ বসন্তের উপহার। রূপসী বাংলার এই অপরূপ রূপবৈচিত্র্য শহরবাসী ও শহরমুখী বাঙালিরা আজ খুব একটা অনুভব করতে পারে না সত্য কিন্তু রাজ বসন্তের নিমন্ত্রণ ও বসন্তের দূত কোকিলের গান তাদের অন্তরে বেজে চলে নিরন্তর।

রূপসী বাংলা (Beautiful Bangla)

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি এই বাংলাদেশের বন-বনানী, বিশাল ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্রসৈকত, হাওর-বাঁওড়, ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ ভ্রমণপিপাসু উৎসাহী মানুষকে আকৃষ্ট করে আসছে। রূপমুগ্ধ কবির ভাষায় এই দেশকে বলা হয় । বাংলা। কবি বলেন, 'এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি। অপূর্ব প্রাকৃতির সৌন্দর্যের এই দেশের যেদিকেই চোখ যায় দেখা যায় সবুজ প্রকৃতির অপার সমারোহ। প্রকৃতি যেন তার অনিন্দ্য সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে। সবুজ বনের পাখ-পাখালি, ফুল-ফল, নীলাকাশ, নাও-নদী, খাল-বিল, শাপলা-শালুক মিলে যেন এদেশকে আরও রূপসী করে তুলেছে। বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে সমতল ভূমি, পাহাড়-টিলা, সুন্দরবন। ঋতুতে ঋতুতে আছে রঙের বৈচিত্র্য কিন্তু প্রত্যেক ঋতুই আপন আপন বৈশিষ্ট্যে অনন্য। ৰূপে বসে-গন্ধে ভরপুর করে তোলে এই অপূর্ব লীলা নিকেতন। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এই দেশ অকৃপণভাবে তার সৌন্দর্য বিলিয়ে দিচ্ছে সবাইকে। দক্ষিণের বিশাল সমুদ্রের উত্তাল প্রতিধ্বনি যেন অলৌকিক মায়াজাল সৃষ্টি করে, আর উত্তরের পাহাড় দেয় পাহারা। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদ-নদীতে বর্ষার জল ভরে গিয়ে সৃষ্টি হয় নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। অতিথি পাখিসহ কত রং-বেরঙের পাখি ওড়াউড়ি আর গান করে এই বাংলায়। এ আরেক কাকলিমুখর ভিন্ন মাত্রার বাংলাদেশ। সুরভিমাখা নানা রঙের ফুলে ফুলে ভরে ওঠে এ দেশের প্রকৃতি। নানান স্বাদের নানান বর্ণের ফলে ভরপুর বাংলাদেশ। ফুলে-ফলে, পাখির গানে উৎসবমুখর এই রূপসী বাংলার রূপ দেখে বিশ্বকবি উচ্চারণ করেন, 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।' প্রকৃতি আর মানবজীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যেই দেশের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। আমাদের এই অপরূপ প্রকৃতির বিচিত্র সৌন্দর্য এদেশের মানুষের মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। এমনকি অনেক বিদেশিও এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে থেকে গেছেন স্থায়ীভাবে। শুধু জননী জন্মভূমি রূপেই নয়, রূপসী বাংলার খড়কতুর বর্ণবৈচিত্রো, রসে-গন্ধে, গানে-গল্পে আনিন্দ্য সুন্দর সমারোহে নিত্য বহমান গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তে নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে বাংলার প্রকৃতি। আলাদা রং, আলাদা বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল রূপসী বাংলার অপরূপ রূপশোভা । আমাদের এই রূপসী দেশের মতো দেশ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই।

শৈশবস্মৃতি (Childhood Memories)

শৈশবের ফেরে আসা নানা রঙের দিনগুলোর কথা মানুষ কখনই ভুলতে পারে না। শৈশবকাল হলো আনন্দ আর মজায় ভরপুর এক সোনালি সময়। সেই শৈশবকাল যখন অতীত হয়ে যায় তখন থেকেই অবসরে মনের আয়নায় ভেসে ওঠে শৈশবের মুখস্মৃতি। তখনকার ছোটখাটো দুঃখ-কষ্ট-বেদনাকেও মনে হয় স্মৃতিময় স্বর্ণখণ্ড। আর এসব কারণেই শৈশবের স্মৃতি নেয় রচিত হয় গল্প-উপন্যাস, কবিতা-নাটক। সিনেমার পর্দায় ভেসে ওঠে শৈশবের হীরকখণ্ড ঘটনাবলি। আমার মতো অনেকেরই শৈশব কেটে ফুলে-ফলে ভরা সবুজ পাতায় ঘেরা পাকি ডাকা গ্রামে। এক চিলতে রঙিন ফিতার মতো নদী বয়ে যায়। গ্রামের পাশ দিয়ে। নৌকার মাঝির কণ্ঠে শোনা যায় ভাটিয়ালি গান। সেই ছোট্ট নদীতে দলবেঁধে গোসল করতে করতে গামছা দিয়ে মাছ ধরার কথা কোনো দিনই ভোলা যাবে না। মনে পড়ে স্কুলের প্রথম দিনের কথা। আমার জন্য সেদিন ছিল একটা আলাদা দিন। আনন্দ আর ভয়ের মিশেলে আমি নতুন জামাকাপড় পরে দাদুর সঙ্গে স্কুলে গেলাম। আমাকে হেডস্যার খুব আদর করলেন এবং নিজেই ক্লাসে নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন । আমার সামনে খুলে গেল এক নতুন জগৎ। পড়ার সাথি, খেলার সাথি হিসেবে যাদেরকে পেলাম তারাও আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিল । দুলে দুলে সুর তুলে বর্ণ ও নামতা পড়ার কথা আজও হৃদয়কে দোলা দিয়ো যায়। আসলে ফেলে আসা শৈশবস্মৃতি সততই সুখের। মানুষের স্মৃতিপটে শৈশবকালের ঘটনাবলি ভেসে উঠলে বর্তমানকে তুচ্ছ মনে হয়। শৈশবে সব শিশুই বড়দের কাছ থেকে আলাদা নজর কাড়তে সক্ষম হয় । বাড়তি বাড়তি পায় আদর-স্নেহ-ভালোবাসা। বাবার আদর মায়ের যেহের আলোয় ঝলমল করে ওঠে শিশুর পৃথিবী। আরও সুখের পরশ বুলার ফুলের পাপড়ি, পাখির। মানা ও ঘাসফড়িং। শৈশবকে আরও রঙিন করে তোলে ঘুড়ি ওড়ানো সোনালি বিকেল। আধার রাতে ঘুমানোর আগে দাদি-নানির গল্প বলার সময় তাই বোনদের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত কে কত কাছে ঘেঁষে শুতে পারে। এত আনন্দ এত সুখ আর কখনো ফিরে আসবে না। স্কুলের একটি ঘটনার কথা মনে পড়লে আজও হাসি পায় আমার। আমাদের সময়ে প্রতিষেধক টিকা দিতে স্কুলেই সরকারি লোকজন আসত। একদিন এক ভদ্রলোককে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে আসতে দেখেই আমি বই খাতা ফেলে পালিয়ে যাই। কারণ টিকা দেওয়ার কথা শুনলেই আমি ভয় পেতাম। পরে জানলাম ভদ্রলোক শিক্ষা অফিসার । সেদিনের কথা মনে হলে আজও হাসি পায়। শৈশবের অনেক ঘটনাই এখন হাস্যকর মনে হয় কিন্তু তাকে ভোলা যায় না। অজান্তেই মনের আয়নায় ভেসে ওঠে বারবার। তখন মন ফিরে পেতে চায় হারানো শৈশব।

আমার প্রিয় শখ (My Favourite Hobby)

শুরু হচ্ছে প্রিয় কাজ যা মানুষ আনন্দের জন্য করে। এটা তার স্বাভাবিক কাজকর্ম না। প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু শখ থাকে। আমারও কিছু শখ আছে। শগুলোর মধ্যে একটা আমার প্রিয়, আর সেটা হচ্ছে বাগান করা। আমি এটা এই লনা করি যে, যদি আমি এখানে কাজ করি, তাতে আমার ব্যায়াম হয়। এতে আমার অক্সিজেনপ্রাপ্তি ঘটে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিষ্কাশন ঘটে। আর আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করি। এতে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য সংরক্ষিত হয়। আমি আমার অবসর সময় বাগানে কাটাই। আমি দিনে দুইবার বাগানে যাই এবং চারাগুলোর যত্ন নিই। দরকার হলে, চারাগুলোতে পানি দিই। আমি এটাকে স্বাভাবিক হিসেবে নিই। আমার শথে কিছু সুবিধা রয়েছে। রাগান থেকে বিভিন্ন রকমের ফুল ও ফ নিশ্চিত যে, এতে সময় কম লাগে। আমি আমার শখের জন্য কেবল আমার অবসরের সময় দেই। আমি জোরেসোরে আমার পড়াশুনার কাজ চাপিয়ে যাই। পাই। এতে আমাদের পরিবেশ প্রাণবন্ত হয়। আমার এলাকার অনেক পোক আমার বাগান দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়েছেন। তারা অনেকে বাগান করেছেন। এটা কাজেই কেউ যদি বাগান করাকে শখ হিসেবে নিতে চায়, তাহলে আমি বলব কোনোকিছুর ক্ষতি না করেও তা করা যায়।

একুশের বইমেলা (21 E Book Fair)

১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে প্রতিবছর একুশের বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাঙালি সরার মর্মমূলে গাঁথা মহান একুশে ফেব্রুয়ারি তথা ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতি বহনকারী একুশের বইমেলা বাঙালির সংগ্রামী চেতনা ও সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্যেরই এক তাৎপর্যপূর্ণ অনুষঙ্গ। 'শহিদ দিবস' হিসেবে জাতীয় মর্যাদায় এ দিনটি নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। দেশের মানুষ ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এবং বইমেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। ১৯৯৯ সালে এ দিবসটি "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় এর গুরুত্ব বেড়ে গেছে বহুগুণ। সেই সাথে একুশের বইমেলাও পেয়েছে আলাদ গৌরবদীপ্ত যাত্রা। পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী একুশের বইমেলা বেশ জাঁকজমকভাবে চলতে থাকে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বইমেলার উদ্বোধন করেন। কয়েকশত প্রকাশক তাদের জন্য বরাদ্দকৃত নিজ নিজ স্টল সাজিয়ে বই প্রদর্শন ও বিক্রি করেন। হাজার হাজার দর্শক, শ্রোতা, ক্রেতা আনন্দমুখর পরিবেশে নানা ধরনের সুদৃশ্য ও মূল্যবান বইয়ের সাথে, লেখক ও প্রকাশকদের সাথে পরিচিত হন। বই দেখে ও বই কিনে তাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তারা এখানে আলোচনা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। খাবার স্টলে বসেও কবি-লেখকদের সঙ্গে আড্ডা দেন অনেকেই। তথ্য কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয় নতুন বই প্রকাশের সংবাদ, হারানো বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি। মেলায় প্রবেশের সুসজ্জিত, তোরণটি দৃষ্টিনন্দিত। বাইরের দেয়ালে ভাষা আন্দোলন ও ভাষাশহিদদের নানা চিত্র দেখার ভিড়। মেলার ভেতরে বাইরে নিরাপত্তার সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা। সাংবাদিক ও ক্যামেরার ভিড় চোখে পড়ার মতো। শিশু কিশোর যুবক বৃদ্ধ সবার উপযোগী দেশপ্রেম, ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ভ্রমণবৃত্তান্তের থাকাকে বইয়ের সমাবেশ স্বাভাবিকভাবেই মন কাড়ে। একুশের বইমেলা বই কেনা ও পাঠের অভ্যাস গঠনে, পারস্পরিক ভাবের বিনিময়ে, প্রবীণ-নবীদের সংযোগ রচনায় প্রকৃতই এক মিলনতীর্থ।

শ্রমের মর্যাদা (Dignity of Labour)

জীবনের সকল ক্ষেত্রেই পরিশ্রমের মর্যাদা রয়েছে। সর্বস্তরের মানুষের পক্ষে পরিশ্রমের মর্যাদাবোধ পরিশ্রমেরই যোগ্য পুরস্কার। কায়িক পরিশ্রম আত্মসম্মানের পক্ষে মোটেও হানিকর নয়, বরং শ্রমই মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ উপায়। জগতের সকল কাজই শ্রমসাপেক্ষ। কায়িক পরিশ্রমেই শিল্পী ও বিজ্ঞানী উদ্ভাবনীশক্তিকে বাস্তবে পরিণত করে তা মানবকল্যাণে নিয়োজিত করে। ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত বা জাতিগত সকল উন্নতির মূলে রয়েছে শ্রম ও অধ্যবসায়। পৃথিবীতে যে জাতি যত পরিশ্রমী সে জাতি তত উন্নয়নশীল। ব্যক্তিগত পরিশ্রম থেকে সমষ্টিগত পরিশ্রমই বর্তমান সভ্যতা সৃষ্টি করেছে। শ্রম যে শুধু ব্যক্তিজীবনকেই সার্থকতায় সমৃদ্ধ ও ঐশ্বর্যময় করে তোলে তা নয়, সমাজজীবনের ওপরও গভীর রেখাপাত করে। তাই পরিশ্রম শুধু সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রকই নয়, সভ্যতা বিকাশেরও হাতিয়ার। সুতরাং জীবনকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শ্রম ব্যতীত অন্য কোনো সহজ পথ নেই। আর তাই শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ব্যক্তিগত তথা জাতিগতভাবে প্রয়োজন। কবি অক্ষয় কুমার বড়াল তাঁর 'মানব বন্দনা' কবিতায় শ্রমশীল ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে তাই বন্দনা করেছেন- নমি আমি প্রতিজনে, আম্বিজ চণ্ডাল,/ সিন্ধু মূলে জলবিন্দু, বিশ্বমূনে অণু/সমগ্রে প্রকাশ/প্রভু ক্রীতদাস ।/নমি কৃষি তন্তুজীবী, স্থপতি, তক্ষক / কর্ম, চর্মকার।

বৈশাখী মেলা 

বৈশাখী মেলা নববর্ষের সর্বজনীন অনুষ্ঠানগুলোর অন্যতম। নববর্ষের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ থেকে বাংলাদেশে ছোট-বড় অনেক মেলা শুরু হয়। স্থানীয় লোকেরাই এসব মেলার আয়োজন করে থাকে। মেলার স্থায়িত্বকাল সাধারণত এক থেকে সাত দিন। তবে কোথাও কোথাও এ মেলা সারা বৈশাখ মাস ধরে চলে। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলার নেকমর্দানে পহেলা বৈশাখে যে মেলা বসে, তা হচ্ছে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ মেলা। সাধারণত এ মেলা এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়। উত্তরবঙ্গের এমন বস্তু নেই যা এ মেলায় পাওয়া যায় না। এ মেলাকে সর্বসাধারণের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। নাচ, গান, নাগরদোলা প্রভৃতি মেলার হাজার বছরের ঐতিহ্য বলে বিবেচিত। মেলার দিনগুলোতে ছেলে-বুড়ো সবার মাঝেই বিরাজ করে সাজ সাজ রব। বাংলাদেশের মেলাগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায় এদেশের হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী, যা বাঙালির ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বলে বিবেচিত। বৈশাখী মেলা বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের মিলনমেলা। এ মেলা সকলের প্রাণে এনে দেয় খুশির বন্যা, ধুয়ে মুছে দেয় সারা বছরের কর্মক্লান্তি ও মানসিক অশান্তি। আমরা নতুন করে বাঙালি ঐতিহ্য লালন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা লাভ করি।

নিরক্ষরতা দূরীকরণ (Remove Illiteracy)

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। পৃথিবীতে শিক্ষা বা জ্ঞানই একমাত্র সম্পদ যা জীবনের মতো মূল্যবান। সুতরাং নিরক্ষরতা জাতির জন্য হুমকি রূপ। নিরক্ষর ব্যক্তি অন্ধের ন্যায়। অন্ধের মতো তাকে অগ্রসর হতে হয়। অন্যের গলগ্রহ হয়ে জীবন যাপন করতে হয়। তাই কোনো জাতির কাছেই নিরক্ষরতা কাম্য নয়। বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (স.) শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। জ্ঞানার্জনের জন্য তিনি সুদূর চীনদেশে যাওয়ার কথা বলেছেন। অথচ আমাদের ষোল কোটি জনসংখ্যার দেশে বাষটি ভাগ মাত্র তথাকথিত শিক্ষিত অর্থাৎ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। নিরক্ষরতার জন্য আজ বাংলাদেশের অর্থনীতি অনগ্রসর ও পঙ্গু। নিরক্ষরতার জন্যেই জীবনের সুখের আস্বাদন থেকে মানুষ বঞ্চিত। নিরক্ষরতার অভিশাপ মাথায় নিয়ে কোনো জাতি উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। নিরক্ষরতা ব্যক্তিজীবনকে যেমন পঙ্গু করে, দেশ-জাতিকেও তেমনি নিমজ্জিত করে অবনতির অন্ধকারে। তাই আমাদের জাতীয় জীবন থেকে এ নির্মম অভিশাপ দূর করতে হবে। দেশকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হলে দেশের মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। আর এ লক্ষ্য নিয়েই চালু করা হয়েছে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা। নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্যে গ্রহণ করা হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। শিক্ষার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। হযরত মুহম্মদ (স.) বলেছিলেন, "দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষার সময়।” তাই শৈশবে যারা শিক্ষা গ্রহণ করেনি তাদের জন্য চালু করা হয়েছে বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম। নিরক্ষরতা দূরীকরণ শুধু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

চরিত্র (Character)

চরিত্র মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ। চারিত্রিক গুণই মানুষকে সত্যিকারের মানুষ করে তোলে, বাঁচিয়ে রাখে, অমর করে রাখে। মানবজীবনের বিকাশ ও উন্নতির জন্য ভালো চরিত্রের অধিকারী হওয়া দরকার। চরিত্রহীন লোক নানা রকম অন্যায় ও অসত্যের পূজারি। চরিত্রবান ব্যক্তি সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী। মানুষের মহিমা অমল চরিত্রের আলোকেই দ্যুতি পায়। টাকা-পয়সা, ধন-দৌলতের বিনাশ আছে কিন্তু সচ্চরিত্রের বিনাশ নেই। গাড়ি বাড়ি, ধন-সম্পত্তি, শিক্ষাগত যোগ্যতা সবকিছুই মূল্যহীন হয়ে পড়ে যদি সে লোক চরিত্রহীন হয়। পক্ষান্তরে চরিত্রবলে বলীয়ান মানুষ সবার শুন্যা আমায় করতে পারে। কারণ চরিত্রবান মানুষ মানুষকে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে বিচরণ করতে সাহায্য করে। একজন সচ্চরিত্রবান লোকের সংস্পর্শে এলে মানুষ সত্য, সুন্দর, আদর্শ পথের সন্ধান পায়। পক্ষান্তরে দুদ্ধবির বাকি সমাজ ও জাতির জন্য অকল্যাণকর। তারা মানুষে মানুষে বিভেদ, কাটাকাটি, হিংসা-দ্বেষ, লোভ-লালসার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশকে কলুষিত করে। চরিত্র মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মনুষ্যত্বের পরিচয় বহন করে। যেসব গুণ মানুষকে মহত্ত্বের পরিচয় মান করে, সেগুলো মানুষকে মহত্ত্বের গৌরবতিলক পরিয়ে দেয়, তাদের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান। করে চরিত্র। চরিত্রবলেই মানুষ জগতের বুকে অবিনশ্বর কীর্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়। চরিত্রগুণেই মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য নির্ণীত হয়। তাই প্রতিটি মানুষেরই চারিত্রিক দৃঢ়তা থাকা প্রয়োজন।

অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!