প্রমিত ভাষা শিখি - ৬ষ্ঠ শ্রেণি বাংলা ২য় অধ্যায় সমাধান (PDF) ২০২৩ | Class 6 Bangla Solution, Chapter 2 Answer
দ্বিতীয় অধ্যায়: প্রমিত ভাষা শিখি
১ম পরিচ্ছেদ: প্রমিত ভাষা
প্রমিত ভাষা কাকে বলে বা প্রমিত ভাষা কি?
উত্তরঃ- প্রমিত অর্থ আদর্শ চলতি ভাষা। ইংরেজিতে প্রমিত ভাষা কে স্টান্ডার ল্যাঙ্গুয়েজ ( standard language) বলা হয়।। এক কথায়, ভাষার সর্বজনগ্রাহ্য ও সমকালের সর্বোচ্চ মার্জিত রূপকেই প্রমিত ভাষা রীতি বলে। আর ব্যাপক অর্থে, প্রমিত ভাষা রীতি হচ্ছে; কোন ভাষাভাষী অঞ্চলে প্রচলিত উপভাষাগুলোর উপরে সর্বজনমান্য একটি আদর্শ ভাষা গড়ে ওঠে।
নিচে কয়েকটি পরিস্থিতির উল্লেখ আছে। এসব পরিস্থিতিতে তোমার বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের লোকজন, কিংবা এলাকার মানুষ যেভাবে কথা বলে, তা কথোপকথনের মাধ্যমে উপস্থাপন করো।
- খেলার সময়ে কোনো একটা বিষয় নিয়ে তর্ক হচ্ছে।
- পড়াশোনা কেমন চলছে তা নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে কথা হচ্ছে।
- সবজি কিনতে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দরাদরি হচ্ছে।
উপরের পরিস্থিতিগুলোতে যে ভাষায় কথা বলেছ, নিচের ক্ষেত্রে তা আলাদা কি না, তা নিয়ে আলোচনা করো।
- রেডিও-টেলিভিশনে পঠিত সংবাদ ও প্রতিবেদনের ভাষা
- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনের ভাষা
- পাঠ্যবইয়ের ভাষা
প্রথমে দেওয়া পরিস্থিতি তিনটিতে তোমরা এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করেছ, কিংবা কোনো কোনো শব্দের
উচ্চারণ এমনভাবে করেছ, যা পরের ক্ষেত্র তিনটির সাথে মেলে না। নিচের ছক অনুযায়ী এমন কিছু শব্দের তালিকা করো। ধরা যাক, ‘টাকা’ শব্দটি তোমরা ‘টাহা’ বলেছ। সেক্ষেত্রে নিচের ছকের বাম কলামে ‘টাহা’ এবং ডান কলামে ‘টাকা’ লিখতে হবে।
বাম কলাম
টাহা
পোলা
মাইয়া
খাওন
হয়েছে
করছি
বলছি
জানছি
খাইছি
কেমনে
ডান কলাম
টাকা
ছেলে
মেয়ে
খাবার
হয়েছে
করেছি
বলেছি
জেনেছি
খেয়েছি
কিভাবে
আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষা
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ভাষায় ভিন্নতা আছে। যেমন--যশোর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, সিলেট, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের মানুষ একভাবে কথা বলে না। ‘ছেলে’ শব্দটিকে কোনো অঞ্চলের মানুষ বলতে পারে ‘পুত’, কোনো অঞ্চলে ‘ব্যাটা’, কোনো অঞ্চলে ‘পোলা’। এভাবে অঞ্চলভেদে অনেক শব্দই বদলে যায়। কখনো কখনো শব্দের উচ্চারণে পার্থকার্থ ্য ঘটে। যেমন, ‘ছেলে’ শব্দটি উচ্চারিত হতে পারে ‘চেলে’ বা ‘শেলে’। ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের ভাষার এই রূপভেদকে বলা হয় আঞ্চলিক ভাষা।
আঞ্চলিক ভাষা কাকে বলে?
উত্তরঃ- অঞ্চলভেদে বাংলা ভাষার প্রচলিত কথ্যরূপকেই আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা বলে।
আঞ্চলিক রূপের জন্য এক অঞ্চলের মানুষের কথা আর এক অঞ্চলের মানুষের বুঝতে সমস্যা হয়। এ কারণে, সব অঞ্চলের মানুষের সহজে বোঝার জন্য ভাষার একটি রূপ নির্দিষ্ট হয়েছে, তাকে প্রমিত ভাষা বলে।
প্রমিত ভাষা কাকে বলে?
উত্তরঃ- এক কথায়, ভাষার সর্বজনগ্রাহ্য ও সমকালের সর্বোচ্চ মার্জিত রূপকেই প্রমিত ভাষা রীতি বলে।
উচ্চারণ ঠিক রেখে ছড়া পড়ি
ছড়া পড়তে নিশ্চয় তোমাদের ভালো লাগে। এখানে একটি ছড়া দেওয়া হলো। ছড়াটির নাম ‘চিঠি বিলি’। এটি লিখেছেন রোকনুজ্জামান খান। ছড়াটি নেওয়া হয়েছে তাঁর ‘হাট্ টিমা টিম’ নামের বই থেকে। রোকনুজ্জামান খান ‘দাদাভাই’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু-কিশোরদের জন্য ‘কচিকাঁচার মেলা’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
ছড়াটি প্রথমে নীরবে পড়ো; এরপর সরবে পাঠ করো।
ছড়ার নাম: চিঠি বিলি
লেখকের নাম: রোকনুজ্জামান খান
ছাতা মাথায় ব্যাঙ চলেছে
চিঠি বিলি করতে,
টাপুস টুপুস ঝরছে দেয়া
ছুটছে খেয়া ধরতে।
খেয়ানায়ের মাঝি হলো
চিংড়ি মাছের বাচ্চা,
দু চোখ বুজে হাল ধরে সে
জবর মাঝি সাচ্চা।
তার চিঠিও এসেছে আজ
লিখছে বিলের খলসে,
সাঁঝের বেলার রোদে নাকি
চোখ গেছে তার ঝলসে।
নদীর ওপার গিয়ে ব্যাঙা
শুধায় সবায়: ভাইরে,
ভেটকি মাছের নাতনি নাকি
গেছে দেশের বাইরে?
তার যে চিঠি এসেছে আজ
লিখছে বিলের কাতলা:
এবার সারা দেশটি জুড়ে
নামবে দারুণ বাদলা।
তাই তো নিলাম ছাতা কিনে
আসুক এবার বর্ষা,র্
চিংড়ি মাঝির খেয়া না আর
ছাতাই আমার ভরসা।
শব্দের অর্থ
কাতলা: মাছের নাম।
খলসে: মাছের নাম।
খেয়া: নদী পার হওয়ার নৌকা।
খেয়া না: খেয়া নৌকা।
খেয়ানায়ের মাঝি: খেয়া নৌকার মাঝি।
চিঠি: কোনো খবর জানিয়ে লেখা কাগজ।
চিঠি বিলি করা: চিঠি পৌঁছে দেওয়া।
ঝলসানো: উজ্জ্বল আলোয় চোখ ধাঁধানো।
টাপুস টুপুস: বৃষ্টি পড়ার শব্দ।
দেয়া: বৃষ্টি।
বাদলা: একনাগাড়ে বৃষ্টি।
ভরসা: নির্ভর কর নির্ভ া, অবলম্বন।
ভেটকি: মাছের নাম।
সাঁঝের বেলাা: সন্ধ্যার সময়।
সাচ্চা: সত্য।
শব্দ খুঁজি
অনেক শব্দ তোমার অঞ্চলের মানুষ ভিন্নভাবে উচ্চারণ করে। আবার, অনেক প্রমিত শব্দের বদলে তোমার অঞ্চলের মানুষ আলাদা শব্দ ব্যবহার করে। এ রকম শব্দ খজেুঁ বের করো এবং নিচের ছক অনুযায়ী তালিকা করো।
আঞ্চলিক উচ্চারণ/শব্দ
পুরি
গইয়া
কাপাট
ছাওয়া
কৈত্তর
বাইগন
মুশরী
দলান
শোশা
গুয়া
কইনা
প্রমিত শব্দ
মেয়ে
পেয়ারা
দরজা
সন্তান
কবুতর
বেগুন
মশারী
দালান
শশা
সুপারি
কনে
২য় পরিচ্ছেদ: শব্দের উচ্চারণ
নাটক: ‘সুখী মানুষ’
নিচে একটি নাটক দেওয়া হলো। নাটকটির নাম ‘সুখী মানুষ’। এটি মমতাজউদদীন আহমদের লেখা। তিনি একজন বিখ্যাত নাট্যকার। তাঁর লেখা বিখ্যাত নাটকের মধ্যে আছে ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, ‘কি চাহ শঙ্খচিল’।
লেখক পরিচিতি
মমতাজউদদীন আহমদ (১৮ জানুয়ারি ১৯৩৫ – ২ জুন ২০১৯) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক। তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ যিনি এক অঙ্কের নাটক লেখায় বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য মমতাজউদদীন আহমদ ১৯৭৬ সালে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ ও ১৯৯৭ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। ‘সুখী মানুষ’ মমতাজউদদীন আহমদের লেখা। তাঁর লেখা বিখ্যাত নাটকের মধ্যে আছে ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, ‘কি চাহ শঙ্খচিল’।
নাট্যকার কাকে বলে?
যাঁরা নাটক লেখেন, তাঁদের নাট্যকার বলে। ইংরেজিতে বলা হয় Play Writer.
সংলাপ কাকে বলে?
নাটকে একজনের সঙ্গে অন্যজনের যেসব কথা হয়, সেগুলোকে সংলাপ বলে। এই নাটকের সংলাপে প্রমিত ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। ইংরেজিতে বলা হয় Conversation or Dialogue.
নাটকের চরিত্র কি?
নাটকের কথা বা সংলাপ যাদের মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়, তাদের বলে চরিত্র। ইংরেজিতে বলা হয় Characters.
‘সুখী মানুষ’ নাটকে অনেকগুলো চরিত্র আছে। তুমি ও তোমার সহপাঠীরা এগুলোর মধ্য থেকে একটি করে চরিত্র বেছে নাও এবং চরিত্র অনুযায়ী সংলাপ পাঠ করো। সংলাপ পাঠ করার সময়ে প্রমিত উচ্চারণের দিকে খেয়াল রেখো।
শব্দের উচ্চারণ
প্রমিত ভাষায় শব্দের উচ্চারণ ঠিকমতো করতে হয়। ‘সুখী মানুষ’ নাটক থেকে কিছু শব্দ বাম কলামে দেওয়া হলো। শব্দগুলোর উচ্চারণ কেমন হবে, তা ডানের কলামে লিখে দেখানো হয়েছে। তোমার উচ্চারণ ঠিক হচ্ছে কি না, এখান থেকে মিলিয়ে নাও।
উচ্চারণের কিছু নিয়ম:
১। ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ অর্ধ হলে বর্ণের নিচে হসন্ত (্) হবে ।
যেমন: ক = ক + অ = ক্
শব্দ ---- জাম
প্রমিত উচ্চারণ --- জাম্
২। শব্দ যদি (“ ী”) কারে থাকে প্রমিত উচ্চারণে (“”ি”) হবে ।
যেমন: শব্দ------ সুখী
প্রমিত উচ্চারণ------সুখি
৩। শব্দের শুরুতে “অ” + ই/ঈ/উ/ঊ হলে “অ” এর উচ্চারণ “ও” কার হবে।
যেমন: শব্দ ---- কবিরাজ
প্রমিত উচ্চারণ --- কোবিরাজ
৪। শব্দের শেষে “অ” কার “ও” কারে উচ্চারিত হবে।
যেমন: শব্দ------ আত্মীয়
প্রমিত উচ্চারণ------ আততিঁঁয়ো
৫। কোমল উচ্চারনের ক্ষেত্রে “স”, গম্ভীর উচ্চারণের ক্ষেত্রে “শ” হবে।
যেমন: শব্দ------ অসুখী
প্রমিত উচ্চারণ------ অশুখি
উপস্থিত বক্তৃতায় প্রমিত ভাষার চর্চা
তোমরা প্রত্যেকে একটি করে বিষয় লিখে শিক্ষকের কাছে জমা দাও। একেকটি বিষয় নিয়ে একেক জনকে এক মিনিট করে কথা বলতে হবে। কথা বলার সময়ে প্রমিত ভাষা ব্যবহার করো।
উপস্থিত বক্তৃতায় প্রমিত ভাষার চর্চা করতে আপনাকে ৫ টি কথা কারণ জানতে হবে। সে গুলো হলো:-
- বাঙলা ভাষার লিখিতরূপের সঙ্গে বহুক্ষেত্রে তার উচ্চারিত রূপ একই হয় না।
- বাঙলা ভাষার বর্ণ আছে একাধিক, কিন্তু তার ধ্বনি প্রতীক এক। আবার বর্ণ আছে একটি, কিন্তু তার ধ্বনি একাধিক।
- আমাদের উচ্চারণে প্রায়শ মহাপ্রাণ বর্ণগুলো অল্পপ্রাণ হয়ে যায়।
- আমাদের আঞ্চলিকতার সমস্যা।
- বাঙলা ভাষার প্রতি আমাদের দরদ ও আন্তরিকতার অভাব। এজন্য আমাদের অবহেলা ও অযত্ন দায়ী।
পরবর্তী কোন অধ্যায়ের সমাধান পেতে চান কমেন্টস করে জানান।
কারো পিডিএফ লিংক প্রয়োজন হলে তারা আমাদের ফেসবুক পেইজে গিয়ে লাইক দিয়ে আমাদের মেসেজ করুন।
chapter 5
ReplyDelete