তাওবা এবং ইনাবা কি? কুরআন ও হাদিসের আলোকে - What is Tawba & Inaba?
(toc)
তাওবা এবং ইনাবা কি?
প্রত্যেক মুসলমানের জানা দরকার যে, ইনাবা এবং তাওবা সম্পর্কে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হাজারো গুনাহের কাজ করতেছি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে কিভাবে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা/তাওবা করতে হয়। তাই কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাওবা এবং ইনাবা সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করা হলো:-
আমরা সবাই তাওবা শব্দটির সাথে কমবেশি পরিচিত। একই রকম আরও একটি শব্দ কুরআনে বহুবার এসেছে। শব্দটি হলো ইনাবা।
ইনাবা কী?
ইবনুল কাইয়্যিম (রা: ) বলেন, “ইনাবা হলো প্রতিনিয়ত আল্লাহকে খুশি করার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকা, বারবার আল্লাহর দিকেই ফিরে যাওয়া।” অর্থাৎ, এটা তাওবাই। কিন্তু এ তাওবা হলো ক্রমাগত তাওবা—বিরতিহীন তাওবা। ইনাবা করার জন্য মন থেকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে।
আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা নিয়ে, ভয় নিয়ে, আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে ছুটে যেতে হবে—আর তা হতে হবে কুরআন এবং সুন্নাহ মোতাবেক। আল্লাহর কিছু বান্দা আছে যারা রামাদানের শেষ দশ দিনে, দুনিয়ার সবকিছু পেছনে ফেলে, ইতিকাফের উদ্দেশ্যে আল্লাহর দিকে ছুটে যায়। ঠিক তেমনি ইনাবা হলো আল্লাহর দিকে অনবরত ইতিকাফ করা।
মানবহৃদয়কে আল্লাহর দিকে ছুটে যেতেই হবে—এতেই মানুষের জন্য সম্মান নিহিত। কেউ যদি আল্লাহর পানে না ছোটে, তাহলে অবশ্যই সে অন্য কারো দিকে ছুটবে, আর মানুষ হয়ে নিজের রব ছাড়া অন্য কারো দিকে ছোটার মধ্যে কোনো সম্মান নেই।
সুখের দিনে, কিংবা দুঃখের মুহূর্তে—সবরকম অবস্থায় আল্লাহর দিকে পুরোপুরি ফিরে যাওয়াই হলো ইনাবা। মুনইব হলো সেই ব্যক্তি, যে গুনাহর পর তাওবা তো করেই, বরং আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে নিজেকেই বদলে ফেলে—আল্লাহর সাথে নিজেকে একটা সার্বক্ষণিক সম্পর্কে জুড়ে নেয়। আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম (আ:) - এর ব্যাপারে বলেছেন,
“নিঃসন্দেহে ইবরাহীম ছিল ধৈর্য্যশীল, কোমল হৃদয়ের অধিকারী, এবং আল্লাহ অভিমুখী।” (সূরাহ হুদ: আয়াত ৭৫)
এই আয়াতে আল্লাহ্র বন্ধু ইবরাহীম (আ:)-এর তিনটি গুণের কথা বলা হচ্ছে। তিনি ছিলেন হালিম অর্থাৎ ধৈর্যশীল, আউয়াহ অর্থাৎ কোমল হৃদয়ের অধিকারী, এবং মুনইব অর্থাৎ বারবার আল্লাহর দিকে তাওবাকারী। কুরআনের একটি আয়াতকে কিছু উলামা সব চাইতে বেশি আশা জাগানিয়া আয়াত বলে মনে করেন। সেই আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমুখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও।” (সূরাহ যুমার: আয়াত ৫৩-৫৪)
এই আয়াতে তাওবার পরেই আল্লাহ উল্লেখ করেছেন ইনাবার কথা।
ইনাবার ১ম স্তর
ইনাবার তিনটি স্তর রয়েছে। প্রথম স্তরটি হলো ইনাবার সবচেয়ে মৌলিক স্তর—শিক ছেড়ে তাওহীদ এবং কুফর ছেড়ে ইসলামের দিকে ফিরে আসা। এটুকু না থাকলে একজন মানুষ আর মুসলিম থাকে না—কাফিরে পরিণত হয়। কুফর ছেড়ে ইসলামে আসাটা ইনাবার একেবারে প্রাথমিক স্তর। কুরআনের আয়াত থেকেই ইনাবার এই স্তরটির উল্লেখ পাওয়া যায়: “যারা তাগুতের ইবাদাত করা থেকে দূরে থাকে এবং ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়, তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। অতএব, সুসংবাদ দিন আমার বান্দাদের।” (সূরাহ যুমার : আয়াত ১৭)
ইনাবার ২য় স্তর
ইনাবার দ্বিতীয় স্তর হলো মুত্তাকীদের ইনাবা—গুনাহ ছেড়ে ভালো কাজ করা। যে এখনও ইনাবার প্রথম স্তরে আছে, কিন্তু দ্বিতীয় স্তরে পৌঁছাতে পারেনি, সে মুসলিম হলেও আমরা তার জন্য জাহান্নামের আশঙ্কা করি। কারণ সে তার গুনাহর কারণে জাহান্নামে যেতে পারে—যদি না আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।
ইনাবার এই স্তরের উল্লেখ পাওয়া যায় কুরআনের সূরাহ যুমারে,
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরাহ যুমার: আয়াত ৫৩)
এবং এর পরবর্তী আয়াত - “তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও তোমাদের কাছে আযাব আসার পূর্বে। এরপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।” (সূরাহ যুমার: আয়াত ৫৪ )
ইনাবার ৩য় স্তর
ইনাবার তৃতীয় আরেকটি স্তর রয়েছে। তৃতীয় স্তরটিকেই আমাদেরকে রামাদানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে হবে। আর সেটা হলো মুহসিনীনদের ইনাবা। এটাই হলো ইনাবার সর্বোচ্চ স্তর—দেহ এবং মন দিয়ে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া।
সবসময়, সকল পরিস্থিতিতে, বারবার কেবল আল্লাহর দিকেই ফিরে যাওয়া, এবং পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর সকল আদেশ মেনে নেওয়া। এটাই হলো সর্বোত্তম পর্যায়ের ইনাবা। ইবরাহীম (আ:) এভাবেই ইনাবা করেছেন, তাঁর ইনাবার স্তর ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ের ইনাবা।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“নিঃসন্দেহে ইবরাহীম ছিল ধৈর্যশীল, কোমল হৃদয়ের অধিকারী, এবং আল্লাহ অভিমুখী।” (সূরাহ হুদ: আয়াত ৭৫)
শুধু ইবরাহীম (আ:)- ই নন, কুরআনে নবী শুয়াইব (আ:)- এর ব্যাপারেও উল্লেখ করা হয়েছে, সায়্যিদিনা শুয়াইব (আ:) বলেছেন, “এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো থেকে সাহায্য আসতে পারে না, আমি তাঁর উপরই ভরসা করি এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাই।" (সুরাহ হুদ: আয়াত ৮৮)
ইবনু তাইমিয়্যাহ (৯) বলেন, “শয়তান এই স্তরের লোকদের পিছেই সবচেয়ে বেশি লাগে, কেননা সবচেয়ে উত্তম লোকগুলোকেই শয়তান ভুল পথে নিয়ে যেতে চায়।” সব ইমামদের ইমাম, তাওবাকারীদের নেতা, ইবাদাতকারীদের নেতা, আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “আল্লাহর কসম, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং প্রতিদিন ৭০ বার তাওবা করি। "
সহিহ বুখারির বর্ণনা মতে ৭০ বার, আর সুনান নাসাঈ এর বর্ণনা মতে নবীজি (#) ১০০ বার তাওবা করতেন। আল্লাহর রাসূল (**)-এর অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত তাঁর জীবনের সামনের পেছনের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে, এরপরও তিনি ৭০ থেকে ১০০ বার তাওবা করতেন। অথচ আমাদের গুনাহর কোনো কমতি নেই, মাত্র একটি গুনাহ মাফের ব্যাপারেও আমাদেরকে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। তাহলে চিন্তা করুন আমাদের কত বার মাফ চাওয়া উচিত?
গুনাহ অন্তরকে শক্ত করে দেয়। কাজেই পাপে মরিচা পড়া অন্তরটাকে কোমল করতে আল্লাহর কাছে তাওবা করুন। এটা একটা ব্যাধি। আল্লাহ তাআলা বলেন, “অতঃপর এ ঘটনার পরে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তা পাথরের মতো অথবা তার চাইতেও কঠিন...।” (সূরাহ বাক্বারা : আয়াত ৭৪)
গুনাহ করলে অন্তর কালো হয়ে যায়, কাজেই তাওবাহ করুন। তাওবার মাধ্যমে অন্তরকে পরিষ্কার করে নিতে রামাদানের মতো এমন বরকতময় সময় আর পাবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, “কখনও না, বরং তারা যা করে, তা তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।” (সুরাহ মুতাফফিফীন: আয়াত ১৪)
ফোঁটা ফোঁটা করে আমাদের অন্তরে প্রতিনিয়ত দাগ পড়ছে। একটা সময় এটা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে পরিষ্কার করা জরুরি হয়ে পড়ে। আউন ইবনু আব্দুল্লাহ বলেন, “যারা প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর কাছে তাওবা করে, তাদের সাথে থাকুন, কারণ তাঁরাই সবচেয়ে নরম মনের মানুষ।”
তাওবা বান্দা আর আল্লাহর মধ্যকার একটা অসাধারণ চুক্তি। কেমন সেই চুক্তি? আপনি একটা গুনাহ করলেন, নিজের উপর জুলুম করলেন, এরপরও আপনি তাওবা করুন, গুনাহর কাজ থেকে সরে আসুন—আল্লাহ আপনার সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন। রামাদানের জন্য কেউ কি খাবার-দাবার কেনার কথা ভুলেছে? না। মাগরিবের আগেই সবাই ইফতার প্রস্তুত করে ফেলে। অথচ নিজেকে প্রস্তুত করার কথা আমরা ভুলে যাই। রামাদানের খাবার জমানোর চাইতে তাওবা, ইস্তিগফার আর ভালো আমল করা কি বেশি জরুরি না?
হে আমাদের রব, আমাদের গুনাহ যদি পাহাড় সমানও হয়ে থাকে, তোমার ক্ষমা তো তারচেয়েও বড়! যদি নেককাররাই কেবল তোমাকে ডাকতে থাকে, তবে আমদের মতো পাপীরা কোথায় যাবে?
হে আমাদের রব, তুমি আমাদেরকে যেভাবে ডাকতে বলেছ, আমরা সেভাবেই তোমাকে ডাকি। বিনয়ের সাথে, একাগ্র হয়ে। তুমি যদি আমাদের ডাক না শুনো, তাহলে কে শুনবে? তুমি যদি আমাদেরকে ফিরিয়ে দাও, তাহলে কে আমাদেরকে ক্ষমা করবে? তুমি যদি আমাদের উপর দয়া না করো, তাহলে আর কে দয়া করবে?
তুমি ছাড়া আমাদের আর কোনো আশা নেই, ইয়া রব! তোমার উপরই আমাদের সকল আশা ভরসা, নিশ্চয়ই তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবে! আমরা তো মুসলিম, ঈমান এনেছি, শুধু তোমারই ইবাদাত করি ।
“আমি তাওবা করি, তারপর আবারো গুনাহ করি, আবার তাওবা করি এবং এরপর আবার গুনাহ করি। আমার করণীয় কী?
তাওবা এবং ইনাবা নিয়ে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি করা হয় সেটা হলো, “আমি তাওবা করি, তারপর আবারো গুনাহ করি, আবার তাওবা করি এবং এরপর আবার গুনাহ করি। আমি হাল ছেড়ে দিয়েছি, নিজেকে নিয়ে আমি হতাশ।”
আপনি কি কুরআন খুলে দেখেছেন? জানেন, আল্লাহ আপনাকে কী বলছেন? আল্লাহ আপনাকে ডেকে বলছেন, “বলুন, হে আমার বান্দা, যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরাহ যুমার: আয়াত ৫৩ )
আল্লাহ এখানে এমনটি বলেননি যে, 'হে মুমিন বান্দারা', এবং তিনি এটিও বলেননি, 'হে মানবজাতি' – যেভাবে তিনি কুরআনে অনেকবার বলেছেন। এ আয়াতে তিনি মুত্তাকীদেরকেও বলছেন না, নেককারদেরকেও বলছেন না, মুহসিনদেরকেও বলছেন না, আমলে অগ্রগামীদেরকেও বলছেন না। এ আয়াতে তিনি তাঁর গুনাহগার বান্দাদের সম্বোধন করে বলেছেন—নিরাশ হয়ো না।
আসিম ইবনু রাজা বলেন, উমার ইবনু আবদুল আযিয একবার এক বক্তৃতায় বলেন, “তোমরা যদি কোনো গুনাহ করে ফেলো—তাহলে তাওবা করো, যদি আবারও গুনাহে লিপ্ত হও—তাহলে আবারও তাওবা করো, এরপর আবারও গুনাহে জড়িয়ে পড়লে—আবারও তাওবা করো। গুনাহ হলো মানুষের গলার ফাঁসের মতো। গুনাহ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। আর সবচেয়ে জঘন্য মাত্রায় ধ্বংস হলো গুনাহ করে তাওবা না করা এবং গুনাহর উপর অবিচল থাকা।”
সুনান আত তিরমিযির এক হাদিসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন,
হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে থাকবে এবং আমার থেকে (ক্ষমা পাওয়ার) আশায় থাকবে, তোমার গুনাহ যত বেশিই হোক, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে কোনো পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহর পরিমাণ যদি মেঘমালা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, তারপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কাউকে শরীক না করে থাকো, তাহলে তোমার কাছে আমিও পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা নিয়ে হাজির হব।”
কাজেই তাওবার মাধ্যমে আপনি গাফুরের সাথে ডিল করছেন, আপনি আর রাহমানের সাথে ডিল করছেন, আপনি আফু এর সাথে ডিল করছেন। আল্লাহ তাআলার এই গুণগুলো থেকে এটাই হলো আপনার প্রাপ্তি যে—তিনি আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন।
ইবরাহীম ইবনু শাইবান বলেছেন, তিনি ২০ বছর বয়সী এক যুবককে চিনতেন। শয়তান তাকে এ কথা বলে প্ররোচিত করে যে, তুমি তো এখন যুবক। তুমি এখনই কেন তাওবা করছ, এখনই কেন দুনিয়াকে ভোগ করা থেকে বিরত থাকছ? তোমরা সামনে এখনও কত লম্বা সময় পড়ে আছে। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ছেলেটা আবার সেই গুনাহর জীবনে ফিরে গেল।
এভাবে গুনাহর মধ্যে ডুবে থাকা অবস্থাতেই হঠাৎ একদিন তার মনে পড়ে গেল আল্লাহর অনুগত হয়ে কাটানো সময়টার কথা। একজন মুসলিম গুনাহ করার সময়েও মুসলিমই থাকে, তার অন্তরে এখনো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ গেঁথে আছে। সে তখন আগের সুন্দর জীবনটার জন্য কাঁদতে শুরু করল।
নিজেকে জিজ্ঞেস করল, আল্লাহ কি আর আমাকে কবুল করবেন? এরপর সে একটা আওয়াজ শুনল, সম্ভবত সে নিজেই নিজেকে বলছিল, “তুমি আমার ইবাদাত করলে, আমি তোমাকে শুকরিয়া জানালাম। তুমি গুনাহ করলে, আমি তোমাকে অবকাশ দিলাম। তুমি ফিরে আসলে, আমি তোমাকে কবুল করে নিলাম।”
যদি আপনি তাওবা করার পরও শয়তানের ফাঁদে পড়ে যান, তবুও ফিরে আসুন, এতে লজ্জা পাবার বা নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনি যখন অনবরত তাওবা করবেন, এটা শয়তানের সাথে একটা কুস্তি লড়াইয়ের মতো। প্রত্যেকবার যখন আপনি তাওবা করবেন, সেটা হবে শয়তানের পরাজয়, আর আপনার বিজয়।
কিন্তু যখনই আপনি নিরাশ হবেন আর তাওবা করা ছেড়ে দেবেন, তখনই শয়তান আপনার উপর বিজয় লাভ করবে। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে শয়তান জিতে যাক। কখনও হাল ছাড়বেন না। কখনও ভাববেন না যে আপনি গুনাহ থেকে আর বেরোতে পারবেন না। খারাপ কাজের সাথে লড়াই চালিয়ে যান। গুনাহর সাথে যুদ্ধ করুন।
হয়তোবা আপনার কোনো একটা তাওবা এতটাই মনের গহীন থেকে বেরিয়ে আসবে যে, সেই ডাক শুনে মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন—আর আপনাকে জান্নাতের বাসিন্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে দেবেন।
এত সব আয়াত আর হাদিস থাকার পরেও আপনি কীভাবে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারেন, যখন আল্লাহ নিজে আপনাকে ডাকছেন? আল্লাহ আপনাকে কেন তাওবাহ করতে ডাকছেন? তাঁর তো আমাকে বা আপনাকে কোনো প্রয়োজন নেই, তিনি অমুখাপেক্ষী, সব কিছুর মালিক।
তিনি ডাকছেন কারণ তিনি আর রাহমান, আল গাফুর, আল আফুউ। আল্লাহর কসম, আপনি সেই মহান রবের কাছে ক্ষমা চাইছেন—যার দয়া আপনার মমতাময়ী মায়ের থেকেও বেশি।
তাওবা করলে লাভ কি/উপকার কী?
আল্লাহর শপথ, তাওবার মাধ্যমে আপনি এমন এক সত্ত্বার সাথে সম্পর্ক করছেন যিনি আপনার প্রতি আপনার মায়ের চেয়েও বেশি দয়াশীল। সহিহ বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, এক যুদ্ধের পর সাহাবিরা বসেছিলেন এবং তাঁরা যুদ্ধবন্দীদের মধ্য থেকে এক মহিলাকে দেখতে পেলেন।
সে তার ছেলেকে খুঁজছিল, প্রতিটি বাচ্চার কাছে সে যাচ্ছিল, কোলে তুলে নিচ্ছিল, জড়িয়ে ধরছিল, পরিচর্যা করছিল, এরপর অন্য বাচ্চার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। খুবই মর্মস্পর্শী এই দৃশ্য রাসূলুল্লাহ () এবং সাহাবিদের খুব নাড়া দিয়েছিল। নবীজি (সা:) সিদ্ধান্ত নিলেন ঘটনাটিকে সাহাবিদের জন্য শিক্ষণীয় বানাবেন।
তিনি তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের কি মনে হয় এই মা কখনো তার ছেলেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে পারবে?” তাঁরা বললেন, “না, কখনোই না।” নবীজি (*) বললেন, “এই মা তার সন্তানের প্রতি যতটা দয়াশীল, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি তার চেয়েও বেশি দয়াশীল।”
সূরাহ নিসায় আল্লাহ যখন উত্তরাধিকার নিয়ে কথা বলেছেন, তখন তিনি সন্তানদের যত্ন নেওয়ার জন্য মা-বাবার প্রতি আদেশ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন” (সূরাহ নিসা: আয়াত ১১)
অনেক মানুষ ভাবে তাদের মা-বাবাই তাদের প্রতি সবচেয়ে বেশি দয়াবান। কিন্তু যাদের আপনি সবচেয়ে দয়াবান মনে করেন, এই আয়াতে আল্লাহ তাদেরকেই নির্দেশ দিচ্ছেন যেন তারা তাদের সন্তানদের প্রতি যত্নশীল হয়। তাহলে যিনি আদেশ করছেন, সেই মহান আল্লাহর দয়া কতটা বিশাল?
কোনো কোনো সৎকর্মশীল মানুষরা দু'আ করতেন এই বলে, “হে আল্লাহ, আমার মা আমার প্রতি সবচেয়ে বেশি দয়াশীল, তিনি কখনো আমাকে কষ্ট দেবেন না, বরং কষ্ট থেকে রেহাই দেবেন। হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রতি আমার মায়ের চাইতেও বেশি দয়াশীল, সুতরাং আমাকে কষ্ট থেকে রক্ষা করুন ইয়া আরহামার রাহিমীন।”
আপনি হয়তো কারো সাথে একবার খারাপ আচরণ করে ফেললেন। অনেক সময় খারাপ আচরণ করার আগেই, কিংবা আপনার কোনো ভুল হয়ে গেলে তা শোধরানোর সুযোগ দেওয়ার আগেই মানুষ আপনাকে পরিত্যাগ করে বসে। কিন্তু আল-গাফুর, আর-রাহীম, আল আফু এমনটা নন—তিনি ভিন্ন মানদণ্ডে আপনাকে বিচার করেন। “...এবং আল্লাহর উদাহরণই সর্বশ্রেষ্ঠ...” (সূরাহ নাহল: আয়াত ৬০)
হতাশা থেকে মুক্তির পথ তাওবা
কাজেই, কখনো হতাশ হবেন না। সহিহ মুসলিমে আবু সাঈদ আল খুদরি () থেকে বর্ণিত একটি সহিহ হাদিসে এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা আছে—যে ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছিল। শিরকের পর সবচেয়ে বড় গুনাহগুলোর একটি হলো অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা।
সেই হত্যাকারী এক মূর্খ আবেদ ব্যক্তির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল—সে যদি তাওবা করে কবুল হবে কি না। সেই মূর্খ আবেদ জবাব দিল, “৯৯ জন হত্যা করার পর তাওবা ? কক্ষনো না!” তখন সেই হত্যাকারী ঐ আবেদকেও হত্যা করল।
এই ঘটনার মাঝে একটা শিক্ষা আছে। যদি তাওবার দরজা দুনিয়াতে পুরোপুরি বন্ধই হয়ে যায়—তাহলে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে। কারণ তখন আপনি ভাববেন আপনার অপরাধ তো আর কখনোই ক্ষমা করা হবে না, তাহলে অপরাধই করে যাই! যেহেতু নিজেকে শোধরানোর সুযোগ নেই তাহলে আরও কিছু অপরাধ করলে কী-ই বা আসে যাবে!
আপনি পুরোপুরি অসৎ হয়ে যাবেন, যা খুশি করতে পারবেন, কারণ আপনার হারাবার কিছুই নেই। সেই হত্যাকারী ব্যক্তি এরপর একজন আলিমকে জিজ্ঞেস করল, “আমি ১০০ জন মানুষকে হত্যা করেছি, আমি কি তাওবা করতে পারব?” তিনি বললেন, “অবশ্যই পারবে। তোমার উচিত এই খারাপ এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া।”
আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে শুধু ক্ষমাই করলেন না, তার জন্য পুরো জমিনকে বদলে দিলেন। সে ব্যক্তি খারাপ এলাকা ছেড়ে নতুন এক শহরে যাওয়ার পথে দুই এলাকার মাঝে এক জায়গায় মারা গেল। তখন সৎ আত্মা গ্রহণকারী ফেরেশতা ও অসৎ আত্মা গ্রহণকারী ফেরেশতার মাঝে ঝগড়া বেঁধে গেল।
আর আল্লাহ তখন তার সম্মানে জমিনকে এমনভাবে সংকুচিত করে দিলেন যেন সৎ আত্মা গ্রহণকারী ফেরেশতারা তাকে গ্রহণ করতে পারেন। যে লোকটি ১০০ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করল এবং অতঃপর তাওবা করল, তার জন্য আল্লাহ জমিনকে সংকুচিত করে দিলেন। তাহলে সেই রব আপনার জন্য কী করবেন!
যখন আপনি হতাশা অনুভব করবেন এবং দুনিয়ার প্রতি নিরাশ হয়ে পড়বেন, তখন আসহাবুল উখদুদের ঘটনা স্মরণ করুন। এটি ছিল এক গণহত্যার কাহিনী, যারা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'র কালিমায় বিশ্বাস করত তাদের হত্যা করা হয়েছিল। তারা এক সৎকর্মশীল বালককে হত্যা করেছিল যে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, এটি ছিল নির্বিচারে সংঘটিত একটি গণহত্যা। আল্লাহ হত্যাকারীদের ব্যাপারে কী বলেছেন?
“যারা মুমিন পুরুষ ও নারীকে নিপীড়ন করেছে, অতঃপর তাওবা করেনি, তাদের জন্যে আছে জাহান্নামের শাস্তি, আর আছে দহন যন্ত্রণা।” (সূরাহ বুরুজ: আয়াত- ১০)
আল্লাহ বলেছেন—যারা মুমিন পুরুষ ও নারীকে নিপীড়ন করেছে, অতঃপর তাওবা করেনি। এই কথার অর্থ কী? অর্থ হলো, তারা যদি গণহত্যা চালানোর পরে তাদের অপরাধের জন্য তাওবা করত তাহলে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিতেন। কিন্তু আল্লাহ বলেন—এরপর তারা তাওবা করেনি।
ছোট-বড় যেকোনো গুনাহ থেকেই আপনি তাওবা করবেন এবং আল্লাহ সব মাফ করে দেবেন। আর রামাদানই তাওবার জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। তাই এখনই শুরু করুন। প্রথমত, অতীতের জন্য অনুতপ্ত হোন। প্রতিজ্ঞা করুন যে, ঐ কাজ আর করবেন না এবং বলুন 'আস্তাগফিরুল্লাহ'।
যদি এর সাথে অন্য মানুষের হক জড়িত থাকে তাহলে সরাসরি তাদের সেটি ফিরিয়ে দিন—না হলে পরোক্ষভাবে। যদি মনে হয় এর কারণে ফিতনা সৃষ্টি হতে পারে তাহলে তাদের জন্য দু'আ করুন, তাদের নামে দান-সাদাকা করুন অথবা ভালো কাজে তাদের নাম উল্লেখ করুন। খুবই সহজ।
আপনি আন্তরিকভাবে এই কাজ করুন, আল্লাহর কসম, আল-গাফুর, আর-রাহীম তা গ্রহণ করবেন। “তিনি তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন, পাপসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমাদের কৃত বিষয় সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।” (সূরাহ শূরা: আয়াত ২৫)
তাওবা গ্রহনকারীর জন্য আল্লাহর ওয়াদা
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “আল্লাহর চাইতে অধিক সত্যবাদী কে?” (সূরাহ নিসা: আয়াত ১২২)
শুধুমাত্র যে তাওবা গ্রহণ করবেন তা না, তিনি সেগুলোকে সৎকর্মে রূপান্তর করবেন। “কিন্তু যারা তাওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের পাপকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন। এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরাহ ফুরক্বান: আয়াত ৭০)
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে ভালোবাসেন। এবং তিনি তাওবা করার জন্য তাদের ভালোও বাসবেন। ” (সূরাহ বাক্বারা : আয়াত ২২২)
অতএব, উঠে দাঁড়ান এবং ঝেড়ে ফেলুন গুনাহের ধুলো। ওযু করে দুই রাকাত সালাত আদায়ের মাধ্যমে আপনার তাওবাকে আরও বেশি প্রাণবন্ত এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলুন। আল্লাহর কাছে আপনার তাওবার ঘোষণা দিন, পাপের কথা স্মরণ করে কাঁদতে থাকুন এবং আল্লাহর পথে যাত্রা শুরু করুন। তাওবা এমন এক ছায়া—যা আপনাকে কখনো ছেড়ে যাবে না। তাওবা সৎকর্মশীলদের জন্য এক সান্ত্বনা।
নিজের জ্ঞান অথবা ভালো কোনো আমল নিয়ে অহঙ্কার করবেন না। আল্লাহর কসম, এগুলো আপনার যত বেশিই থাকুক না কেন, আমরা সবাই পাপের নৌকায় সফর করছি। আমরা সবাই একই নৌকায় আছি।
সহিহ আল-বুখারির একটি চমৎকার হাদিস আছে। এক বান্দা গুনাহ করল এবং বলল, “হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দিন।” সুতরাং আল্লাহ বললেন, “আমার বান্দা একটি গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে তার একজন রব আছেন যিনি তার গুনাহ মাফ করেন এবং গুনাহের জন্য তাকে শাস্তি দেন। আমি তাকে মাফ করে দিলাম।” এরপর সে ব্যক্তি আবার গুনাহ করল।
আল্লাহ আমাদের চিনেন, তিনি তাঁর বান্দাদের ভালো করেই জানেন। তিনি বলেছেন, “যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কী করে জানবেন না?” (সূরাহ মুলক: আয়াত ১৪) আল্লাহ জানেন যে আমরা বারবারই গুনাহ করব, বেশি বেশি গুনাহ করতে থাকব। তিনি জানেন যে, তিনি কাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের স্বভাব কেমন, কারণ তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা। এখন সেই লোকটি আবারও গুনাহ করল এবং বলল, " হে আল্লাহ, আমার গুনাহ মাফ করে দিন।”
আল্লাহ বললেন, “আমার বান্দা একটি গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে তার একজন রব আছেন যিনি তার গুনাহ মাফ করেন এবং গুনাহের জন্য তাকে শাস্তি দেন। আমি তাকে মাফ করে দিলাম।” এরপর সে তৃতীয়বারের মতো বলল, “হে আল্লাহ, আমি গুনাহ করেছি, আমাকে মাফ করে দিন।”
আল্লাহ বললেন, “আমার বান্দা একটি গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে তার একজন রব আছেন যিনি তার গুনাহ মাফ করেন এবং গুনাহের জন্য তাকে শাস্তি দেন। তুমি যা ইচ্ছে কর, আমি তোমাকে মাফ করে দিলাম।” আলাহ এখানে আসলেই বলেছেন, ‘তুমি যা ইচ্ছে কর, আমি তোমাকে মাফ করে দিলাম।' তবে এর মানে এই না যে—আপনি জান্নাতের ফ্রী টিকেট পেয়ে গেলেন। এর মানে হলো আল্লাহ আপনাকে ততক্ষণ ক্ষমা করতে থাকবেন—যতক্ষণ আপনি আন্তরিকভাবে তাওবাহ করতে থাকবেন।
আল্লাহর কসম, এই হাদিসের মাধ্যমে এত বেশি আশার সঞ্চার হয় যে মাঝে মাঝে আমাদের সাবধান করে দিতে হয় মানুষ যেন অতিরিক্ত আশা করে নিজের বিপদ ডেকে না আনে। বেশি আবেগতাড়িত হবেন না। পরবর্তীতে আবার গুনাহ করব—এই চিন্তা মাথায় রেখে তাওবা করবেন না। এটি জালিয়াতি —আল্লাহর সাথে প্রতারণা করার চেষ্টা।
আল্লাহকে খুশি করুন। সহিহ আল-বুখারিতে আছে, কেউ তাওবা করলে আল্লাহ সেই ব্যক্তি থেকে অধিক খুশি হন—যে ব্যক্তি মরুভূমির সফরে তার খাবার, পানি, বাহন ও উট হারিয়ে ফেলে, আর একটি গাছের পাশে বসে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
হঠাৎ সে দেখে তার উটটি খাবার, পানি এবং তার প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নিশ্চিত মৃত্যুর প্রতীক্ষা থেকে হঠাৎ পরিত্রাণ! উত্তেজনার আতিশয্যে সে তখন বলে বসে, “হে আল্লাহ, আপনি আমার বান্দা এবং আমি আপনার রব!”
একটা মানুষ নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলে কতটা খুশি হতে পারে? বান্দার তাওবায় আল্লাহ তার চাইতেও বেশি খুশি হন। সুতরাং আল্লাহকে খুশি করুন, হৃদয়ের সবটুকু আল্লাহর প্রতি উজাড় না করে ঘুমাবেন না। শুধু আজ নয়—প্রতিদিন। শুরু করুন আজ থেকেই, যেন আজ মারা গেলে আপনি পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে পারেন।
এটা ভেবে কি আমরা লজ্জিত হই না যে, আল্লাহ প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন আর আমরা সে সময়ে ঘুমিয়ে থাকি বা পাপে লিপ্ত থাকি? “কোনো কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।” (সূরাহ শূরা: ১১)
আল্লাহ এমন এক সময়ে অবতরণ করেন, যখন সবাই গুনাহ করছে না হয় ঘুমোচ্ছে। তারা হারাম কিছু দেখছে বা হারাম কিছু পান করছে, অথবা তারা গভীর ঘুমে অচেতন। পৃথিবীর বেশিরভাগ লোকের অবস্থায়ই এমন। আপনি তাদের মতো হয়ে যান যারা এই সময়টায় আল্লাহর কাছে কান্না করে, ভিক্ষা চায় এবং অনুনয় বিনয় করে।
পরিশেষে, যখন কেউ কোনো সৎ কাজ করে, তখন সে সেটির প্রভাব দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জায়গায় দেখতে পাবে। দুনিয়াতে আপনি যা পাবেন তা বোনাস, কিন্তু মূল লক্ষ্য হচ্ছে আখিরাতে।
“যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো (দুনিয়াতে) এবং প্রতিদানে তাদেরকে (জান্নাতে) তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরস্কার দিবো যা তারা করত।” (সূরাহ নাহল: আয়াত ১৭)
এর বিপরীতটাও সত্য। ইবনু আবি মুলাইকাহ বলেছেন, যখনই আসমা (রা:)-এর মাথা ব্যথা হত, তিনি মাথা চেপে ধরে বলতেন, “নিশ্চয়ই এটা আমার কোনো গুনাহের কারণে হয়েছে এবং আল্লাহ এর অধিকাংশই মাফ করে দিয়েছেন।” এই বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য পরিষ্কার এবং দ্ব্যর্থহীন,
“তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন।” (সূরাহ শূরা: আয়াত ৩০)।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে উপরোক্ত কুরআন ও হাদীসের বাণী মেনে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।