বিমূর্ত ছবির এক টুকরো রোদ - A piece of abstract photo sunshine (Part 11)

Mofizur Rahman
0

A piece of abstract photo sunshine - বিমূর্ত ছবির এক টুকরো রোদ - (Part 11)

বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১

বিমূর্ত ছবি

অনেকদিন পর সৌরভের মনটা হারানো স্মৃতিতে ভরে যায়। ভোরে বিছানা ছাড়তে ভেতরটা কেঁপে উঠে কয়েকবার। পাশে মেরিনা ঘুমে অচেতন। দুই বৎসরের শিশু কন্যাটি ঘুমের ভেতর মাকে জড়িয়ে আছে যেন জগতের আর কেউ ভাগ বসাতে না পারে। ছেলেটি এখন আলাদা বিছানায় শোয়। স্কুলে ভর্তি হয়েছে এবার। সেও ঘুমে।

সৌরভ কাউকে না জাগিয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে পড়ে। আটটার আগে ভার্সিটি পৌঁছতে হবে । সে রাস্তায় নেমে এদিক ওদিক দেখে। তেমন যানবাহন এখনও নেমে আসেনি। রাস্তা অনেকটা ফাঁকা। এসময়ে লোকজন প্রায় পায়ে হেঁটে চলে।

ভোরের সূর্য উঠলেও সকালের শান্ত হওয়ায় এখনও চারিদিক ডুবে আছে । সকালে গাড়ি এসে প্রতিদিন সৌরভকে অফিসে নিয়ে যায়। আজ আসবে না, নিষেধ করেছে সে। ব্যক্তিগত কাজ সে অফিসের গাড়ি ব্যবহার করতে চায় না। অনেক এই সুযোগটা ছাড়ে না। সেও ইচ্ছা করলে পারে। কিন্তু করে না। এখনও কিছু কিছু নীতিবোধ আঁকড়ে আছে।

দাঁড়িয়ে না থেকে হাঁটতে থাকে। চকবাজার মোড়ে এসে টেক্সি খুঁজে। ষ্ট্যান্ডে যে ক'জন চালক যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করে সবাই আগ্রহী হয়ে উঠে।
সে প্রথমটিতে উঠে বসে। চালক ষ্টার্ট দেয়।

ভোরের বাতাস গায়ে লাগে এখন ঠান্ডা হিমেল হওয়ার মত কানের দু'পাশে বয়ে যেতে থাকে সকালের রোদ উঁচু উঁচু দালানের ছাদ পেরিয়ে এখনও রাস্তায় এসে পৌঁছতে পারেনি। তবে কোথাও কোথাও দেওয়ালের পাশ ঘেষে টুকরো টুকরো হয়ে রাস্তার উপরে এসে পড়ছে। চালক রাস্তা ফাঁকা পেয়ে গতি একটু বাড়িয়ে দেয়।

অক্সিজেনের মোড়ে এসে পাশের পেট্রোল পাম্পে গিয়ে দাঁড়ায় পেট্রোলের গন্ধটা সৌরভ সইতে পারেনা, পকেট থেকে রুমাল বের করে নাকে মুখে লাগিয়ে রাখে । সামনের টেম্পোতে পেট্রোল ভরিয়ে টেক্সিতে পুরায়। চালক পেছনে ফেরে বলে, স্যার আপনেই প্রথম ক্ষ্যাপ, ভাড়ার টাকাটা দিলে তেলের দাম দিয়ে দিতাম। সৌরভ পঞ্চাশ টাকার একটা নোট তাকে দিয়ে বলে তাড়াতাড়ি চল; আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।

চালক গতি আরো বাড়িয়ে দেয়। শহরের রাস্তা পেরিয়ে টেক্সি বিশ্বরোডের পথ ধরে দ্রুত এগিয়ে চলে । টেক্সির গতির সাথে সাথে বাতাসের বেগও যেন বেড়ে চলে । অনেকক্ষণ পর পর দুরপাল্লার ভারী যানবাহন শোঁ শোঁ আওয়াজ তুলে শহরের দিকে এগিয়ে যায়। এতবড় রাস্তায়ও সৌরভের ভয় লাগে। রাস্তার এক পাশে গিয়ে দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসা বড় যানটিকে ক্রস করে যায় মনে হয় পিঁপড়ার মত পিষে মারলেও খবর হবে না।

সৌরভ একবার চালককে আস্তে চালাতে বলতে চায়, আবার থেমে যায়। আটটার আগে হলে পৌঁছতে না পারলে জমা দেওয়া নাও যেতে পারে। তাই আর কিছু বলে না। চালক ইচ্ছামত গতি বাড়িয়ে টেক্সি ভার্সিটির এক নম্বর গেইটে নিয়ে আসে । বাঁয়ে মোড় নিয়ে ভেতরে ঢুকে রেল লাইন ক্রস করতে মনে হয় ভার্সিটি এসে গিয়েছে। রাস্তার দু'পাশের সারি সারি গাছ পেছনে ফেলে ট্রেন স্টেশনের পাশ দিয়ে সৌরভ ভেতরে ঢুকে পড়ে । টিন শেডের রেল ষ্টেশনটির মতো তাদের অপেক্ষা যেন এখনও শেষ হয়নি। রাতের শিশির বিন্দু ভোরের রোদ মেখে দাড়িয়ে আছে।

কখন সকালের ফার্স্ট ট্রেন আসবে। টেক্সি শাহজালাল হলের গেটে এসে দাঁড়ায়। সৌরভ নেমে এদিক সেদিক না তাকিয়ে ঢাল বেয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে । হাতের বাম পাশের বাগানের দিকে না তাকিয়ে পারে না। আগের মত ফুলের মেলা এখন আর নেই। ছেঁড়া ছেঁড়া ফুল ফুটেছে। অনেক স্মৃতি ফুলের গাছে গাছে পাতায় পাতায় যেন এখনও জড়িয়ে আছে। এসব ভাবার সময় এখন নেই। সে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায়। হলের সামনে ঝর্ণা এখন আর কানায় কানায় পানি ভরে উঠে না।

সে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে অফিসের সামনে দাঁড়ায়। বাইরের টুলে বসা গার্ড পিয়ন কয়জন সৌরভকে এতদিন পরও চিনতে পারে। ওকে সামাল দিয়ে দাঁড়ায় সৌরভ নাম ভুলে গেলেও সৌজন্য দেখিয়ে জানতে চায় কেমন আছেন আপনারা। ওরা বলে, ভালো। এতদিন পরে স্যারের কি মনে পড়লো আমাদের। সার্টিফিকেটের জন্য এসেছি। পিয়ন আগ বাড়িয়ে বলে, বড়ুয়া বাবু এখন এসব দেখেন, উনি এসেছেন, ভেতরে আছেন। সৌরভ বড়ুয়ার কথা ঠিক মনে করতে পারলো না।

কিন্তু ভেতরে গিয়ে দেখলো পরিচিত লোকটি। পদোন্নতি পেয়ে অফিসার হয়েছে। সৌরভকে বেশ সহায়তা করলো । পাশের রুমে সেকশন অফিসার হাবিব সাহেবও। পনের বৎসর আগের তরতাজা যুবকটি এখন আর সেরকম নেই । শরীর অনেক পড়ে গিয়েছে । প্রৌঢ়দের মত দেখাচ্ছে। কিন্তু অমায়িক কথাবার্তা এখনও আগের মত আছে। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলে যায় কিন্তু মানুষের স্বভাবটা সহজে বদলায় না। বড়ুয়া কাগজপত্র সব দেখে বললো এখনও প্রভোস্ট আসেননি, কাগজ পত্র সব রেখে যান । স্যার এলে আমি সুপারিশ নিয়ে রাখবো । প্রভোস্ট স্যার আসবেন তো?

পর পর দু'দিন বদ্ধ গিয়েছে বিশেষ কোন অসুবিধা না হলে অবশ্যই আসবেন । হাবিব সাহেব পাশে দাঁড়িয়ে শুনলেন। এতদিন পর ভার্সিটি এসেছেন। পুরানো জায়গা একটু ঘুরে ফিরে দেখুন । কখন এক ঘন্টা কেটে যাবে টেরও পাবেন না সৌরভ নীচে এসে হোসেনের দোকানের কাছে দাঁড়ায়। ছাত্ররা সামনে কাঠের টুলে বসে চা-বিস্কিট খায়। আশে-পাশের দোকানের টুলও ভর্তি প্রায়। এসময় বেশিরভাগ ছাত্ররা দোকানে এসে সকালের নাস্তা করে।

অনেকদিন পরও দোকানের চেহারা তেমন পাল্টায়নি। আগের মত প্লাষ্টিকের প্লেট, টিনের জগ, গ্লাস আর কমদামী চায়ের কাপ-পিরিচ এখনও রয়ে গেছে। সৌরভ কনডেন্স মিল্কের এক কাপ চা খায়। পুরানো স্বাদটা যেন আবার খুঁজে পায়। চা খাওয়ার পরও খানিক বসে থাকে। ছাত্র-ছাত্রীদের ফ্যাকালটিতে যাওয়ার দৃশ্যটা ভালো লাগছে। বিশেষ করে কোন কোন রিক্সায় তিনজন একসাথে বসে হাওয়া খেতে খেতে এগিয়ে যায়। ছেলে বা মেয়ে যেন কোন বিভেদ নেই। একই রিক্সায় হয়ত দুইজন মেয়ে মাঝে একটু উপরে একজন ছেলে দিব্যি বসে আছে।

কোন জড়তাই যেন তাদের স্পর্শ করতে পারছে না। সৌরভদের সময় এভাবে ছেলে মেয়েরা রিক্সায় শেয়ার করতো না। সেকেন্ড ট্রেন আসার পর নিঃশব্দতা ভেঙে যায়। ছাত্র-ছাত্রীর কোলাহলে মেতে উঠে স্টেশন থেকে আমানত হলের মোড় পর্যন্ত। দোকানের সামনে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যায় না। গাড়িগুলি একের পর এক ফ্যাকালটির দিকে ছুটে চলে। তাড়াহুড়া করে যারা উঠতে পারে তারা আগে যেতে পারে। এসময়ে অনেকের এক কাপ চা না খেলে চলে না। সৌরভ এভাবে নিজের ভালো লাগার জন্য বসে থেকে একটা সিট দখল করে রাখা ঠিক হবে না ভেবে উঠে পড়ে।

রাস্তার পাশ দিয়ে উঁচু নিচু টিলার পথ ধরে ষ্টেশনের কাছে আসে। খানিক আগে যাওয়ার সময় ষ্টেশনের সামনের এ মাঠটি ফাঁকা ছিল। এখন যেন শরতের শিউলি বকুলের মেলা বসেছে। কিছুক্ষণ পর হয়ত বাতাসের সাথে উড়ে যাবে যেন। এখানে দাঁড়িয়ে থাকার মাঝে যে কত আনন্দ তা পড়ার সময় ভাবতে পারেনি। তখনও কেউ কেউ জুটি বাঁধতো, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আলাপ করতো। ষ্টেশনের বেঞ্চে ঘন্টর পর ঘন্টার পাশাপাশি বসে থাকতো

ট্রেনের কম্পার্টমেন্টের কোণার সিটে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতো। এসব দৃশ্য কখনো তাকে তেমন আকর্ষণ করতে পারেনি। কেন যেন মনে হতো পড়তে এসে এসবে কেন জড়ানো। কিন্তু ক্লাসের একটি মেয়েকে ভালো লাগতো। কেমন যেন চুপচাপ স্বভাবের মেয়েটি অন্যদের চেয়ে কিছুটা আলাদা। শান্ত চেহারার মাঝে কোথায় যেন এক টুকরো দুঃখও লুকিয়ে আছে এমন মনে হতো। সে মেয়েটি অনার্স ফাইনাল দেওয়ার পর কোথায় উধাও হয়ে গেল কেউ বলতে পারলো না।

মাষ্টার্স ফাইনালে আবার কোথা থেকে এসে পরীক্ষাও দিলো। তখন কিন্তু মেয়েটির চেহারায় লুকিয়ে থাকা দুঃখটা আনন্দের ভেতর মিলিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে খানিকটা অপরিচিত করে তুললো। পরে অবশ্য জানা গেল মেয়েটি বিয়ের পরপরই স্বামীর সাথে কানাডা চলে গিয়েছে।

সৌরভের সাথে মেয়েটির তেমন একটা কথা হয়নি। মেয়েটিকে যে ভালো লাগতো তা ঠিক সে বুঝতে পারতো কিনা তাও জানা হয়নি কখনো। এমন কোন ঘটনা নেই যার জন্য মেয়েটিকে মনে রাখা যায়। তবুও যেন মেয়েটির সাদা মেঘের মত শান্ত দুঃখময় অবয়বখানি কখনো কখনো চোখের উপর ভেসে উঠতো।

ছেলেদের মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতি করতো। সৌরভ এদের ধারে কাছেও ঘেঁষতো না । তবে নৈসর্গিক দৃশ্য তার খুব ভালো লাগতো। প্রতিদিন বিকেলে স্টেশনের ওপাশে ধান ক্ষেতের কাছে গিয়ে বসতো। বিস্তীর্ণ মাঠের শেষ প্রান্তে সুউচ্চ পাহাড়ের চুড়ায় যেন নীল আকাশ এসে ছুঁয়ে যেতো। দেখতে দেখতে বিভোর হয়ে পড়তো। মনে মনে ভাবতো আহা যদি কবির মতো এই অপূর্ব সুন্দরকে ভাষা দিতে পারতাম।

কিছুক্ষণের মধ্যে মাঠটি আবার খালি হয়ে যায়। বাস কয়টি বার বার এসে সবাইকে নিয়ে যায়। সৌরভ ঘড়িতে সময় দেখে, এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে। সে আর দাঁড়ায় না, হলের দিকে পা বাড়ায়।
প্রভোস্ট আসার পরপরই দুই দিনের জমা পড়া সব জরুরী কাগজ পত্র চেম্বারে দেওয়া হয়। চেম্বারের বাইরে দাঁড়ানো পিয়নটি নতুন। সৌরভ তাকে জিজ্ঞেস করতে সে বলে, হ্যাঁ স্যার আছেন, আপনার পরিচয়?

আমি এই হলের ছাত্র ছিলাম, এখন উনার সাথে দেখা করতে চাই। একটু দাঁড়ান, স্যার অনুমতি দিলে ভেতরে যেতে পারবেন। সৌরভ পকেট থেকে ভিজিটিং কার্ড বের করে দেয়। পিয়ন ভেতরে গিয়ে অনুমতি নিয়ে এসে বলে, স্যার যেতে বলেছেন।

সৌরভ ঢুকে কয়েক কদম হেঁটে গিয়ে প্রভোষ্টের সামনে দাঁড়ায়। তিনি বসতে বলেন । সৌরভ বসে বলে, স্যার আমার মূল সার্টিফিকেটের আবেদন পত্রটি। হ্যাঁ, দেখছি বলে টেবিলের কাগজপত্র উল্টাতে থাকেন। ছবির সাথে মিলিয়ে দেখে বলেন, এটা না?
জ্বি স্যার।
তিনি ফরমটা দেখতে দেখতে বলেন, আপনারা যখন এই হলে ছিলেন তখন আমি দেশের বাইরে। তাই হয়তো আপনাদের সাথে পরিচয় হওয়ার সুযোগ হয়নি।

সৌরভ বিনয় দেখিয়ে বলে, স্যার কখনো সুযোগ হলে একবার আমার অফিসে আসবেন। সে সময় কি হবে? এসেছি শিক্ষকতা করতে, এখন একাডেমিক কাজে এত ব্যস্ত থাকতে হয় পড়াশুনারও সময় করা যায় না । সৌরভের বেশ ভালো লাগলো। এরকম অমায়িক কথাবার্তা সে আশা করেনি। অফিস থেকে আবেদন পত্র টাকার অংক লিখিয়ে নিয়ে ব্যাংকে আসে টাকা জমা দিতে। ব্যাংক এখন শহীদ মিনারের কাছে চলে এসেছে।

মিনারের আশে পাশের এলাকাটি আগের মত নেই। ঝোপ-ঝাড় অনেক কমে গেছে, বিল্ডিং উঠেছে কয়েকটি নতুন ভবনও উঠছে একটি। উঁচু পাহাড়ের বুক চিড়ে নামানো রাস্তাটি এখন অনেক নীচে নেমে এসেছে। তবু যেন পাহাড় কাটার শেষ নেই মাটি কাটার ট্রাক্টর পাহাড়ের বুক বিদীর্ণ করে চলছে। যান্ত্রিক শব্দটা এখনও বিশাল পাহাড়ের প্রাচীর ভেদ করে বাইরে আসতে পারছে না। তবে জায়গাটা আগের চেয়ে অনেক খোলামেলা দেখাচ্ছে।

বুনো পরিবেশটা এখন আর নেই কিন্তু পাহাড়ী আদলটা রয়ে গেছে। এটাও হয়ত একদিন বিলীন হয়ে যাবে। সৌরভ টাকা জমা দিয়ে একাডেমিক ভবনে যায়। পুরাতন লাইব্রেরীতে এখন একাডেমিক কাজ-কর্ম হয়ে থাকে। সে ফরম জমা দিয়ে রসিদ বুঝে নেয়। মূল সার্টিফিকেটের জন্য রসিদটি নিয়ে দশদিন পর যোগাযোগ করতে বলে।

আর্টস ফ্যাকালটির সামনের পাহাড়টিতে রাস্তার দক্ষিন পাশে খুব সুন্দর লাইব্রেরী ভবন গড়ে উঠেছে। জায়গাটি অপরিচিত মনে হয় এখন। পাহাড়ের ঢালে আগে বেশ কয়েকটি চা-বিস্কিটের দোকান ছিল। কলা আর পাউরুটি পাওয়া যেত সবসময়। সৌরভ লাইব্রেরীতে উঠার সিঁড়ির গোড়ায় এসে দাঁড়ায়। সকালের মিষ্টি রোদটা দুপুরে এত ঝাঁঝালো হয়ে উঠতে পারে ভাবাও যায় না।

রিক্সা চালক কয়েকজন সিটের উপর পা তুলে বসে আছে। টেক্সি কয়েকটিও দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার একপাশে । ছাত্র-ছাত্রীরা কেউ বাস থেকে নেমে ফ্যাকালটির দিকে যাচ্ছে আবার কেউ ফ্যাকালটি থেকে বের হয়ে বাসে উঠছে। অনেকে আবার গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে কি যেন আলাপ করছে। সৌরভ ঠিক খেয়াল করতে পারেনি। ধবধবে সাদা টয়োটা করোলা প্রাইভেট কারটি কোন সময়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

হরণ বেজে উঠার সাথে সে যেন একটু চমকে উঠে। কালার গ্লাসটি নীচে নামতে থাকে। একখানি ফর্সা মুখ নীল রঙের দৃষ্টি মেলে সৌরভের দিকে তাকায়। খুব পরিচিত মনে হচ্ছে কিন্তু এই মুহুর্তে আবার অচেনাও লাগছে । তখনই মেয়েটির কন্ঠস্বর ওকে অবাক করে তোলে। সৌরভ কেমন আছো? ভাল বলে সে একটু খুটিয়ে দেখে জানতে চায়। শৈলী না তুমি তাহলে ধরতে পেরেছো। এখন অনেকেই আমাকে ঠিক চিনতে পারে না। না পারারই কথা।

আরে তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছো কেন, ভেতরে এসো। সৌরভ একটু বিব্রত বোধ করে । এতদিন পর মেয়েটির সাথে দেখা এভাবে আপনজনের মত কথা বলছে কেন বুঝতে পারে না। এবার সে গাড়ি থেকে নেমে এসে জিজ্ঞেস করে, তুমি ভার্সিটি এসেছিলে কেন?
সার্টিফিকেটের জন্য।
তুমি কেন এসেছো?
আমি কানাডায় একটা চাকরীর জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছি। ওরা সার্টিফিকেটের ইংলিশ ভার্সান চেয়েছে । চাকরী করবে তাহলে।

ওখানে কেউ বসে থাকে না। সবাই কোন না কোন কাজে ব্যস্ত । এখানেও কেউ বসে নেই, কাজ পায় না বলে বেকার থাকতে হয় অনেককে । সেসব কথা পরে হবে, আগে গাড়িতে উঠো। সার্টিফিকেটের কাজ সেরেছো তো।
হ্যাঁ জমা দিয়েছি, আপতত আর কোন কাজ নেই। তাহলে আর দেরী কেন, গাড়িতে উঠো, শহরেইতো যাবে।
সৌরভ অগত্যা গাড়িতে উঠে বসে।

তখন ফ্যাকালটির ভেতর থেকে শ্লোগানের আওয়াজ কানে আসে। আশে পাশের কেউ ভ্রুক্ষেপ করে না। আওয়াজটা লাইব্রেরীর সাথে ধাক্কা খেয়ে পাতা কুড়ানো ছেলেদের ভেতর প্রতিধ্বনি তোলে। ওরা শুকানো পাতা শূন্যে উড়িয়ে কিস্তি ছোড়ে। যেন নিজেদের ভাষায় শ্লোগানের আওয়াজ দিচ্ছে। শৈলী চালককে এসি বাড়িয়ে দিতে বলে। সৌরভ চুপচাপ বসে আছে। গাড়ি চলতে শুরু করে শৈলী অনর্গল কথা বলতে থাকে।

সৌরভের সারা শরীর ধীরে ধীরে শীতল হয়ে আসে। এতক্ষনের রোদের তীব্রতা কোথায় যেন উড়ে যায় সে টেরও পায়না । গাড়ির ভেতর থেকে ঝাঁঝালো রোদটা কেমন যেন কোমল বলে মনে হচ্ছে । গাড়ির গতি বাড়তে থাকে। সে হেলান দিয়ে বসে। ক্রমশঃ তন্দ্রার ভেতর আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সৌরভ। ফ্যাকালটির ভেতর থেকে শ্লোগানের প্রতিধ্বনি বার বার তার কানে এসে বাজে। তখন শৈলী যেন কানের কাছে চুপি চুপি বলছে, তুমি যে আমাকে ভালবাসতে তা আমি বেশ বুঝতে পারতাম।

সৌরভ আচ্ছন্নতার ভেতর দৃষ্টি বিভোর করে তাকায়। তার নিঃশব্দ নিশ্বাসের ছোঁয়া একুরিয়ামের রঙিন মাছের পাখনার মত শৈলীর কান যুগলের পাতায় শিহরণ তোলে। শৈলী আপুত নয়নে জানতে চায়, তুমি কি এখনো আমাকে ভালবাস? সৌরভ গ্লাস নামিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি দেয় কোন কিছুই যেন স্থির নয়। আশে পাশের দোকান-পাঠ, ফসলের মাঠ, কাশফুলের প্রান্তর, দূরের লতাগুল্মে জড়ানো ঘর-বাড়ি, সারি সারি গাছ-গাছালি, এমনকি ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকা সোনালী ফুলের গাছটিও। সবকিছু যেন বাতাসের গতির মত কোন অজানা ঠিকানায় ছুটে চলছে।

বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১বিমূর্ত ছবি (এক টুকরো রোদ) - ১১

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!