অনুচ্ছেদ রচনা বাংলা ২য় - জে.এস.সি, এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি

Mofizur Rahman
0

অনুচ্ছেদ রচনা বাংলা-২য় পত্র - জে.এস.সি,  এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি | Paragraph and Composition in Bangla

গুরুত্বপূর্ণ সব অনুচ্ছেদ একসাথে পিডিএফ আকারে দেওয়া হলো:-
জে.এস.সি পরীক্ষার জন্য
এস.এস.সি পরীক্ষার জন্য
এইচ.এস.সি পরীক্ষার জন্য
এবং অন্যান্য সকল শ্রেণির গুরুত্বপূর্ণ সকল অনুচ্ছেদ।
(toc)
অনুচ্ছেদ রচনা বাংলা-২য় পত্র - জে.এস.সি, এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি | Paragraph and Short Composition in Bangla, সকল শ্রেণির গুরুত্বপূর্ণ সকল অনুচ্ছেদ

বাংলা অনুচ্ছেদ রচনা

দেশপ্রেম (Patriotism's)

দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসাই হলো দেশপ্রেম। দেশের প্রতি আজম আকর্ষণ থেকেই দেশপ্রেমের উৎপত্তি। দেশপ্রেম না থাকলে কখনো দেশের উন্নতি সাধন সম্ভব নয়। প্রত্যেকটি মানুষের মাঝে দেশপ্রেম থাকা উচিত। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে দেশপ্রেমের চেতনাকে আগিয়ে তুলতে হলে। তবেই আমাদের দেশ উন্নতি লাভ করতে পারবে। স্বদেশপ্রেম হলো জননীর প্রতি ভালোবাসার শামিল। প্রকৃত দেশপ্রেমিক আমাদের দেশে বর্তমানে দরকার। দেশপ্রেম কেবল দেশের প্রতি ভালোবাসাই প্রকাশ করে না, দেশের মানুষকেও ভালোবাসতে শেখায়। আর মানুষকে ভালোবাসলে সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা পাওয়া যাবে। সর্বোপরি দেশপ্রেম হলো বিশ্বপ্রেমের নামান্তর। যা বর্তমান বিশ্বে খুবই প্রয়োজন। দেশের প্রত্যেক মানুষের ভেতরে দেশপ্রেমের গুণটি থাকা অত্যাবশ্যকীয়। দেশপ্রেমিক না হলে খাঁটি নাগরিক হওয়া যায় না। পৃথিবীতে যুগে যুগে দেশপ্রেমিক মহামানব জন্ম লাভ করেছেন। যারা নিজেদের মেধা, কর্ম দিয়ে পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজিয়েছেন। তাদের হাতেই সৃষ্টি হয়েছে, আধুনিক সভ্যতা, সমাজ ও রাষ্ট্র। তাদের দেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমে রূপ নিয়েছে।

জাতীয় পতাকা (National Flag)

জাতীয় পতাকা যেকোনো দেশের স্বাধীনতা, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ঐতিহ্যের প্রতীক। আমাদের জাতীয় পতাকাও অনেক বস্তু ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত। এ পতাকা স্বাধীনতা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। আমাদের কাছে এ পতাকা অত্যন্ত প্রিয় ও পবিত্র। আমাদের জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রশ্নের অনুপাত ১০:৬। পতাকার মাঝখানের লাল বৃত্তটির পরিমাপ দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ। আমাদের জাতীয় পতাকার রং গাঢ় এবং মাঝখানে লাল বৃত্ত। সবুজ হচ্ছে সজীবতা ও প্রাচুর্যের প্রতীক, আর উদীয়মান লাল সূর্য রক্তাক্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিবাহী । সবুজ অর্থ রে প্রাচুর্য, জীবনের উচ্ছলতা ও তারুণ্যের অফুরন্ত আনন্দ। আর সূর্যের লাল রং শহিদদের বুকের তাজা রক্তের চিহ্ন। আমাদের পতাকা বহন করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের মহাবাণী। হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই মিলেমিশে এ পতাকাতলে সমবেত হয়, দেশকে ভালোবাসার ব্রত গ্রহণ করে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ সরকারের নির্দেশে যেকোনো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। প্রত্যেক কর্মদিবসে সরকারি ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এর মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের সব নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। এ পতাকার সম্মান ও গৌরব আমরা জীবন দিয়ে সমুন্নত রাখব।

স্বাস্থ্যই সম্পদ Health is Wealth)

কথায় আছে, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য একজন মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। একজন মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ নির্ভর করে স্বাস্থ্যের উপর। ভগ্ন স্বাস্থ্যের একজন মানুষের কাছে অর্থ, যশ, খ্যাতি, সম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তি সবকিছু অর্থহীন। যেহেতু ভাগ্যের চেয়ে বড় কোনো সম্পদ নেই, তাই স্বাস্থ্যর যত্ন নেয়া অবশ্য কর্তব্য। একজন স্বাস্থ্যহীন ধনবান ব্যক্তির চেয়ে ধনহীন স্বাস্থ্যবান লোক অধিকতর সুখী জীবন যাপন করে। সুন্দর স্বাস্থ্য শুধু শরীরের উপর নির্ভর করে না। যে ব্যক্তির শরীর ও মন দুই সুস্থ, সেই প্রকৃত স্বাস্থ্যবান ব্যক্তি। শরীর বা মনের যেকোনো একটির অসুস্থতা স্বাভাবিক জীবন যাপনকে ব্যাহত করে। শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত শরীর চর্চা করা উচিত, তাতে শরীর ও মন দুই প্রকৃষ্ণ থাকে। ভাল স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত পরিমাণ মত সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এবং যথেষ্ট পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে। বয়স অনুযায়ী খাবার ও পানীয় গ্রহণ এবং ঘুমই সুন্দর স্বাস্থ্যের পাথেয়। সেই সাথে দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করা অবশ্যই জরুরি। সর্বোপরি সুস্থ দেহে সুদ্ধ মনের বাস এ তত্ত্বকে মাথায় রেখে পরিমিত পরিশ্রম, পরিমিত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ এবং প্রয়োজন মতো বিশ্রাম করলেই সুস্থ-সুন্দর জীবন-যাপন সম্ভব।

শিক্ষাসফর (Study Tour)

ছাত্রজীবনে শিক্ষাসফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেবল পাঠ্যভুক্ত জ্ঞানই আমাদের ঝানের তৃষ্ণা মিটাতে যথেষ্ট নয়। কেননা বইভিত্তিক জ্ঞান সীমিত। এ কারণেই শিক্ষাসফরের বিষয়টি প্রায়ই আসে। পরীক্ষামূলক জ্ঞান যাকে অন্য কথায় বলে অভিজ্ঞতা, তা শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যকারিতা ও প্রভাব উপলব্ধি করার জন্য খুবই প্রয়োজন, পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই খুবই ফলপ্রসূ। এরূপ শিক্ষা অর্জনে শিক্ষা সফর বিজ্ঞ পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করে। সব দিক বিবেচনা করেই বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষাসফরের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রতিবছরই এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের অনেক ছাত্র-ছাত্রী এরূপ শিক্ষাসফরে যায়। শিক্ষাসফর অন্যান্য জাতির ভূগোল, ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধি প্রশস্ত করে। একই সাথে শিক্ষাসফর হচ্ছে ভ্রমণ ও বাস্তব অভিজ্ঞতাপৰ জ্ঞান আহরণ। শিক্ষাসফর থেকে আহরিত জ্ঞান বইকেন্দ্রিক জ্ঞান অপেক্ষা দীর্ঘস্থায়ী। 'দেখাই বিশ্বাস' এই কথাটার তাৎপর্য শিক্ষাসফরের মতো কার্যাবলির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। চাক্ষুস ও চিন্তাকর্ষক জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে শিক্ষাসফরের বিকল্প নেই।

গণশিক্ষা (Mass Education)

গণশিক্ষা হচ্ছে অনানুষ্ঠানিক বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা। অজ্ঞতা অন্ধকারের শামিল। এ অন্ধকার দূরীকরণে শিক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ অন্ধকার দূর করার জন্য শিক্ষা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য না হয়ে সার্বজনীন হতে হবে। শিক্ষার সার্বজনীনতার জন্য যে বিষয়টি প্রথমে আসে তা হচ্ছে গণশিক্ষার গণশিক্ষা বলতে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের জন্য শিক্ষাকেই বুঝায়। এটি সাধারণত সমাজের বয়ঃপ্রাপ্ত রোগিকে দেওয়া হয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও নিরক্ষর। শিক্ষা না থাকার কারণে তারা সমাজের অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বর্ণিত। এ কারণে আমাদের সরকার বিভিন্ন এনজিও এর সহযোগিতায় সাধারণ মানুষকে শিক্ষিত করার প্রয়াসে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে গণকেন্দ্রগুলো কিছু সময়ব্যাপী এদেশের গ্রাম্য বাত -পুরুষদের শিক্ষিত করছে। এ শিক্ষার পরিধি খুব ব্যাপক না হলেও তা খুবই বাস্তবসম্মত। এ শিক্ষার কার্যকারিতার ফলে সংসারজীবনের বাস্তবসম্মত ব্যবস্থাপনা পূর্বের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। গণশিক্ষা কার্যক্রমকে আরও উজ্জীবিত করার জন্য সরকারকে শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য, সবার জন্য শিক্ষা, ইত্যাদি কর্মসূচির মতো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রচার মাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষার মান বৃদ্ধির মাধ্যমেই কেবল জাতির সুষ্ঠু উন্নতি সম্ভব যা নিঃসন্দেহে গণশিক্ষার মতো কার্যক্রমের মাধ্যমে তুরান্বিত হতে পারে।

কুটির শিল্প (Home Craft)

দেশের আত্ম-কর্মসংস্থানে কুটির শিল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে আত্ম-কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলে দেয়। দেশের আর্থিক উন্নয়নের জন্য কুটির শিল্পের প্রতি নজর দেয়া উচিত। কুটির শিল্প স্থাপনের জন্য বড় ধরনের পুঁজি কিংবা দামি যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না মোগল আমলে ঢাকার মসলিন এদেশের মানুষের কাছে কুটির শিল্পের সবচেয়ে বড় অবদান। অতীতে, বাংলাদেশের অনেক মানুষই কুটির শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই রমরমা কুটির শিল্পের দিন দিন অবনতি হচ্ছে। এখনও কামার, কুমার, তাঁতি, তাম্রকার, স্বর্ণকার, শঙ্খ ব্যবসায়ীসধু অনেকে 'কুটির' শিল্পের সাথে যুক্ত। তথাপি বাংলাদেশে বিরাজমান কুটির শিল্পগুলো তরুণদের কর্ম সংস্থানের সমস্যা কিছুটা হলেও প্রশমিত করছে। অধিক জনসংখ্যা ভারাক্রান্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে কুটির শিল্পের প্রয়োজনীয়তার দিকে জোর দিতে হবে। কুটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জাতীয় উন্নতি ও অবনতি জড়িত। কুটির শিল্প গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ। কুটির শিল্পের মাধ্যমে বেকার সমস্যা প্রশমন ও দারিদ্র্য হ্রাস করা সম্ভব। এই ব্যাপারটি চিন্তা করে কুটির শিল্পের পুনরুত্থান ও বিস্তৃতি এখন বড়ই প্রয়োজন।

বই পড়ার আনন্দ

বই জ্ঞানের ভাণ্ডার, মননশীলতার নগ্ন সিঁড়ি ও নিঃস্বার্থ বিশ্বস্ত বন্ধু। বই পাঠে জানা যায় বিপুল বিশ্ব, মানুষের সহস্র মনোভাবনা ও অনাবিল আনন্দ পাঠের আনন্দ মানুষকে নিয়ে যায় জ্ঞানের রাজ্যে, বিচরণ করায় বিশ্বসাহিত্যের পাতায় পাতায়। মানুষের মনতুষ্টির জন্য প্রয়োজন বই পাঠ করা। মনের দাবি মেটানোর অবিকল্প মাধ্যম একমাত্র বই পাঠ। এ দাবি রক্ষা না করলে মানুষের আত্মা বাঁচে না। আর মানুষের আত্মা সঙ্গীর না রাখতে পারলে জাতির প্রাণ যথার্থ স্ফূর্তি লাভ করে না। ফলে সে জাতি হয়ে ওঠে নির্জীব, নিষ্প্রাণ। আমাদের উচিত বাধ্যগত হলো বই পাঠ না করে আনন্দের উপাদান হিসেবে বই পাঠ করা। কারণ বই পাঠে জ্ঞানের গহিন রাজ্যে বিচরণ করা যায়। অর্জন করা যায় বিজ্ঞান, দর্শন, অর্থনীতি, ধর্মনীতি, সমাজনীতি প্রভৃতি সম্বন্ধে অগাধ পাণ্ডিত্য। খুলে যায় মনের ভূবন ও স্বপ্নের আকাশ যত জ্ঞানী-গুণী তাঁদের পদচারণায় পৃথিবীকে ধন্য করেছেন তাঁরা সকলেই ছিলেন বই পাঠে নিমগ্ন। বই পাঠের আনন্দে তাঁরা ছিলেন বিভোর। তাইতো তাদের অবস্থান জ্ঞান ও পরিমায় চূড়ায়, মনুষ্যত্ব ও মানবিকতার স্বর্ণশিখরে। আমাদেরও উচিত পাঠের মাঝে আনন্দ খুঁজে নেওয়া, বই পাঠের আনন্দ থেকে জ্ঞানের নির্যাস, সত্য ও সুন্দরের অমৃত আয়ত্ত করা।

মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি/শহিদ দিবস (Myrtyr Day) 

বাংলাদেশের ইতিহাসে মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি একটি স্মরণীয় অধ্যায়। একদিকে যেমন অর্জনের দিন, অন্যদিকে হারানোর বেদনার দিন। ব্রিটিশ দুঃশাসনের অবসানের মধ্যদিয়ে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ হয়। কিন্তু রাজ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত পশ্চিম পাকিস্তানিরা প্রথমেই আমাদের ভাষাকে নিয়ে চক্রান্ত শুরু করে। পাকিস্তানের গভর্নর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বীর বাঙালি। তারা ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। মিছিল মিটিং-এ চারিদিক উত্তাল করে তোলে। ভঙ্গ করে সরকারের দেয়া ১৪৪ ধারা। পাকিস্তানি শাসক বাহিনী নিবন্ধ বাঙালির ওপর বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সেই গুলিতে রাজপথে শহিদ হন সালাম, বরকত, রফিক, শফিকসহ অজ্ঞাতনামা অনেকে। কিন্তু দমননীতি দিয়ে বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। জীবনের বিনিময়ে বাঙালি ভাষাকে রক্ষা করেছে। অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তার পর থেকে প্রতি বছর এ দিনটির স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস' হিসেবে পালিত হচ্ছে। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আবদুল গাফফার চৌধুরী লিখেন— "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি” গানটি। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে ভাষার জন্য আত্মত্যাগের এই বিরল ঘটনাকে সম্মান দিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেয়।

লোড শেডিং - বিদ্যুৎ বিভ্রাট (Load Shedding)

লোডশেডিং আমাদের এক পরিচিত শব্দ। শহর, বন্দর, নগর, গ্রাম যেখানে আধুনিকতার ছোঁয়ার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার স্পর্শ ঘটেছে তারা প্রত্যেকেই লোডশেডিং-এর সাথে পরিচিত। লোডশেডিং হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ শক্তির সরবরাহে ঘাটতি বা বিঘ্ন ঘটা। অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও এর অপরিকল্পিত বন্টন এবং এর অপচয় প্রথমত 'লোডশেডিং-এর জন্য দায়ী। মানুষ যখন বিদ্যুৎমুখী জীবন যাপনে অভ্যস্ত, তখন 'গোড-শেডিং' একটি বড় অভিশাপস্বরূপ। লোড শেডিং-এর কারণে বড় বড় শহর এবং শিল্পাঞ্চলগুলো দুর্দশাগ্রস্ত। হঠাৎ করেই রাস্তাঘাটসমূহ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়; এখানে-সেখানে সামান্য প্রদীপ, চার্জ লাইট এবং মোমবাতির স্বল্প আলোকে বড় দোকান এবং বাজারসমূহ সামান্য আলোকিত হয়। চোর এবং পকেটমারেরা রাস্তায় স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করে। কল-কারখানাগুলোতে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। লোড-শেডিং-এর কারণে ছাত্রদের ভোগান্তি বর্ণনাতীত। লোড শেডিং-এর অভিশাপ হাসপাতালগুলোকেও অব্যাহতি দেয় না। জরুরি অপারেশন করা অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীর অবস্থা কেমন হতে পারে, তা বর্ণনা করার চেয়ে কল্পনা করাই বোধহয় ভালো। গবেষণা প্রব্যাদি এবং ওষুধপত্র যেগুলো নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় এবং রেফ্রিজারেটরে রাখা হয়, সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষিত দ্রব্যাদি পচে যায়। রেফ্রিজারেটরে রক্ষিত খাদ্যদ্রব্যাদি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বস্তুত, লোডশেডিং-এর ফলে আমাদের জীবনযাত্রা খুব অসুবিধা ও ক্ষতির সম্মুখীন হয়, লোড শেডিং-এর অভিশাপ থেকে জনগণকে মুক্ত করতে হলে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষসহ গ্রাহকদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং বিদ্যুতের সুসম বণ্টনসহ অপচ্যা রোধ করতে হবে। তবেই লোড শেডিং-এর মতো মারাত্মক সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব।

গণতন্ত্র - Democracy

গণতন্ত্র হলো জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের সরকার। গণতান্ত্রিক সরকার হলো সাধারণ জনগণের সরকার। জনগণ তাদের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করে। গণতন্ত্রে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য তাদের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। গণতন্ত্র কিছু অধিকার সংরক্ষণ করে। যেমন- ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার, ধর্ম, রাজনৈতিক মতামত, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ইত্যাদি। চিন্তা বা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিরোধী দলগুলো সরকারের অনেক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় যদি তা তাদের কাছে অন্যায় বলে প্রতীয়মান হয়। হরতাল, অবরোধ, মানববন্ধন কর্মসূচি ইত্যাদি একটি গণতান্ত্রিক সমাজের নিত্য বৈশিষ্ট্য। অনেক সময় আন্দোলন থেকে হট্টগোল, ভাঙচুর, নৈরাজ্য, রপ্তপাতের ঘটনাও সমাজে সংঘটিত হয়। যদিও গণতন্ত্রে যেকোনো দোষী সাংসদ ও নেতার বিরুদ্ধে অভিশংসনের সুযোগ রয়েছে তথাপি গণতন্ত্র দেশে কিছু ক্ষতিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ অনেক সময় সবার জন্য ভোটাধিকার অধিকাংশ জনগণের রায়ে নেতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বস্তুতপক্ষে, গণতন্ত্রও সম্পূর্ণরূপে ত্রুটিমুক্ত নয়। এই কারণে, বিশ্বের অনেক দেশই গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মিলিত শাসনব্যবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ (Digital Bangladesh)

ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে সংক্ষেপে বোঝায় সারাদেশের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে আধুনিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থাৎ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গতিশীল, সুসংবদ্ধ, সুসংহত ও সর্বাধিক কার্যকর করা। ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার বহুল আলোচিত সুস্পষ্ট প্রত্যয়। ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী'র আগেই বর্তমান সরকার সারাদেশের সর্বস্বরে ডিজিটালের সুযোগ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সর্বস্তরে কম্পিউটার শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়-বাণিজ্যের সর্বত এ কমার্স কার্যক্রম দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ই-গভর্ন্যান্সে উত্তরণ ঘটানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ দ্রুত এগিয়ে চলেছে, যাতে বাংলাদেশ ই-স্টেটে পরিণত হতে পারে। ইতোমধ্যে সরকারি অফিস-আদালত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, যোগাযোগ মাধ্যমের বেশকিছু ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি কার্যকর হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি পৌঁছে গেছে জেলা উপজেলা এমনকি অনেক ইউনিয়ন পর্যায়েও। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করে চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র নেওয়া, কৃষকদের যথার্থ প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠ পর্যায় থেকে সরাসরি কৃষিকর্মকর্তাদের পরামর্শ নেওয়ার সুবিধা কার্যকর করার ব্যবস্থা এগিয়ে চলেছে। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসে নিরাপত্তা বিধানের জন্য ডিজিটাল ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, মহাসড়কের কিছু স্থান ক্যামেরার আওতায় আনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সংবাদপত্র ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি অনেকখানি কার্যকর হয়েছে। ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ক্রমশ এগোচ্ছে। বিনোদনের ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকর হয়েছে। আদেশ ও বহির্দেশের নানা অনুষ্ঠান, খবরাখবর, মুখোমুখি কথা বলার সুযোগ 'দূরকে করেছে নিকটা। আশা করা যায় ২০২০ সালের মধ্যেই সারাদেশের যাবতীয় কার্যক্রম ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসবে। নির্মিত হবে গতিশীল, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

লোকসংগীত (Folk Song)

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সংগীতের শাখাগুলোর মধ্যে লোকসংগীত হচ্ছে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়, প্রাচীন ও সাধারণ একটি ধরন। বাংলাদেশেও লোকসংগীতের খুবই কদর রয়েছে। লোকসংগীত বলতে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত প্রথানুগ সংগীতকে বুঝায়। এটি বহুকাল ধরেই আমাদের প্রজন্ম পরম্পরায় গাওয়া হয়ে আসছে। বিশ্বের সাধারণ মানুষের মুখে এ গান এখনও বেঁচে আছে। এটি সাধারণত মৌলিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বয়ে চলে। বিভিন্ন উপলক্ষে আমাদের দেশে বাউলেরা মর্মস্পর্শী আবেগ দিয়ে লোকসংগীত গেয়ে থাকে। প্রচলিত বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করেই এ সংগীত গাওয়া হয়। লোক সংগীতগুলো আধ্যাত্মিক, গ্রামীণ ও অপার্থিব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে গাওয়া হয়। এটি গ্রাম্য জীবন রীতির এক বিস্ময়কর বর্ণনা। দেশপ্রেমের আবেগ বিজড়িত লোকসংগীতগুলো অতীতে দুঃখ বিজড়িত কাহিনি বর্ণনা করে শ্রোতার চোখে অশ্রু নিয়ে আসে। অবশ্য লোকসংগীতে আনন্দ ভরা বিষয়বস্তুও যুগপৎভাবে বর্তমান। এখন গ্রামের অনেক লোক সূর্যাস্তের পরে তাদের নিজেদের তৈরি বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বারান্দায় বসে স্থানীয় শ্রোতাদের কাছে লোকসংগীত পরিবেশন করে। আমাদের লোকসংগীতগুলো তাদের ভিন্নধর্মী নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের জন্য আামাদের উল্লেখযোগ্য অহংকারে পরিণত হয়েছে। এ মূল্যবান সম্পদ রক্ষার জন্য সচেতনতা ও সমর প্রয়াস একানভাবেই অপরিহার্য ।

তথ্যপ্রযুক্তি (I.C.T)

বিজ্ঞানের জ্ঞানকে যে পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন আবিষ্কার ও উৎপাদনে রূপ দেওয়া হয় তাকে বলে প্রযুক্তি। আর সেই প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য বিনিময় করে সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ত্বরান্বিত ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তার নাম তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তি এখন মানুষের জীবনযাপনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করছে না। টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ই মেইলের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিদেশের যেকোনো খবর মুহূর্তের মধ্যেই পৌঁছে যায় আমাদের কাছে। এসএমএসের মাধ্যমে কুশলাদি পৌঁছে দেওয়া যায় দূরদূরান্তে। ই-মেইলের মাধ্যমে চিঠিপত্র, দরকারি ফাইল প্রেরণ করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক তথ্য সংগ্রহ করা যায়। ব্যবসায়-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক লেনদেন, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা, শিক্ষার যেকোনো তথ্য বা বিষয় সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া মোবাইলে মেমোরি সেট ব্যবহার করে দেশ-বিদেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির তথ্যচিত্র ও বিনোদন উপভোগ করা যায়। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক বিভিন্ন প্রকাশনা, জার্নাল, ফিচার ইত্যাদি আমাদের গবেষণা ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক। বিভিন্ন পরীক্ষার ফল প্রকাশ, টেন্ট বুক সফটকপির ব্যবস্থা, অনলাইনে চাকরির আবেদন, ফি জমাদান, ভর্তির আবেদন ইত্যাদি কাজ সহজেই করা যায়। ডিজিটাল কৃষিব্যবস্থা, ডিজিটাল ভূমি জরিপ, ই কমার্স, ই-লার্নিং, ই-বুকিং, ই-ভোটিংয়ের মতো আরও অনেক কাজ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অনায়াসে করা যাচ্ছে। একসময় যা ছিল কল্পনা, আজ তা হাতের মুঠোয় এসে গেছে। আগামী দিনে এই তথ্যপ্রযুক্তিই বিশ্বের সামগ্রিক কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করবে, এমন ধারণা করা অবাস্তব নয়।

পরীক্ষার পূর্বরাত্রি (The Night Before Examination)

আমাদের দেশের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীদের কাছে পরীক্ষার পূর্বরাত্রি স্মরণীয় হয়ে থাকে। এই রাতটি তাদের নিকট শিহরণ জাগানো রাত। আমাদের দেশের অনেক ছাত্রছাত্রী সারাবছর নিয়মিত পড়ালেখা করে না। তাদের কাছে পরীক্ষার আগের রাতটি খুবই ভয়াবহ। তারা তখন বিচলিত হয়ে পড়ে। তারা হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। কোনো বিকল্প না দেখে তারা না বুঝে মুখস্ত করা শুরু করে। হতাশা এবং উত্তেজনার চাপে তারা তখন পূর্বের শেখা বিষয়ও ভুলে যায় । এ পরিস্থিতিতে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় তারা আরো অধিক নিষ্প্রভ মেধার পরিচয় দেয়। অনেক সময় তারা ভয়ে ঘামতে শুরু করে। মধ্যরাত না হতেই তারা পড়া ও পর্যালোচনার মাধ্যমে পাসের আশা ছেড়ে দেয়। কিন্তু একজন পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান ছাত্রের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে পূর্বে প্রস্তুত করা পাঠ্যবিষয়গুলো পুনরায় পড়ে। সে নতুন করে কোনো প্রশ্ন মুখস্থ করে না। সে কেবল তার পূর্ব পাঠগুলো পর্যালোচনা করে। সে দ্রুতগতিতে পড়ে যায়। এজন্য তাকে পরীক্ষার পূর্ব দিন গভীর রাত পর্যন্ত জাগতে হয় না। এভাবে, তার কাছে পরীক্ষার পূর্বরাত্রি অন্যান্য রাতের মতো স্বাভাবিক মনে হয় । সুতরাং ছাত্রছাত্রীদের ধরনের ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষার পূর্বরাত্রিটি সুখের কিংবা দুঃখের দুরকমই হতে পারে।

রক্তদান (Donation of Blood)

বস্তু হলো শরীরের পরিবহন মাধ্যম যা শরীরের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অক্সিজেন প্রদান করে। যেসব রোগী রক্তশূন্যতা, ব্লাড ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া ইত্যাদি রোগে ভোগে তাদের নিয়মিত রক্ত সঞ্চালিত করা দরকার। দুর্ঘটনা বা পোড়া রোগীদেরও জরুরি ভিত্তিতে রত্ন প্রয়োজন। ব্লাড ব্যাংক প্রয়োজনে দ্রুত প্রদানের জন্য রক্ত সংরক্ষণ সুবিধা বজায় রাখে। এসব ব্লাডব্যাংকে রক্ত মজুদ রাখার জন্য মানুষের স্বেচ্ছায় রক্ত দান করা উচিত হাসপাতাল এবং সামাজিক সংস্থা প্রায়ই রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে, যেখানে সুস্থ লোকেরা রক্ত দান করে। রক্ত সংগ্রহের আগে বন্ডদাতার রক্ষের গ্রুপ এবং সঞ্চালনের জন্য উপযুক্ততা নির্ধারণ করা হয়। রক্তদানকারীর নিরাপত্তার জন্য এবং তার মঙ্গলের জন্য সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।  অনেকে ভয় পায় যে রক্তদান তাদের ক্ষতি করবে। কিন্তু এ ভয়ের কোন ভিত্তি নেই। কারণ রক্তদানকারী যতটুকু রক্ত দান করে তা স্বাভাবিক খাবারে সহজেই পুঁথিমে যায়। সকল বর্ণ, গোত্র এবং ধর্মের সুস্থ লোককে জীবন রক্ষাকারী রক্ত দানে এগিয়ে আসা উচিত এবং তাদের স্বজাতিকে সাহায্য করা উচিত।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি (Price Hike)

মূল্য বৃদ্ধি বলতে পণ্যসামগ্রীর দাম বাড়াকে বুঝায়। আমাদের দেশে বর্তমানে মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হয়। মূল্য বৃদ্ধির চাপে বাজারে বিরামহীন আগুন জ্বলছে এই কথাটি জনগণকে বর্তমানে বলতে শোনা যায়। তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল, গাড়িভাড়া সবকিছুই এখন সাধারণ মানুষের সহনক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। একটি ত্রুটিপূর্ণ সরকারি ব্যবস্থাপনার কারণে দেশে প্রায়ই মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিচ্ছে। অনেক মজুতদার অবৈধভাবে পণ্য মজুত করে রাখছে। নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা দুর্নীতির পাহাড় পড়ছে আর এসবের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশের অসংখ্য অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে মুদ্রাস্ফীতির সাথে পাল্লা দিয়ে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিও তীব্রতর হচ্ছে। তারা মাঝে মাঝে আসন্ন বাজেট সম্পর্কে বিভিন্ন গুজব ছড়ায় এবং বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ঘটায়। আমাদের সাধারণ মানুষের আয় কখনো এ মূল্যবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই এ লাগামহীন বাজারমূল্য বৃদ্ধির ফলে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ সব চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়। এজন্য জাতি ও সমাজে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে।

সংবাদপত্র পাঠ (Reading Newspaper)

বর্তমান যুগে সংবাদপত্র পাঠ করা খুবই জরুরি। সংবাদপত্র জ্ঞানের ভাণ্ডার। বিভিন্ন ধরনের সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিশ্বের সমস্ত ঘটনা আমাদের নিকট আসছে। মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের খবরাখবর আমাদের চোখের সামনে এসে পড়ছে। যেন আমাদের এ বিশাল পৃথিবীটা কল্পনাতীতভাবে একটি ক্ষুদ্র গোলকে পরিণত হয়েছে। সংবাদপত্র পাঠ একটি খুবই ভালো অভ্যাস যার মাধ্যমে রাষ্ট্র, সরকার, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ভূগোল, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, এবং সর্বোপরি প্রতিটি দেশের শিল্প সাহিত্য সম্পর্কিত জ্ঞানভাণ্ডার আমাদের নিকট উপস্থিত হয়। আমাদের দেশে ছাত্রছাত্রীরাই প্রধানত সংবাদপত্র পাঠ করে। একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চাকরিজীবীও তাদের কর্মক্ষেত্রে বসে পত্রিকা পড়ে। সংবাদপত্রের পাঠক হিসেবে সংসারী নারীদের সংখ্যাও চোখে পড়ার মত। আমাদের জাতিকে আরো যথাযথভাবে পড়ে তুলতে হলে সংবাদপত্র পাঠের অভ্যাসকে আরো উৎসাহিত করতে হবে। একটি সভ্য জাতির কর্ণকুহরে সর্বদাই সচেতনতার বার্তা ভেসে বেড়ায়। এ সচেতনতার সবচেয়ে বড় অংশটিই আসে সংবাদপত্র পাঠের মাধ্যমে। বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে সংবাদপত্রকে বিশ্বের আইনসভা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এই আইনসভার সদস্য হতে হলে অবশ্যই সংবাদপত্র পাঠ করতে হবে। সংবাদপত্রকে বিশ্ব সভ্যতার তাৎক্ষণিক আয়না বলা যেতে পারে। তাই একজন পত্রিকা পাঠক এই আয়নার সম্মুখে দাঁড়িয়ে নিজের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। সর্বতোভাবেই সংবাদপত্র পাঠ করা অবশ্য অবশ্যই ভালো অভ্যাস।

কম্পিউটার (Computer)

কমপিউটার (Computer) শব্দটির উৎপত্তি ল্যাটিন কমপুটেয়ার (Computer) থেকে, যার ইংরেজি অর্থ কম্পিউট (Compute) বা গণনা করা। সে হিসেবে কমপিউটারের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কিন্তু বর্তমানে কম্পিউটার শুধু গণনাকারী যন্ত্র নয়। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক আবিষ্কার হলো Computer, কমপিউটার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা মানুষের দেওয়া তথ্য যুক্তিসঙ্গত নির্দেশের ভিত্তিতে অতি দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে গণনার কাজ করে, তার সঠিক ফলাফল প্রদান করতে পারে। কমপিউটারের ব্যাপক ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে— লেখাপড়া করা, মুদ্রণ করা, তথ্য সংরক্ষণ করা, গান শোনা, সিনেমা দেখা, খেলা করা, টেলিফোন করা, দেশ-বিদেশের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করা ইত্যাদি। ব্যাপক ব্যবহারের ফলে আধুনিক জীবনে সবচেয়ে জরুরি যন্ত্র এটি। বৈদ্যুতিক কমপিউটারগুলো দু'ধরনের হয়ে থাকে। (১) এনালগ, (২) ডিজিটাল। এনালগ কমপিউটার ফিজিক্যাল গুণাবলি নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডিজিটাল কমপিউটারগুলো সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে। মূলত কমপিউটার মানুষের মস্তিষ্কের বিকল্প হিসেবে মানব কল্যাণে অনেক কাজ করে চলছে এবং মানুষের শক্তি ও সময়ের অপচয় রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ঘরের, বাজারের হিসাব বা বাচ্চাদের গেম থেকে শুরু করে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে। তাই কমপিউটার আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

বিজ্ঞান মেলা (Science Fair)

বিজ্ঞান মেলা একটি সমাজ ও জাতির বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষ এবং সভ্যতাকে প্রদর্শনের দায়িত্ব পালন করে। বছরের বিভিন্ন সময়ে আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করে। বিজ্ঞান মেলার আওতা বা পরিধি প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অসংখ্য প্রবীণ, তরুণ ও খুদে বিজ্ঞানী দর্শনার্থী কিংবা বিজ্ঞান প্রদর্শন যেমন আম্রবর্ণ, লাল আলোর সংকেত-দায়ক ঘড়ি, উন্নত দোলক ইত্যাদির প্রদর্শনকারী হিসেবে এ মেলায় অংশগ্রহণ করে। বর্তমান বিজ্ঞান মেলায় কম্পিউটার স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে। মেলায় বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রোগ্রামের উপরে প্রক্ষেপণ আলোকচিত্র প্রদর্শিত হয়ে থাকে। এ ধরনের বিজ্ঞান মেলা থেকে স্কুল-কলেজের খুদে বিজ্ঞানীরাও উপকৃত হয়। শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ বিশেষ করে শিক্ষকরা এ মেলায় বেশি আসেন। আমাদের দেশে বিজ্ঞান মেলা একটানা বেশ কয়েকদিন চলে। চাক্ষুস জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিজ্ঞানমেলা আসলেই একটি বাস্তব ও কার্যকর ক্ষেত্র। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। তাই বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য বিজ্ঞান মেলার আয়োজন নিতান্ত প্রয়োজন। নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠার সাথে পরিচিত করাতে হলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ইত্যাদি জেলাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে বিজ্ঞান মেলার আয়োজনের মাধ্যমে বিজ্ঞানের ব্যবহার সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে হবে। বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে আমাদের সভ্যতাকে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিজ্ঞান মেলার প্রয়োজনীয়তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিজ্ঞান মেলা আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বিজ্ঞানমুখী হতে সহযোগিতা করে। বিজ্ঞান মেলা একটি সভ্য জাতির জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাচেতনা ও ধ্যানধারণার নিশ্চায়ক।

ই-মেইল (E-mail)

ই-মেইল হচ্ছে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের মাধ্যমে লিখিত বার্তা প্রেরণের দ্বারা যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিস্তারিতভাবে ই-মেইল বলতে ইলেকট্রনিক মেইলকে বোঝায়। যোগাযোগের তড়িৎ মাধ্যম হিসেবে ই-মেইলকেই সাধারণত নির্দেশ করা হয়। ই-মেইল কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত। টেলিপ্রিন্টারের সাহায্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেখানে টার্মিনাল থেকে টার্মিনালে যোগাযোগ হয় যেখানে ইলেকট্রনিক মেইলের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা একে অন্যের সঙ্গে কম্পিউটারের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে। ই-মেইল প্রেরণ করা হয় কম্পিউটারে রক্ষিত ব্যক্তিগত মেইল বক্সে। ই-মেইল ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য টেলিফোন সংযোগ ও একটি মডেম দরকার হয়। ই-মেইল যোগাযোগের ফলে অফিসে কাগজের ব্যবহার অনেকটা কম হয়। কম্পিউটারনির্ভর যোগাযোগ মাধ্যম বলে কম্পিউটারে তৈরি করা ফাইলগুলো তাৎক্ষণিকভাবে কপি করা যায় এবং সহজেই ই-মেইল হিসেবে আদান প্রদান করা যায়। ব্যক্তি থেকে বাক্তিতে যোগাযোগের ফলে, টেলিফোনের বিকল্প হিসেবে ই-মেইলে খরচ ও সময় অনেক কম ব্যয় হয়। ই-মেইলের মাধ্যমে দু-পক্ষ সরাসরি উপস্থিত না থাকলেও যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। প্রাপকের সরাসরি ব্যক্তিগত মেইল বক্সে ই-মেইল প্রেরিত হয় বলে এক্ষেত্রে নিশ্চিত গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়। আধুনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ই-মেইল বিপ্লবের সূচনা করেছে। ই-মেইল আশীর্বাদের বদৌলতে ব্যবসা-বাণিজ্য এখন পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক সহজতর। অবশ্য কম্পিউটার সাধারণ লোকের নিকট সংঘলতা না হওয়াতে ই-মেইল সুবিধা এখনও সকলের নিকট পৌঁছাতে পারেনি।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!