মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল | আশুরার তাৎপর্যপূর্ণ ফজিলত ও বর্জনীয় কাজ
মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল, আশুরার যে ঘটনা বর্ণনা করেছেন বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (স), মহররমের ফযিলত ও বর্জনীয় কাজ।
মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল
রমজানের পর রোজার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মাস হলো মহররম। আবার বছরে যে ৪টি সম্মানিত মাস রয়েছে তান্মধ্যেও মহররম একটি। যা হিজরি বছরের প্রথম মাস৷ এটি মহান আল্লাহর মাস হিসেবে পরিচিত। মর্যাদার এ মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদার কারণে বিশেষ আমল ও ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বনবি। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা প্রমাণিত। তাহলো-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের পর রোজার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মাস হলো আল্লাহর মাস মহররম।’ (মুসলিম)
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহাম্মাদিকে এই মাসে বিশেষ আমলের নির্দেশ দিয়েছেন। ১০ মহররম তিনি রোজা রাখতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর দেখেন ইয়াহুদিরা (হজরত মুসা আলাইহিস সালামের মুক্তির স্মরণে) এদিন রোজা পালন করছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমরা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের অনুসরণ করার ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। তিনি নিজে সেই (আশুরার) দিনের রোজা পালন করলেন এবং সাহাবাদেরকেও (এই আশুরার দিন রোজা) নির্দেশ দিলেন।’ (বুখারি)
৩. ইয়াহুদিদের অনুসরণ যেন না হয় সে জন্য দুইদিন রোজা পালনের কথা বলেছেন বিশ্বনবি। আশুরা উপলক্ষে ইয়াহুদিরা ১ দিন (আশুরার) রোজা রাখতো। সে কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদিদের ব্যতিক্রম করতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ এবং ১০ মহররম দুই দিনই রোজা রাখবো।’ (মুসলিম)
৪. মহররম মাসের রোজা রাখার বিশেষ আমলের ভিত্তিহজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাদিনাতে এলেন; তখন মদিনার ইয়াহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করত। তারা জানাল, এ দিন হজরত মুসা আলাইহিস সাল্লাম ফেরাউনের উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবিদের বললেন, মুসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার ব্যাপারে তাদের চেয়ে তোমরাই অধিক হাকদার। কাজেই তোমরা রোজা রাখ।’ (বুখারি)
হাদিসের আলোকে প্রমাণিত যে, মহররম মাস একটি মহান বিজয়ের মাস। এ মাসের ১০ তারিখ মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে তাঁর সঙ্গী বনী ইসরাইলকে ফেরাউনের আক্রমণের হাত থেকে উদ্ধার করেন আর ফেরাউন তার সঙ্গীরাসহ নীল নদে ডুবে মারা যান।
৫. মহররমের রোজার বিশেষ ফজিলতবছরজুড়ে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় কত শত গোনাহ-ই না করে থাকে মানুষ। মহররম তথা আশুরার রোজা এতই মর্যাদাপূর্ণ যে এটি বিগত এক বছরের সব (সগিরা) গোনাহ মাফের ওয়াসিলা হতে পারে। হাদিসে এসেছে-‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)
৬. মহররম মাসে যেসব আমল ও কাজ নিষিদ্ধমুহাররম মাস আসলে এমন সব রুসুম রেওয়াজ ও নাম সর্বস্ব উৎসব পালন করা হয়; যার সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক প্রমাণ পাওয়া যায় না।এ দিনটিকে কেউ কেউ শুধু কারবালার মাতম ও শোকানুষ্ঠান হিসেবে উদযাপন করে থাকেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় নাতি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হৃদয়বিদারক শাহাদাত দিবস হিসেবে অনেকে নিজেদের শরীরে আঘাত করতে থাকে; শরীর রক্তাক্ত করতে থাকে।কেউ কেউ তাজিয়া মিছিল তথা যুদ্ধের সাজ সাজ পোশাকে ঘোড়া সাজিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। আবার অনেকে হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কৃত্রিম মাজার তৈরি করে রাস্তায় প্রদর্শণীতে নেমে পড়ে। আশুরা উপলক্ষ্যে এসব আয়োজন ও আমল বর্জন করাও সাওয়াবের কাজ। এ সব আমলের ব্যাপারে ইসলামের কোনো অনুমোদনই নেই।
মুমিন মুসলমান শুধু সেসব আমলই করবে
মুমিন মুসলমান শুধু সেসব আমলই করবে; যেসব আমলের ব্যাপারে অনুমোদন ও নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
মনে রাখা জরুরিমহররম আল্লাহ তাআলার কাছে সম্মানিত মাসসমূহের মধ্যে একটি। এই মাসে বেশি বেশি ভালো কাজে নিজেকে তথা প্রিয়জনদের উদ্বুদ্ধ করাই ঈমানের একান্ত দাবি। এ মাসজুড়ে বেশি বেশি দান সাদাকাহ করা। ফরজ আমলের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সব গোনাহ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার চূড়ান্ত প্রতিজ্ঞা করা জরুরি। তবেই এ সন্মানিত মাস মহররমের প্রকৃত সুফল পাবে ঈমানদার মুসলমান।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহররম মাসের মর্যাদা রক্ষার এবং আশুরার ৯ ও ১০ তারিখ রোজা পালনসহ ইসলামের কল্যাণে আশুরার ঘটনাবহূল আলোচনা মানুষের কাছে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আশুরার যে ঘটনা বর্ণনা করেছেন বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (স):
আরবি হিজরি সালের প্রথম মাস মুহররম। এ মাসের দশ তারিখই হেচ্ছ আশুরা। বহুকাল ধরেই আশুরা নিয়ে রয়েছে নানা কথা ও ঘটনার বর্ণনা। এ নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক বই ও ডকুমেন্টরি। যা এখনো হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। তবে এসব বিষয়ে থাকতে সতর্ক।
শুধু কারবালার প্রান্তরে হৃদয় বিদারক ঘটনার জন্য আশুরা মর্যাদাবান ও গুরুত্বপূ হয়নি। বরং প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের বর্ণনায় ফুটে ওঠেছে আশুরার মর্যাদা। যে কারণে প্রিয় নবি আশুরার দিনে রোজা রাখার কথা বলেছেন। বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফারের কথা বলেছেন।
আশুরার কিছু প্রচলিত ঘটনাআশুরা নিয়ে সমাজে রয়েছে নানা ধরনের কথা। যা মানুষের মাঝে বিভেদ তৈরি করছে। এ সব বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। যার কিছু তুলে ধরা হলো-
>> কেয়ামতঅনেকেই বলে থাকেন যে, আশুরার দিনে কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। নির্ভরযোগ্য কোনো বর্ণনায় এ কথা প্রমাণিত নয়। এ দিন কেয়ামত সংঘঠিত হোক আর না হোক, কেয়ামত আসার আগেই মুমিন ব্যক্তির উচিত পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
>> আদম আলাইহিস সালামের তাওবা কবুলআশুরায় তাওবা কবুল হয়। হাদিসে পাকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা এসেছে। আর আশুরার দিনে হজরত আদম আলাইহিস সালামের তাওবা কবুল হয়েছে মর্মে আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব কিতাবে এ সম্পর্কিত একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তবে ওলামায়ে কেরাম এ হাদিসের সনদকে দুর্বল বলেছেন।যেহেতু প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আশুরার দিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেন। তাই মানুষের উচিত এ দিন বেশি বেশি তাওবা করা।
>> জুদি পাহাড়ে নৌকা নোঙরআশুরার দিন হজরত নূহ আলাইহিস সালামের নৌকা জুটি পাহাড়ে নোঙর করেছিল বলে শোনা যায়। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ মুসনাদে আহমাদের একটি বর্ণনায় এ তথ্য পাওয়া যায়। এ হাদিসটিকেও দুর্বল বলা হয়েছে।
>> হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মহজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম আশুরার দিনে হয়েছে বলে এমনই বর্ণনা এসেছে আত-তারগিব ওয়াত-তারহিবে। আদম আলাইহিস সালামের তাওবার সনদের মতো এ বর্ণনার সনদও দুর্বল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক কথা ও ঘটনা। মূলত এসব কারণে আশুরার মর্যাদা ঘোষিত হয়নি। তবে বনি ইসরাইলের সে ঘটনাটি হাদিসের বর্ণনায় ওঠে এসেছে-
হাদিসের বর্ণনায় আশুরার দিনের সুস্পষ্ট ঘটনাআশুরার দিনে দু’টি ঘটনা সুস্পষ্ট। তার একটি হলো হজরত মুসা আলাইহিস সালামের কাওমের মুক্তি আর অন্যটি হলো ফেরাউন সম্প্রদায়ের ধ্বংস।
> হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও তার সাথীরা ফেরাউন ও তার সৈন্যবাহিনীর হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আল্লাহ তাআলা সমুদ্রের মধ্যে তাদের জন্য রাস্তা বানিয়ে দেন। যা দিয়ে তারা সমুদ্র পাড়ি দেন।
> ফেরাউন ও তার বাহিনী মুসা আলাইহিস সালামের কাওমকে তাড়া করে সমুদ্রে তৈরি রাস্তা প্রবেশ করলে সে রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। আর তাতে ডুবে ফেরাউন ও তার সৈন্যবাহিনী সমূলে ধ্বংস হয়ে যায়।
এছাড়াও কারবালার প্রান্তরে হজরত ইমাম হুসাইনের শাহাদতও ঘটে এ আশুরার দিনে। বিশ্বব্যাপী মানুষ এ দিনটিকে যদিও কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনার জন্য সবেশি স্মরণ করে থাকে।
মুলতঃ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী আশুরায় নয় বরং মুহররম মাসে আমল করার কথা বলেছেন। আর আশুরায় রোজা রাখার কথাও বলেছেণ। হাদিসে এসেছে-এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা ও তাওবা ইসতিগফারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। তাই মাসব্যাপী আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা মুমিন মুসলমানের জন্য একান্ত আবশ্যক।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি রমজানের পর আরও কোনো মাসে রোজা রাখতে চাও তবে মুহররমে রোজা রাখ। কেননা সেটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেন। ভবিষ্যতেও আরও অনেক মানুষের তাওবা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)
তাওবা ও ইসতেগফারের জন্য সবচেয়ে উত্তম হলো কুরআন-হাদিসে বর্ণিত ইসতেগফার বিষয়ক দোয়াগুলো বুঝে বুঝে পড়া। এ দোয়াগুলোর মাধ্যমে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন।
উল্লেখ্য যে, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ৯ মুহররম। সে হিসেবে যারা আশুরার দিন রোজা রাখতে চান তারা ৯ তারিখ সোমবার দিবাগত রাত রোজার উদ্দেশ্যে সাহরি খাবে। পরদিন মঙ্গলবার ১০ মুহররম রোজা পালন করবে। আর দিনভর আল্লাহ কাছে তাওবা-ইসতেগফার করবে। আর এ দোয়া বেশি বেশি পড়বে-
اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالأَمْنِ ، وَالإِيمَانِ ، وَالسَّلامَةِ ، وَالإِسْلامِ ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ ، وَجَوَار مِنَ الشَّيْطَانِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালঅমাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রাহমানি, ওয়া ঝাওয়ারিম মিনাশ শায়ত্বানি।’ (আল-মুঝাম আল আওসাত)
বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করবে-
رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا، وَ اِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَ تَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ
উচ্চারণ : রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’
> সব সময় ইসতেগফার পড়া-
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ وَأَتُوبُ إلَيْهِ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ
উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি; রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়্যাবুল গাফুর।
আর সকালে এবং সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া-
أَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিং শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজান্মি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আশুরার দিনসহ মুহররম মাস জুড়ে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার ও দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বছরের বেশ কিছু দিন মাস ও মুহূর্ত আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন। এসবের মধ্যে হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররম ও এ মাসের ১০ তারিখ ইয়াওমে আশুরাও একটি। আশুরা শব্দটি ব্যাপক পরিচিত। এটি আরবি শব্দ। যার অর্থ দশম। হিজরি বর্ষের মহররম মাসের ১০ তারিখকে বুঝায়। ১৪৪৪ হিজরি বছরে এ দিনটি আগামী ৯ আগস্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে। এ মাসের রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও অনেক করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়। কী সেগুলো?
মহররমের তাৎপর্যপূর্ণ ফজিলত ও বর্জনীয় কাজ:
ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ মাসগুলোর মধ্যে অনন্য মহররম। এটি আরবি ১২টি মাসের মধ্যে ৪টি হারাম মাসের একটি। এ ছাড়া এটি আরবি বছরের প্রথম মাস। আল্লাহর গণনায়ও মাস ১২টি। এ ১২ মাসের মধ্যে সম্মানিত হারাম মাস ৪টি। যে মাসগুলোতে যাবতীয় যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাতকে মহান আল্লাহ হারাম ঘোষণা করেছেন। তন্মধ্যে মহররম একটি। এটি হিজরি বছরের প্রথম মাস। যা হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রস্তাবনায় হিজরি বছরের প্রথম মাস হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়।
কোরআনে ঘোষিত সম্মানিত চার নিষিদ্ধ মাস কোনটি?
এ সম্পর্কে হাদিসে সুস্পষ্ট বর্ণনা এসেছে-
হজরত আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিনটি হলো ধারাবাহিক মাস- জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আর একটি হলো রজব মাস। জমাদিউস সানি ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস অর্থাৎ রমজানের আগের মাসের আগের মাস।’ (বুখারি)
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এ চারটি মাসকে সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ যে মাসগুলোকে সম্মানিত মাস বলে অভিহিত করেছেন, সে মাসগুলোকে মর্যাদা দেয়া মুমিন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। এর মধ্যে অন্যতম দুটি নির্দেশ হলো-
মহররমকে মর্যাদা দেওয়া
আল্লাহ তাআলার কাছে যে মাসগুলো সম্মানিত, সে মাসগুলোকে সম্মান দেখানো ও মর্যাদা দেওয়া মুমিনের প্রথম কাজ। মহররমসহ এ মাসগুলোতে আল্লাহর দেওয়া সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা প্রত্যেক ঈমানদারের প্রথম করণীয়।
কিন্তু মুমিন মুসলমানের অনেকেই জানেন না যে, ইসলামের সম্মানিত ও মর্যাদার মাস কোনগুলো। মানুষ যখন জানবে যে এ মাসগুলো সম্মানিত। তখন মানুষের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হবে যে, আসলেই এটি মহররম মাস। এ মাসের যাবতীয় পাপাচার নিষিদ্ধ। তাই সস্মানিত মাসগুলো সম্পর্কে যেমন জানা জরুরি। তেমনি হারাম মাসের ইবাদত ও আমল সম্পর্কে ধারণা নেয়া জরুরি।
পাপাচারমুক্ত থাকার মাস
আল্লাহর দেওয়া সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে মহররমসহ সম্মানিত ৪ মাসের দুনিয়ার যাবতীয় পাপাচার থেকে মুক্ত থাকা মুমিন মুসলমানের দ্বিতীয় কাজ। তবেই জীবনের বাকি সময়গুলো এ মাসের অনুসরণ ও অনুকরণে গুনাহমক্ত থাকা সহজ হবে। এ মাসগুলোর করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
এ (মাসের) মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি কোনোরূপ অত্যাচার করো না।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৩৬)
আয়াতের ব্যাখ্যা তাফসির বিশারদগণ বলেছেন, অত্যাচার বলতে এখানে যে কোনো ধরণের পাপাচার করাকে বুঝানো হয়েছে। তাই এ মাসের পাপাচার না করাই কোরআনে নির্দেশিত সেরা অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আমল।
এমনিতে অন্যান্য মাসে গোনাহের কাজ করা মুমিন মুসলমানের জন্য জঘন্য কাজ। আর সম্মানিত চার মাস জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব মাসের পাপাচার করা দ্বিগুণ মারাত্মক অন্যায় ও সরাসরি মহান আল্লাহর নির্দেশের লঙ্ঘন।
সওয়াবের প্রতিযোগিতার মাস
সওয়াব ও ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করা এ মাসের তৃতীয় কাজ। ইসলামিক স্কলারদের মতে, সম্মানিত ৪ মাসের মধ্যে মহররম মাসই শ্রেষ্ঠ। তাই এ মহররম মাসে গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি যেসব কাজে সওয়াব ও উপকারিতা রয়েছ, সেসব কাজের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দেওয়া খুবই জরুরি। আবার মর্যাদার বিচারে রমজানের পরেই এ মহররম মাসের স্থান। কেননা মহররম শব্দের অর্থই হলো- সম্মানিত।
মহররমকে সম্মান ও মর্যাদা দেখানোর অন্যতম কারণ
মাসটির নাম হলো ’মহররম’। এর অর্থ : সম্মানিত। হাদিসেও এ মাসটিকে আল্লাহর মাস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এটি (মহররম) শাহরুল্লাহ তথা আল্লাহর মাস।’ (মুসলিম)
মহররম মাসে রোজা
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।’ (মুসলিম)
ক্ষমার ঘোষণা
আশুরার দিন ও মহররম মাসজুড়ে বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা। কেননা এ দিন ও মাসের বিশেষ মুহূর্তে তাওবাহ-ইসতেগফারে আল্লাহ তাআলা পুরো জাতিকে ক্ষমা করে দেবেন। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মহররম হলো আল্লাহ তাআলার (কাছে একটি মর্যাদার) মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যাতে তিনি অতিতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন।’ (তিরমিজি)
ত্যাগ ও কোরবানির শিক্ষা গ্রহণ
দ্বীন ও ইসলামের কল্যাণে হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু জীবন থেকে আত্মত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করা সব মুসলমানের জন্য একান্ত করণীয়। যাদের মাঝে হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ ঈমানি চেতনা জাগরিত হলেই ইসলামের পরিপূর্ণ বিজয় আসবে।
মহররমে রোজাদারকে ইফতার করানো
এমনিতে ইফতার করানো অনেক ফজিলতপূর্ণ কাজ। সম্ভব হলে আশুরার দিনে নিজে রোজা রাখার পাশাপাশি রোজা পালনকারীদের ইফতার করানো উত্তম। সাধ্যমত দান-সাদাকাহ করা। গরিবদেরকে পানাহার করানো। ইয়াতিমের প্রতি সদয় ব্যবহার ও সহযোগিতা করা।
মহররম মাসে বর্জনীয়
- হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে কাল্পনিক তাযিয়া বা নকল কবর বানানো থেকে বিরত থাকা।
- তাযিয়া বানিয়ে তা কাঁধে বা যানবাহনে বহন করে মিছিলসহ সড়ক প্রদক্ষিণ করা থেকেও বিরত থাকা।
- নকল এসব তাযিয়ার সামনে হাতজোড় করে দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকা এবং এসব তাযিয়া বা নকল কবরে নজরানা স্বরূপ অর্থ দান করা থেকেও বিরত থাকা।
- হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুর স্মরণে নিজেদের দেহে আঘাত বা রক্তাক্ত করা থেকে বিরত থাকা।
- শোক বা মাতম করা থেকে বিরত থাকা।
- যুদ্ধ সরঞ্জামে সজ্জিত হয়ে ঘোড়া নিয়ে প্রদর্শনী করা থেকে বিরত থাকা।
- হায় হুসেন, হায় আলি ইত্যাদি বলে বিলাপ, মাতম কিংবা মর্সিয়া ও শোকগাঁথা প্রদর্শনীর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বুকে পেটে পিঠে ছুরি মেরে রক্তাক্ত করা থেকেও বিরত থাকা।
- ফুল দিয়ে সাজানো এসব নকল তাযিয়া বা কবরের বাদ্যযন্ত্রের তালে প্রদর্শনী থেকে বিরত থাকা
- হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহ আনহুর নামে ছোট বাচ্চাদেরকে ভিক্ষুক বানিয়ে ভিক্ষা করানো। এটা করিয়ে মনে করা যে, ঐ বাচ্চা দীর্ঘায়ু হবে। এটাও মহররম বিষয়ক একটি কু-প্রথাও বটে
- আশুরায় শোক প্রকাশের জন্য নির্ধারিত কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরা থেকে বিরত থাকা।
- আশুরা বা ১০ মহররমকে কেন্দ্র করে এসব প্রচারণা থেকে বিরত থাকা জরুরি-
- ১০ মহররম পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়।
- কেয়ামত সংঘটিত হওয়া।
- হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালামের সৃষ্টি। বেহেশতে প্রবেশ। আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হওয়া।
- হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আগুন থেকে নাজাত।
- হজরত নুহ আলাইহিস সালামকে মহাপ্লাবন থেকে নিষ্কৃতি ও পাপিষ্ঠ জাতিকে ধ্বংস।
- এই দিনেই অত্যাচারী শাসক নমরূদের ধ্বংস।
উল্লেখিত ঘটনার সঙ্গে আশুরার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং মিথ্যা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জাহান্নামে নিজেদের ঠিকানা বানানো থেকে বিরত থাকাই জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহররম ও আশুরার ফজিলত পেতে করণীয়গুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। বর্জনীয় ও মিথ্যা ঘটনা বর্ণনা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল, মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল, মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল, মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল, মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল, মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল, মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল, মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল, মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল