জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা ও তাদের ইজ্জত-সম্মানের বিলুপ্তি - Status of women and their loss of dignity in Jahili period
(toc)
বলাবাহুল্য 'ইসলাম' যে যুগে মানব জীবনের এই বিষয়টির আইনসম্মত ধারাসমূহ জনসমক্ষে উপস্থাপন করেছে, সে যুগে বিবাহ ব্যবস্থার মৌলিক উদ্দেশ্যই একেবারে বিলুপ্তির শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। সুখ-শান্তি ও পরিতৃপ্তির অনুভূতি স্বামী-স্ত্রীর অন্তর থেকে একেবারে তিরোহিত হয়ে গিয়েছিল। দু'টি পরিবার ও দু'টি জীবনে গড়ে উঠা আত্মীয়তা ও সহমর্মিতাসূচক স্নেহমমতা নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। বৈবাহিক সম্পর্ক ও সম্বন্ধের কোনো শুভ ধারাই আর অবশিষ্ট ছিল না। এমন কি বৈবাহিক সম্পর্কের “মূল” স্বরূপ ইযযত সম্মান পর্যন্ত নিরর্থক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শুধুমাত্র খোসা পড়ে রয়েছিল আর মহৎ গুনাবলীসমূহ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
জাহেলী যুগে নারী-নির্যাতন সর্বক্ষেত্রে নারী সমাজ পুরুষদের যুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। পুরুষ পুরুষ নয় বরং অসহায় ও দুর্বল শ্রেণীর প্রতি বনের হিংস্র জন্তুর ন্যায় ছিল। সমগ্র দুনিয়ার লোকালয়ের এ ছিলো এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এক্ষেত্রে ভাল-মন্দ ও সভ্য-অসভ্য সমাজে বিশেষ কোনো পার্থক্য ছিল না। চতুষ্পদ জন্তু ও গৃহের অন্যান্য আসবাবপত্রের মতো নারীরা পণ্য-সামগ্রী ছিল। সময়ে অসময়ে পুরুষরা নারীদের ওপর স্বীয় কাম-প্রবৃত্তি চরিতার্থ হেতু জোর-যবরদস্তী চালাতো। এমনকি নারীদেরকে জঘন্য দেহব্যবসা গ্রহণের জন্যও বাধ্য করা হতো। অর্থাৎ, স্বীয় যৌনবৃত্তি চরিতার্থ করার সাথে সাথে অর্থোপার্জনের মাধ্যম হিসাবেও পুরুষরা ওই অসহায় নারীদের যথেচ্ছ ব্যবহার করতো।
বর্বর জাহেলী যুগে নারীদেরকে পশুর ন্যায় একটি জীব বিশেষ মনে করা হতো, যার উদ্দেশ্য ছিলো মানব বংশ বিস্তার এবং পুরুষের সেবা করা। আর এজন্যই কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়া লোক-সমাজে লজ্জার কারণ ছিল। কন্যা সন্তানের ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই তাকে জীবন্ত কবর দিত এবং এ জীবন্ত কবর দেয়াকে গৌরব ও আভিজাত্যের প্রতীকরূপে মনে করতো। বর্বরতার ইতিহাসের এই বিশেষ অধ্যায়টি সম্পর্কে নিছক কুরআন থেকে যে জ্ঞানটুকু লা করা যায়, শিক্ষা ও উপদেশের ক্ষেত্রে তা-ই যথেষ্ট।
কন্যা জন্মের পর পিতার প্রতিক্রিয়া
কন্যা সন্তান জন্মের সংবাদ শুনে পিতার অন্তরে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতো, কুরআন মজীদে তা নিম্নোক্ত ভাষায় ব্যক্ত হয়েছে । আল্লাহ বলেনঃ
إذا بشر أحدهم بالانفى ظل وجهه مسود وهو كظيم يتوارى مـن الـقـوم مـن سـوء ما بشربه. ايمسك على هـون أم يدشة في التراب ط
“যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তান জন্মের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায় এবং সে এক অসহনীয় মর্মজ্বালায় ভুগতে থাকে। তাকে যে কন্যা সন্তান জন্মানোর সংবাদ দেয়া হয়েছে, তার লজ্জায় সে মানুষ থেকে মুখ লুকিয়ে ফেলে। সে চিন্তা করে, হীনতা সত্ত্বেও তাকে জীবন্ত রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে।"( -সূরা আন নাহল : ৫৮-৫৯)
পবিত্র কুরআনের অন্যত্র সংক্ষেপে এ বিষয়টির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে নিম্নরূপ ভাষায়:
إذا بشر أحـدهـم بـمـا ضـرب للرحمن مثلا ظلّ وجهه مسودا وهو كظيم
“তারা দয়াময় আল্লাহর প্রতি যে কন্যা সন্তান আরোপ করে, তাদের কাউকে সেই কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দিলে তার মুখাবয়ব কালো হয়ে যায় এবং সে এক অসহ্য বেদনায় কাতর হয়ে পড়ে।” (সূরা আয্ যুখরুফ : ১৭)
জাহেলী চিন্তা-চেতনার অসারত্বের উল্লেখ করে কুরআনেই বলা হয়েছে, একদিকে বর্বররা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা বলে অভিহিত করতো, অর্থাৎ, 'পবিত্র দেবী'র কল্পনাও তারা মনে পোষণ করতো, আর অন্যদিকে তারা কন্যা সন্তানের পিতা হওয়ার গ্লানি সইতেও প্রস্তুত ছিল না। এই বৈপরীত্রের প্রতি ইঙ্গিত করে কুরআনুল কারীম ঘোষণা করেছেন-
الاصفكم ربكم بالبنين واتخذ من المالكة إننا الكم لتقولون قولا مبنا
“তোমাদের রব কি তোমাদের জন্য পুত্র সন্তান নির্ধারিত করেছেন এবং তিনি নিজে ফেরেস্তাদেরকে কন্যারূপে গ্রহণ করেছেন? নিশ্চয়ই তোমরা অতি বড় ভয়ানক কথা বলছো।" (-সূরা নবী ইসরাঈল:৪০)
আর সংবাদ আকারে এ কথাই এরূপ ভাষায়ও কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে:
يجعلون لله البنات سبحانه ولهم ما يشتهون.
“তারা নির্ধারণ করে আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান, অথচ তিনি পবিত্র, মহিমান্বিত। আর নিজেদের জন্য স্থির করে নিজেদের পছন্দসই বস্তু।” (-সূরা আন নাহল : ৫৭)
কন্যা সন্তানকে জীবন্ত হত্যা
বড় ভয়ানক " অনুভুতি ছিলো বর্বর যুগে অসহায় মেয়েদের সম্পর্কে। কাজেই জাহেলী যুগের অধিকাংশ লোক যদি এই হীনতা থেকে বাঁচার জন্য তাদের কন্যা সন্তানদের জীবন্ত মেরে ফেলে থাকে, তাতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। এই নির্দয়তার প্রতি ইঙ্গিত করেই কুরআনে ঘোষণা হয়েছে:
وإذا الموعودة سئلت بای ذنب قتلت .
“যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?” (-সূরা তাকভীর: ৮-৯)
সামাজিক অপমান ও গ্লানি ছাড়া পবিত্র কুরআন থেকেই এও জানা যায় যে, অর্থসংকটের ভ্রান্ত ধারণাও তাদেরকে সন্তান হত্যা'র মত জঘন্য অপরাধে উদ্বুদ্ধ করেছিলো। সেই দিকে ইংগিত করেই পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে:
ولا تقتلوا أولادكـم مـن امـلاق نحن نرزقكم واباهم
“আর দারিদ্রের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযিক দিয়ে থাকি। (-সূরা আল আনআমঃ১৫১)
অনত্র আল্লাহ ঘোষণা করেছেন:
ولا تقتلوا أولادكم خشية إطلاق و نحن نرزقهم واياكم إن قتلهم كان خطنا كبيرا.
“তোমাদের সন্তানদেরকে দারিদ্য ভয়ে হত্যা করো না। তাদেরকে ও তোমাদেরকে আমিই রিযিক দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই সস্তানের হত্যা মহাপাপ।” (-সূরা বনী ইসরাঈলঃ৩১)
এ স্বভাববিরোধী কার্যকলাপের দরুন জাহেলী যুগে নারীর সংখ্যা হ্রাস পেতে পেতে শেষ পর্যন্ত এমন অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল, যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে 'কন্যা হত্যা'র এই নৃশংস রীতি ভারতবর্ষের কোনো কোনো জাতির মধ্যে। অর্থাৎ তাদেরকে একজন নারীর জন্য বিপুল পরিমান অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। আর এভাবেই 'নারীর অস্তিত্ব' তাদের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, যেমনিভাবে আরব জাহেলিয়াতের কোনো কোনো বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, 'স্ত্রী'-কে তারা পরম শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখতো। অবশ্য তার অর্থ ছিল এই যে, একজন স্ত্রী লাভ করার জন্য তাদের বিপুল অর্থ-সম্পদ খরচ করতে হতো।
সম্মান হানি
বর্বর জাহিলিয়াত যুগের মানুষের ওপর কুরআনের এই নির্দেশ প্রয়োগের প্রয়োজন পড়লো : আল্লাহ ঘোষণা করেন:
لاتكرهوا فتياتكم على البغاء إن أردن تحضنا لتبتغوا عرض الحيوة الدّنيا.
“তোমাদের দাসীগণ স্বীয় সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন-লিম্পায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না।”(-সূরা আন নূর:৩৩)
এ থেকে অনুমান করা চলে, তাদের দৃষ্টিতে নারীত্বের মর্যাদা কতটুকু ছিলো।
হাদিস সূত্রে জানা যায়, জাহেলিয়াত যুগে নারীদেরকে বন্ধকও রাখা হতো। মুহাম্মদ ইবনে মুসলিমা (রা.) বলেন, আমি যখন কা’আবের নিকট গিয়ে শষ্য ঋণদানের আবেদন করলাম, তখন কা'ব বললো-
قال الهنوني نساءكم قالوا كيف ترهنت نساءنا وأنت أجمل العرب - (بخاری باب قتل كعب بن الأشرف)
“তোমরা তোমাদের স্ত্রীলোকদের আমার নিকট বন্ধক রাখো। তাঁরা বললেন, আমরা কিভাবে আপনার নিকট আমাদের স্ত্রীলোকদের বন্ধক রাখতে পারি? অথচ আপনি হলেন আরবের সবচেয়ে সুন্দর ও সুশ্রী ব্যক্তি।”(-বুখারী)
উক্ত ঘটনা থেকেও অনুমিত হয় জাহেলী যুগের নারী সমাজ কতো নিগৃহীত ছিলো, আর তাদের ইয্যত সম্মান কতো নিম্ন ভাবা হতো! বর্বর যুগে বিবাহ-প্রথা অবশ্যই ছিলো। কিন্তু তার ধরন কি ছিলো? বলতে গেলে তার বেশীর ভাগই ছিলো ব্যভিচার। এতটুকু তো অবশ্যই বলা চলে যে, নারীর ইয্যত-সম্মান বলতে কিছুই ছিলো না।
জাহেলী যুগের বিবাহ পদ্ধতি
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বর্ণনা করেন যে, বর্বর যাহেলী যুগে চার ধরনের বিবাহ পদ্ধতি চালু ছিল:
১. যা বর্তমান প্রচলিত আছে। এক প্রকার তো এরূপ ছিলো,
২. স্বামী বিবাহিতা স্ত্রীকে বলতো, ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে পবিত্র হওয়ার পর তুমি অমুক ব্যক্তির কাছে চলে যাবে এবং তার দ্বারা মজা লুটে নিবে, অর্থাৎ, ওই পুরুষের সাথে সংগম করবে। যতদিন পর্যন্ত ঐ পুরুষটির দ্বারা তার স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার আলামত প্রকাশ না পেতো, ততোদিন সে নিজে স্ত্রী সংগমে বিরত থাকতো। অপর পুরুষ দ্বারা গর্ভবর্তী হলেই কেবল সে তার ইচ্ছা অনুযায়ী স্ত্রীর কাছে যেতো। বর্বর যুগের লোকদের ধারণা ছিলো, এই পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তান উৎকৃষ্ট ও অভিজাত শ্রেণীর হয়। এই বিবাহকে ইযতিরা' বলা হতো। সন্তানের বীজ ভিন পুরুষ থেকে লাভ করার এ ছিলো একটি পন্থা বিশেষ।
৩. তৃতীয় প্রকারের বিবাহ ছিলো, একজন নারীকে কয়েকজন পুরুষ মিলে ভোগ করতো। কিন্তু তাদের সংখ্যা দশের অধিক হতো না। স্ত্রীলোকটি গর্ভবর্তী হয়ে সন্তান প্রসবের কিছুদিন পর লোক মারফত তাদের সবাইকে ডাকতো। কেউ আসতে অস্বীকার করার দুঃসাহস করতে পারতো না। সবাই উপস্থিত হলে স্ত্রীলোকটি বলতো, তোমরা নিজের কৃতকর্মের ব্যাপারে নিশ্চয় অবগত আছো।
আমার সাথে তোমরা যৌন মিলন করতে আসতে। এখন আমার সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। অতপর একজনের দিকে নির্দেশ করে বলত। এটি তোমার সন্তান। তোমার পছন্দ মাফিক এর নাম রাখো। এই ভাবে স্ত্রীলোকটি যে ব্যক্তির নাম উচ্চারণ করতো, সে-ই ওই নবজাতকের পিতা হতো। তার অস্বীকার করার কোনো সুযোগ বা উপায় ছিলো না।
৪. কোন কোন নারীর গৃহদ্বারে ঝান্ডা উঁচানো থাকতো। এ সব নারী পেশাদার বাজারী পতিতা ছিল। তাদের সাথে সংগম করার সবারই অবাধ অনুমতি ছিল। সস্তান প্রসবের পর সকল সংগমকারী এসে একত্রিত হতো। অবশেষে গণককে খবর দেয়া হতো। গণক যাকে শিশুর পিতা বলে ঘোষণা দিত সে-ই শিশুর পিতা হতো। এ পিতৃত্ব সে অস্বীকার করতে পারতো না।
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বিবাহের এই চার ধরনের পদ্ধতি উল্লেখ করে বলেন যে, এর সবগুলো অবৈধ ও ঘৃণিত পন্থা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসব পন্থা চিরতরে বন্ধ করে দেন।
لتابعت محمد صلى الله عليه وسلم بالحق هـدم نـــاح الـجـاهلية كلـة الإنـكـاح الـنـاس الـيـوم - (بخاری کتاب النکاح
অতপর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য সহকারে আবির্ভূত হয়ে জাহিলী বিবাহ প্রথাগুলো চিরতরে নিষিদ্ধ করে দেন। শুধু একটি প্রথা অবশিষ্ট রাখেন, যা বর্তমান প্রচলিত আছে। (-বুখারি)
আলোচ্য হাদীস থেকে জানা যায় যে, জাহেলী যুগের নারী সমাজ তাদের ইয্যত-সম্মানের স্বাভাবিক মূল্যবোধ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। যেখানে স্বয়ং স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে ভিন পুরুষের বীজ লাভের জন্য স্বেচ্ছায় প্রেরণ করতো, এর থেকেই অনুমান করা যায়, নারী জাতি ও তার ইযযত-সম্মান সম্পর্কে জাহেলী ধারণার দৈন্য কতোদূর গড়িয়েছিলো! ঘটনাদৃষ্টে বুঝা যায়, পুরুষরা মনে করতো মহরের অর্থের বিনিময়ে স্ত্রীর তার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। আর এ সব কারণেই স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পরিণত হতো।
অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যে নারীর মর্যাদা
এসবতো যাহেলী যুগে আরব দেশের হাল হাকিকত। আরবের বহির জগতে নারী ও তার ইয্যত কোন দৃষ্টিতে দেখা হতো, এখন তাই আলোচনা করা যাক। এ সম্পর্কে প্রখ্যাত অমুসলিম গবেষক ডাঃ গুস্তাগুলি বনের উক্তি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন: গ্রীকরা সচরাচর স্ত্রীলোকদের নীচ স্তরের মনে করতো। কোনো নারী অস্বাভাবিক সন্তান জন্ম দিলে তাকে হত্যা করা হতো। (-তামাদ্দুনে আরব')
স্পার্টায় যে হতভাগ্য নারীর গর্ভে কোনো জাতীয় সৈনিক জন্মানোর সম্ভাবনা না থাকতো, তাকে হত্যা করা হতো। কোনো স্ত্রীলোক সন্তান ধারণের উপযুক্ত হলে দেশের স্বার্থে ঐ স্ত্রীলোককে অন্য পুরুষ দ্বারা গর্ভধারণের জন্য তার স্বামীর নিকট থেকে ধার স্বরূপ নেয়া হতো। গ্রীকরা তাদের উন্নততর সভ্যতার যুগেও নর্তকী ছাড়া অন্য কোনো নারীর সম্মান করতো না।
'প্রাচীন কালের' বাগ্মী অধ্যায়ে লিখা আছে : “আল্লাহর নৈকট্য বা প্রিয় বান্দা মাত্রই নারীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকবে। সহস্র শতাব্দীর মধ্যে আমি একজন মাত্র আল্লাহর প্রিয় পাত্র পেয়েছি। কিন্তু সমগ্র পৃথিবীতেও আল্লাহর একজন প্রিয়পাত্রী পাইনি।' -তামাদ্দুনে আরব রোমে “স্বামী তার স্ত্রীর উপর নিগ্রহমূলক শাসন ক্ষমতা চালাতো। সমাজে নারীর অধিকার বলতে কিছুই ছিলো না। স্বামী তার স্ত্রীর জানমালের নিরঙ্কুশ অধিকারী ছিলো। গ্রীসের অবস্থাও ছিলো হ-য-ব-র-ল।”
ইয়াহুদী আইন
তাওরাত ইস্তিছনা, পরিচ্ছেদ ২৫, নম্বর ৫-১০ এ উল্লেখ আছে, যদি দুই ভাই একত্র বাস করে এবং তাদের একজন অপুত্রক হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তবে সেই মৃত ব্যক্তির স্ত্রী বাইরের অন্য গোষ্ঠীভূক্ত পুরুষকে বিবাহ করবে না। বরং তার দেবর তার কাছে গিয়ে তাকে বিয়ে করবে এবং তার প্রতি দেবরের কর্তব্য সাধন করবে। পরে সেই স্ত্রী যে প্রথম ছেলে সন্তান প্রসব করবে, সে ওই মৃত ভ্রাতার নামে উত্তরাধিকারী হবে। তাতে ইসরাঈলী হতে তার নাম লুপ্ত হবে না।
আর সেই পুরুষ যদি আপন ভ্রাতৃপত্নীকে গ্রহণ করতে অসম্মত হয়, তবে সেই ভ্রাতৃপত্নী বিচারকদের সাক্ষাতে দেবরের নিকট এসে তার পদ হতে জুতা খুলবে এবং তার মুখে থুথু দেবে আর উত্তমভাবে বলবে, যে ব্যক্তি আপন ভাইয়ের জাত-কুল রক্ষা না করে, তার প্রতি এরূপই করা যাবে। আর ইসরাঈলের মধ্যে তার নাম হবে, “মুক্ত পাদুকার কুল'।" -ইসলাম কে সিয়াসী নীয়ে পবিত্র গ্রন্থে লিখা আছে 'নারী মৃত্যুর চেয়েও অধিক তিক্ত।' (-তামাদ্দুনে আরব)
হিন্দু শাস্ত্রের বিধান
হিন্দু শাস্ত্রের বিধানে নারী ও তার ইয্যত সম্মানের কি মূল্য ছিলো, সে সম্পর্কে প্রথমে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীজী মহারাজ কৃত 'সতীর্থ প্রকাশ'- এর এই উদ্ধৃতিটির প্রতি লক্ষ্য করুন: “বিবাহ আট প্রকারেরঃ
- ব্রহ্ম,
- দৈব,
- আর্য,
- প্রজাপাত্য,
- আসুর,
- গান্ধর্ব,
- রাক্ষস,
- পৈশাচ।
এসব বিবাহের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:
- বর-কনে পূর্ণ ব্রহ্মচারী, প্রাজ্ঞ ধার্মিক ও সচ্চরিত্র। তাদের পারস্পরিক সম্মতিতে যে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়, তাকে ব্রাহ্ম বিবাহ' বলে।
- বিরাট জাক-জমকপূর্ণ উত্তমরূপে যজ্ঞানুষ্ঠান সম্পন্ন করে জামাতাকে সালঙ্কারা কন্যা প্রদানকে দৈব বিবাহ' বলে।
- তিন, বর থেকে কিছু গ্রহণ করা হলে তা 'আর্য বিবাহ' বলে।
- স্বীয় ধর্মের উন্নতিকালে উভয়ের বিবাহ হলে 'প্রাজাপাত্য বিবাহ' বলে।
- বর কর্তৃক কনেকে পণ দিয়ে বিয়ে হলে 'আসুর বিবাহ' বলে।
- নির্জনে পাত্র-পাত্রী প্রেমালাপ করে স্বেচ্ছায় বিবাহ করার নাম 'গান্ধর্ব বিবাহ'।
- জোর করে কেড়ে নিয়ে অথবা ছলনার আশ্রয় দ্বারা যে বিবাহ করা হয়,তার নাম 'রাক্ষস বিবাহ' বলে।
- ঘুমন্ত কিংবা নেশা বা মদ প্রভৃতি পান করে অজ্ঞান বা উন্মাদ কনের শয্যা গ্রহণকে পিশাচ বিবাহ' বলে। (-সতীর্থ প্রকাশ, চতুর্থ অধ্যায়)
পরিবার কিংবা কয়েক ভাইয়ের মিলিত স্ত্রী প্রথা প্রাচীন ভারতবর্ষের এক সুপরিচিত পদ্ধতি। (-তামাদ্দুনে আরব)
মনুস্মৃতির নবম অধ্যায়ের ঊনষাট নম্বর শ্লোকের সারমর্ম হলো এই হিন্দু ব্রাহ্মণদের মধ্যে "নিয়োগ' প্রথা প্রচলিত আছে যে, স্বামীর দ্বারা সন্তান জন্ম না হলে স্ত্রী তার শ্বশুর প্রমুখের নির্দেশক্রমে কোনো নিকটাত্মীয় বা দেবর দ্বারা পছন্দ মত সন্তান উৎপাদন করাতে পারে। (-ইসলাম কে মাআশী নযরীয়ে)
সতীর্থ প্রকাশ গ্রন্থে আছে:
স্ত্রী 'বন্ধ্যা হলে অষ্টম বছর (বিয়ের পর থেকে আট বছর পর্যন্ত স্ত্রী গর্ভবতী না হলে) সন্তান জন্মের পর মারা গেলে দশম বছর পর্যন্ত পুত্র সন্তান না হয়ে বার বার কন্যা সন্তান হলে একাদশ বছর স্ত্রী অপ্রিয়ভাষিণী হলে সত্ত্বর উক্ত স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে অপর স্ত্রীলোকের সাথে নিয়োগ' করে সন্তান উৎপাদন করবে।' (-সতীর্থ প্রকাশ, চতুর্থ পরিচ্ছেদ।)
তেমনি ভাবে স্বামী চরম উৎপীড়ক হলে স্ত্রীর উচিত তাকে পরিত্যাগ করে অন্য লোক 'নিয়োগ' করে সন্তান উৎপাদন করানো এবং উৎপাদিত সন্তানকে উক্ত বিবাহিত স্বামীর উত্তরাধিকারী বানাবে। (-সতীর্থ প্রকাশ)
স্বামী সন্তান জন্মদানে অক্ষম হলে স্বীয় স্ত্রীকে এই মর্মে অনুমতি দেবে যে, 'হে সৌভাগ্যবর্তী সন্তান অভিলাষিণী। তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য স্বামী গ্রহণ করো, কেননা এখন আমার দ্বারা সন্তান উৎপাদন হবে না। তখন স্ত্রী অন্য লোক 'নিয়োগ' করে সন্তান উৎপাদন করাবে। কিন্তু উক্ত বিবাহিত উচ্চমনা স্বামীর সেবায় সদা সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। তেমনিভাবে স্ত্রীও রোগ প্রভৃতি কারণে সন্তান ধারণে অক্ষমা হলে স্বীয় স্বামীকে অনুমতি দেবে....অপর কোনো বিধবা স্ত্রীর সাথে 'নিয়োগ' করে সন্তান উৎপাদন করুন। (-সতীর্থ প্রকাশ)
"নিয়োগ' প্রথার আরো বিশ প্রকারের অবস্থা উক্ত গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। এ- তো ছিলো বিয়ে-শাদীর অবস্থা। এখন নারীর রূপ-প্রকৃতি সম্পর্কেও একটু শুনুনঃ
“হিন্দু শাস্ত্র বলেঃ মৃত্যু, নিরয়, হলাহল, নিয়তি, ঝঞ্ঝা, আশীবিশ এগুলোর কোনোটিই ততোটা খারাপ (অলক্ষণে) নয়, যতোটা খারাপ নারী। (-তামাদ্দুনে আরব)
মনুর বিধান বলেঃ "নারী শিশু কালে পিতার অধীন, পূর্ণ বয়সে স্বামীর অধীন, স্বামীর পর স্বীয় পুত্রদের, পুত্র না থাকলে আত্মীয়-স্বজনের। কেননা কোনো নারীই স্বাধীনভাবে জীবন যাপনের উপযুক্ত নয়।” (-তামাদ্দুনে আরব)
প্রাক ইসলামী ভারতের প্রাচীন শাস্ত্রকার এই মর্মে পরিষ্কার অনাস্থা প্রকাশ করেছেন যে, কোনো নারীকে ব্যভিচারিণী বলার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ট যে, সে কোনো পুরুষের সাথে ততক্ষণ নির্জনবাস করেছেন, যতক্ষণে একটি ডিম্ব ডুবে যেতে সময় লাগে। (-তামাদ্দুনে আরব)
খৃস্টান চিন্তাধারা
তারতুলিয়ান খৃষ্টান ধর্মের প্রাথমিক যুগের ধর্মগুরু। তিনি নারী সম্বন্ধী খৃস্টীয় চিন্তাধারা নিম্নরূপ ভাষায় ব্যক্ত করেছেনঃ
নারী শয়তান আগমনের দ্বারস্বরূপ, নারী নিষিদ্ধ বৃক্ষের প্রতি আকর্ষণকারিণী, আল্লাহর আইন ভঙ্গকারিণী এবং আল্লাহর প্রতিমূর্তি পুরুষের ধ্বংসকারিণী।'
ক্রাইসোসটাম একজন বিখ্যাত খৃষ্টীয় ধর্মগুরুরূপে সুপরিচিতি। তিনি নারী সম্বন্ধে বলেন, 'নারী একটি অনিবার্য পাপ, একটি জন্মগত কু-প্ররোচনা, একটি আনন্দাদায়ক বিপদ, একটি পারিবারিক আশংকা, একটি ধ্বংসাত্মক প্রেমদায়িনী এবং একটি সজ্জিত দুর্ঘটনা মাত্র।'
নারী সংক্রান্ত প্রবাদ
নারী জাতি সম্পর্কে বিভিন্ন দেশে যেসব প্রবাদসমূহ প্রচলিত আছে, তাতেও নারীদের মান-মর্যাদা সম্পর্কে তাদের চিন্তাধারা প্রকাশ পায়।
রূশ প্রবাদঃ
দশটি নারীতে একটি মাত্র আত্মা।
ইটালীয় প্রবাদঃ
ঘোড়া ভালো হোক কিংবা মন্দ, তার মাহমেয (লোহার কাঁটা, যা অশ্বারোহীর পায়ের গোড়ালিতে লেগে থাকে) প্রয়োজন। নারী ভালো হোক কি মন্দ, তার প্রহারের প্রয়োজন।
স্প্যানিশ প্রবাদঃ
কালো, কুৎসিত নারী থেকে দূরে থাকা উচিত, কিন্তু সুন্দরী নারীর ওপর ভরসা করা উচিত নয়। (-তামাদ্দুনে আরব)
জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা, জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা, জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা, জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা, জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা, জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা, জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা, জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা, জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা, জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা, জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা, জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা, জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা, জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা