Is NATO expanding in the Indo-Pacific - ন্যাটো কি ইন্দো-প্যাসিফিকে সম্প্রসারিত হচ্ছে
ন্যাটো কি ইন্দো-প্যাসিফিকে সম্প্রসারিত হচ্ছে - Is NATO expanding in the Indo-Pacific? লেকখ: গোরানা রিজিক
লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আজ থেকে শুরু হয়েছে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অরগানাইজেশন বা সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন। শুরুতেই বলে রাখা দরকার, রাশিয়ার একেবারে নাকের ডগায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের ওপর দৃষ্টি রয়েছে সারা বিশ্বের। গত বছর, তথা ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে ন্যাটোর সব ধরনের মিটিং একটু বেশিই গুরুত্ব পেয়ে আসছে- এটাই স্বাভাবিক। এরূপ প্রেক্ষাপটে ভিলনিয়াস সম্মেলন যে আগের সম্মেলনগুলোর তুলনায় বাড়তি দৃষ্টি কাড়বে, তা জানাই ছিল। বাস্তবে ঘটেছেও তাই- সম্মেলন ঘিরে ভিলনিয়াস রণসাজে সজ্জিত!
বেশ কিছু ‘হট আইটেম’ রাখা হয়েছে এবারের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের এজেন্ডায়। সবচেয়ে বড় টপিক স্বভাবতই ‘ইউক্রেন যুদ্ধ'। যুদ্ধকবলিত ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া হবে কি নাএমন প্রশ্নকে কেন্দ্র করে আলোচনা-সমালোচনা জোর দানা বাঁধছিল সম্মেলন সামনে রেখে। তবে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ এখনই না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে শোনা যায় সম্মেলনের আগেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেন ন্যাটোতে আসতে পারবে না।' এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যুক্তি হিসেবে বাইডেন 'বলেন, ‘অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী আক্রমণের শিকার যে কোনো সদস্যকে রক্ষা করতে ন্যাটো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রতিশ্রুতি আমরা • সবাই রক্ষা করতে বাধ্য। এই অর্থে, ইউক্রেনকে সদস্য করলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটোর সরাসরি যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়বে।' যা হোক, সদস্যপদ না দিলেও চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদানের বিষয়ে, বিশেষ করে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর হাতে ক্লাস্টার বোমা (গুচ্ছ যুদ্ধাস্ত্র) তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে ধরে নেওয়া যায়।
ইউক্রেনের সদস্যপদের বিষয়ে নতুন করে কথা তুলবে আলোচনার টেবিলে মিত্ররা- এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। এর কারণ, এখন পর্যন্ত ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানার অপক্ষোয় রয়েছে ইউক্রেন। এ বিষয়ে পরিষ্কার রোপম্যাপও চাইছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি । তা ছাড়া স্নায়ুযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো ন্যাটোর সামরিক পরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধিসংক্রন্ত বিষয়েও আলোচনায় বসবেন ন্যাটো সদস্যরা। ৩১টি সদস্য দেশের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা খাতে তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের কমপক্ষে ২ শতাংশ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি আদায়ের কথা ভাবছেন, ন্যাটো সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ । অথচ এক দশক আগেও এই সিদ্ধান্তকে ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষা' হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
এবারের সম্মেলনের একটি বিশেষ দিক হলো, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ওপর বেশি করে মনোযোগ দিতে চায় ন্যাটো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাটোর আগ্রহের তালিকায় রয়েছে মোটাদাগে চারজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি। তারা হচ্ছেন- এশিয়া-প্যাসিফিকের চার নেতা : অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। শুধু এবারের সম্মেলনে নয়, গত বছর মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনেও উল্লিখিত নেতাদের সামনের কাতারে দেখা গিয়েছিল। অর্থাৎ এই চার নেতা টানা দ্বিতীয় বারের মতো ন্যাটো সম্মেলনের লাইমলাইটে থাকছেন।
বস্তুত, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ন্যাটোর শক্ত খুঁটি পোঁতার মিশন এখন পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। এসবের মধ্যে আবার সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বেশ কিছু সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে ন্যাটোর কতিপয় সদস্য। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল কিটিং এই অঞ্চলের সঙ্গে ন্যাটোর সম্পর্ক বাড়ানোর বিপক্ষে! এমনকি এখানে কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ন্যাটোর প্রধান স্টলটেনবার্গকে ‘বড় ধরনের নির্বোধ' বলেও অবিহিত করেছেন তিনি। তালিকায় আছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নামও। টোকিওতে ন্যাটোর প্রস্তাবিত অফিস খোলার বিরোধিতা করছেন তিনি। এসবের পরও কেন এই চার নেতাকেই ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে, তা এক বড় প্রশ্ন বটে।
এ কথা সবার জানা, এই দেশগুলো ইউক্রেনকে সমর্থনকারী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে এই দেশগুলো কলকাঠি নেড়েছে কোনো না কোনোভাবে। নিষেধাজ্ঞা প্রদানকারী আন্তর্জাতিক জোটের অন্যতম সদস্যদেশও এই রাষ্ট্রগুলো। অর্থাৎ ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের মতো আয়োজনে, যেখানে নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে বিশেষ আলোচনা হওয়ার কথা, সেখানে তাদের উপস্থিতি থাকবে স্বভাবতই।
মনে থাকার কথা, বিশেষ করে গত বছর থেকে প্রথমবারের মতো চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও নীতিকে ন্যাটোর নিরাপত্তা, স্বার্থ ও মূল্যবোধের জন্য ‘একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। খোলসা করে বললে, চীন ও রাশিয়ার মধ্যকার ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ও সহযোগিতাকে ন্যাটোর প্রতিষ্ঠিত নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য একধরনের ‘হুমকি’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এমন কৌশলগত ধারণা প্রচলিত আছে, ন্যাটো তথা ইউরো-আটলান্টিক নিরাপত্তার জন্য ইন্দো-প্যাসিফিককে ‘হুমকিস্বরূপ’ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। এতে করে সরাসরি প্রভাবিত হতে পারে ন্যাটো ও জোটভুক্ত দেশগুলো। সম্ভবত এমন চিন্তা থেকেই এই অঞ্চলে ন্যাটোর কর্মপরিধি বাড়ানোর কথা চিন্তা করা হয়ে থাকতে পারে। এর মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে ন্যাটোর পক্ষে বিদ্যমান অংশীদারত্ব আরও শক্তিশালী হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। অবশ্য এই নতুন অংশীদারত্ব ঠিক কেমন হবে, তা নিয়ে নীতি-বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো, বিশ্লেষকদের আলোচনা-সমালোচনা সত্ত্বেও উক্ত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় চার দেশ ন্যাটোর সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক আরও শক্ত করতে চায়। জোটের সঙ্গে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর চিন্তা থেকেই কাজ করে যাচ্ছে দেশগুলো। এই অর্থে ধরে নেওয়া যায়, মাদ্রিদ শীর্ষ সম্মেলনকে যদি এই চার ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারের জন্য প্রতিশ্রুতি আদায়ের ‘দ্বার’ হিসেবে ধরা হয়, তবে ভিলনিয়াস শীর্ষ সম্মেলনকে দেশগুলোর দাবি-দাওয়ার ‘অগ্রগতি মূল্যায়নের মানদণ্ড' হিসেবে অবিহিত করতে হবে।
উল্লেখ করার বিষয়, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে সামনের সারিতে দেখা যাচ্ছে, যেমনটা ছিল মাদ্রিদ সম্মেলনে। জাপানি মিডিয়া গত সপ্তাহে এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, টোকিও ও ক্যানবেরা ‘ইন্ডিভিজুয়ালি টেইলর্ড পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম (আইটিপিপি)' নামে একটি নতুন চুক্তি করতে ন্যাটোর সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছে। এই প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য হলো দেশগুলোর সঙ্গে ন্যাটো ব্লকের সহযোগিতার মূল ক্ষেত্রগুলোকে নির্দিষ্ট করা। বসে নেই নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়াও। জোটের সঙ্গে নিজেদের ব্যক্তিগত চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য কাজ করছে দেশ দুটি।
মূলত, সম্ভবত নতুন করে এমন এক অংশীদারত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে করে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের ক্ষেত্রগুলোতে ফোকাস করা যায়। যেমন- সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, মহাকাশ এবং উদীয়মান প্রযুক্তির (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) মতো বিষয়গুলোকে মূল ফোকাসে রাখা হতে পারে। উপরন্তু প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার চিন্তা থেকে নিজেদের সামরিক বাহিনীর ‘আন্তঃকার্যযোগ্যতা’ উন্নত করার লক্ষ্য রয়েছে ন্যাটো ও উক্ত চার অংশীদারের। এর মধ্য দিয়ে একে অপরের সঙ্গে সামরিক সম্পদের জ্ঞান ভাগাভাগি, সেনা ও সামরিক কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করা এবং যৌথ মহড়া সম্প্রসারণের পথ অবারিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
যা হোক, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে বর্তমান উত্তেজনার জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় ও সহযোগিতার স্পষ্ট প্রয়োজন দেখছে কোনো একটি বৃহত্তর গোষ্ঠী! চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্টতই এই অংশীদারত্বকে ‘মন্থর গতিসম্পন্ন' করাকেই অধিক পছন্দ করবেন! টোকিওতে প্রস্তাবিত ন্যাটো লিয়াজোঁ অফিসকে চীন ইতিমধ্যে ‘আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা ধ্বংস করার প্রচেষ্টা’ হিসেবে সমালোচনা করেছে।
পরিশেষে বলতে হয়, ন্যাটোর সঙ্গে উক্ত চার অংশীদারের ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের টানাপোড়েন দেখে স্বস্তি পাবে বেইজিং ও মস্কো। এ অবস্থায় ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় চার দেশকে এই মৌলিক সত্যে একমত হতে হবে যে, ভবিষ্যতে চীন ও রাশিয়া উভয়ের সঙ্গে আরও বেশি প্রতিযোগিতা ও তিক্ত সম্পর্ক দেখতে হতে পারে তাদের ।
লেখক: ইউনিভার্সিটি অব সিডনির ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস ও ইউএস স্টাডিজ সেন্টারের সিনিয়র লেকচারার [সূত্র: ইত্তেফাক, ১১ জুলাই ২০২৩
মাসিক সংক্ষিপ্ত সম্পাদকীয়
International Affairs
৪৩ তম বিসিএস ভাইবা প্রস্তুতি।
৪৪ তম বিসিএস ভাইবা প্রস্তুতি।
৪৫ তম বিসিএস রিটেন প্রস্তুতি।
nato expanding in the, nato expanding in the, nato expanding in the, nato expanding in the, nato expanding in the