বিজ্ঞানের দর্পণে সমাজ - অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান সমাধান ১ম অধ্যায় ২০২৪ - Class Eight History & Social Science Chapter 1 Solution PDF 2024
বিজ্ঞানের দর্পণে সমাজ
এই শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা নিজ এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানগুলো নির্ণয় করব। প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানগুলোর সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করব। এই উপাদানগুলোর পরিবর্তন কীভাবে ভৌগোলিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি করে তা খুঁজে বের করব।
চলো তাহলে আমরা কিছু ছবি দেখে নিই। ছবিগুলো আমাদের পরিচিত লাগছে? এগুলোর কোনটি সামাজিক এবং কোনটি প্রাকৃতিক উপাদান তা আমরা খুঁজে বের করি।
এখন আমরা নিজ এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের একটি তালিকা তৈরি করি।
২ নং পৃষ্ঠার ছকের/খালিঘরের উত্তর
আমার এলাকার প্রাকৃতিক উপাদান
- প্রাণী
- উদ্ভিদ।
- খাল, নদী
- মাটি
- বাতাস
- ভূমিরূপ (পর্বত, উপত্যাকা, সমভূমি)
আমার এলাকার সামাজিক উপাদান
- ঘরবাড়ি
- হাসাপাতাল
- রেস্টুরেন্ট
- হোটেল
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
- পার্ক
- শিল্পকারখানা
আচ্ছা, আমরা কী কখনো ভেবেছি, এই উপাদানের মধ্যে কোনগুলোর সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে? আমরা হয়তো কখনো এলাকার বয়স্ক বা পরিবারের অভিভাবকদের কাছে শুনেছি আমাদের এলাকার কিছু কিছু প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন হয়েছে। আবার আমরা হয়তো অনুমান করেও বলতে পারি। কিন্তু অনুমান বা শোনা কথা থেকে আমরা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তাই চলো আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
অনুসন্ধানের এই কাজটি করার জন্য আমরা এলাকার মানুষের কাছে প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন সম্পর্কে মতামত গ্রহণ করব। আমরা এ কাজটি করার জন্য সপ্তম শ্রেণির অনুসন্ধানী ধাপগুলো অনুসরণ করব। এবার আমরা পরিবর্তন সম্পর্কে উত্তরদাতার কাছ থেকে হ্যাঁ বা না প্রশ্নের মাধ্যমে উত্তর নিবো। তাই তথ্যগুলো আমরা একটা নতুন পদ্ধতিতে সংগ্রহ ও উপস্থাপন করব। মনে রাখব উত্তরদাতা যেহেতু তথ্য দিচ্ছেন তাই তাঁদেরকে আমরা তথ্যদাতাও বলতে পারি। চলো আমরা অনুসন্ধানের ধাপগুলো বুঝে নিই।
আমাদের এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন হয়েছে কীনা, সে বিষয়ে তথ্য নেওয়ার জন্য আমাদের কী কী প্রাকৃতিক উপাদান ও সামাজিক উপাদান পরিবর্তন হতে পারে, সেগুলো শনাক্ত করতে হবে। প্রাকৃতিক উপাদান হিসাবে আমরা নিতে পারি গাছপালা, নদ-নদী, পাহাড় ইত্যাদি। সামাজিক উপাদান হিসাবে নিতে পারি পোশাক, ভাষা, বাড়িঘর ইত্যাদি। মতামত নেওয়ার জন্য একটি নমুনা প্রশ্নমালা দেওয়া হলো। আমরা এরকমভাবে যে যে উপাদানের পরিবর্তন সম্পর্কে এলাকাবাসীর মতামত নিতে চাই, সেভাবে প্রশ্ন তৈরি করতে পারি।
৬ নং পৃষ্ঠার ছকের/খালিঘরের উত্তর
আমাদের পাওয়া তথ্যকে আমরা সহজে প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন সংখ্যা বা অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করতে পারি। একে আমরা কোডিং বলতে পারি। যেমন: গাছপালাকে ১, পশু-পাখি ২, এভাবে প্রতিটি উপাদানকে আমরা কোড করতে পারি। নিচে নমুনা কোডিং দেওয়া হলো। ৩০ জন তথ্যদাতা থেকে প্রাপ্ত তথ্যকে আমরা নিচের ছকের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি।
আবার, এই তথ্যকে আমরা স্তন্তচিত্র বা Bar Chart আকারেও উপস্থাপন করতে পারি। কীভাবে স্তম্ভচিত্রটি আঁকব তা একটু দেখে নিই।
হাইপোথিসিস: এলাকার সামাজিক ও প্রাকৃতিক উভয় উপদানের পরিবর্তন হয়েছে।
২০ বছরে এলাকার পরিবর্তন যাচাইয়ের মতামতের চিত্র
- দলগত কাজ ১:
আমরা ৫-৬ জনের দল গঠন করব। প্রতিটি দল পাঠ্যপুস্তকে দেওয়া অনুসন্ধানের ধাপ অনুসরণ করে নিজের এলাকার কোন কোন প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন হয়েছে তার ছক তৈরি করব। এরপর এলাকার মানুষের কাছ থেকে এই পরিবর্তন সম্পর্কে মতামত সংগ্রহ করব। এরপর প্রাপ্ত তথ্যকে দলগতভাবে বিশ্লেষণ করে গ্রাফ পেপারে উপস্থাপন করব। এরপর প্রতিটি দল একটি প্রতিবেদন লিখে জমা দেব।
দলগত কাজ ১ এর উত্তর (পৃষ্ঠা নং ৯)
প্রতিফলন ডায়েরি: আমরা অষ্টম শ্রেণির জন্য একটি প্রতিফলন ডায়েরি তৈরি করব। যেখানে আমরা আমাদের অনুসন্ধানের কাজের সময় যা যা অভিজ্ঞতা হয়েছে তা লিখে রাখব। সেখানে আমরা দলগতভাবে কাজটি কীভাবে করেছি? কী কী করলে অনুসন্ধানী কাজটি আরও ভালো হতে পারত। দলের বন্ধুরা কে কোন কাজ করেছে? ইত্যাদি বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমরা প্রতিফলন ডায়েরিতে লিখব।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ: প্রাকৃতিক উপাদান হিসাবে আমি আমার এলাকার গাছপালা ও পশুপাখি বেছে নিয়েছি। বেশিরভাগ উত্তরদাতার অভিমত এলাকার গাছপালার সংখ্যা পরিবর্তন হয়েছে। মাত্র ৫ জনের অভিমত গাছপালার সংখ্যা পরিবর্তন হয়নি। তাছাড়া বেশিরভাগ উত্তরদাতার অভিমত পশুপাখির সংখ্যারও পরিবর্তন হয়েছে। অপরদিকে, সামাজিক উপাদান হিসেবে রাস্তা-ঘাট, বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বেছে নিয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উত্তরদাতার অভিমত রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবর্তন হয়নি কিন্তু বাড়িঘরের পরিবর্তন হয়েছে।
ফলাফল ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত: এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানগুলো গত ২০ বছরে পরিবর্তিত হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে গিয়ে দেখা গেল বেশি সংখ্যক ব্যক্তি মনে করেন, এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন হয়েছে। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ফলাফল হাইপোথিসিস বা অনুমানের সঙ্গে মিলে গেছে। সেই সঙ্গে, বেশি সংখ্যক উত্তরদাতা যেহেতু শিক্ষিত ও সচেতন তাই এটা বলা যেতে পারে যে তারা পরিবর্তনগুলো সহজে শনাক্ত করতে পেরেছেন।
প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন
অনুসন্ধানের বিষয়: বিগত ২০ বছরে এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন।
অনুসন্ধান পরিচালনার স্থান: বাহারছড়া ইউনিয়ন
তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তির সংখ্যা: ৩০ জন।
শিমরাইল গ্রামে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের পরিবর্তন
বরিশাল জেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের শিমরাইল গ্রামে গত ২০ বছরে প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। এই এলাকার অবস্থা খুবই নিম্নমানের এমন অভিযোগ প্রদান করেছে তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তিরা।
এই এলাকাই বিগত ২০ বছরে গাছপালার সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। তাদের মতে আনুমানিক ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এভাবে গাছপালা নির্বিচারে ধ্বংস করার কারণে পশুপাখির বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে পশুপাখির সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। এখনও এখানকার মানুষ পরিবেশ সম্পর্কে সচতেন না। এর অন্যতম কারণ এই এলাকার মানুষের শিক্ষার ঘাটতি রয়েছে।
বিগত ২০ বছরে এই গ্রামে মাত্র একটি স্কুল স্থাপিত হয়েছে। স্কুল হলেও সচেতন ব্যক্তিদের প্রশ্ন আছে সেই স্কুলের শিক্ষার মান নিয়ে। পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাবে এলাকার মানুষ সহজ সরল এবং তাদের মনে কুসংস্কারে ভরে আছে। অনুন্নতার কথা বলতে গেলে সবচেয়ে বাজে অবস্থা এই এলাকার রাস্তাঘাট। যানবাহন চলাচলের জন্য এই এলাকার রাস্তাঘাট একেবারেই ব্যবহারে অনুপযোগী।
কিন্তু তাও কিছু মানুষের মতে রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে বলতে শুনা যায়। এছাড়াও সচেতন মানুষের দাবি এলাকায় তেমন উন্নয়ন না হলেও জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে; ফলে ঘরবাড়ির সংখ্যা অনেকটা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা গাছপালা ধ্বংসের অন্যতম কারণ।
প্রতিফলন ডায়েরি
আমাদের দলের নাম 'শাপলা'। আমাদের দলের অনুসন্ধানের জন্য নির্ধারিত বিষয়টি ছিল আমাদের এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় উপাদানের পরিবর্তন। আমাদের দলের সদস্য সংখ্যা ছিল ৫ জন।
প্রথমেই আমরা অনুসন্ধান প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দলগতভাবে একটি প্রশ্নমালা তৈরি করেছি। প্রশ্নমালাতে আমরা আমাদের এলাকার সামাজিক এবং প্রাকৃতিক উপাদানের পরিবর্তন সম্পর্কিত প্রশ্ন রেখেছি। তথ্যদাতা আমাদেরকে শুধু হ্যাঁ বা না এর মাধ্যমে মতামত দিবেন। মতামত সংগ্রহের আগেই আমরা তথ্য দাতার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি।
এরপর আমরা প্রশ্নমালাটির মাধ্যমে ২০ থেকে ৩০ জন তথ্যদাতার কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করেছি। তারাও আমাদেরকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে সাহায্য করেছেন।
তথ্যগুলো সংগ্রহের পর আমরা প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেছি এবং তা একটি গ্রাফ পেপারে উপস্থাপন করেছি। উক্ত গ্রাফ পেপারটি আমরা আমাদের শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালে লাগিয়ে দিয়েছি। এরপর আমরা আমাদের প্রাপ্ত তথ্য এবং বিশ্লেষিত তথ্যের সমন্বয়ে একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করেছি।
সবশেষে আমরা আমাদের যৌক্তিক সিন্ধান্ত উপস্থাপন করেছি।
পুরো অনুসন্ধানি কাজটি পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা বেশিকিছু দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। বিশেষ করে আমাদের এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের পরিবর্তনের কারণ ভালোভাবে জানতাম না কিন্তু এখন ভালোভাবে জানতে পেরেছি।
- সতীর্থ মূল্যায়ন
- দলগত কাজ ১: